জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে দেশে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট চলছে। শুক্রবার সকাল থেকে চলা এ ধর্মঘটে কার্যত পুরো দেশ থমকে রয়েছে। যার প্রভাব হাসপাতালেও পড়েছে। ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীদের সীমাহীন দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।

মো. সুমন মিয়া, ভোর পাঁচটায় নরসিংদী থেকে রাজধানীর নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ধর্মঘটের কারণে তিন ঘণ্টায় হাসপাতালে পৌঁছাতে তার সময় লেগে যায় ছয় ঘণ্টা। ভাড়াও গুণতে হয় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিনগুণ।

ধর্মঘট প্রসঙ্গে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ধর্মঘটের কারণে আমাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সরকারের উচিত বিষয়টাকে কঠোরভাবে দেখা এবং ধর্মঘটের বিষয়টিকে দ্রুত সমাধান করা।

তিনি বলেন, দফায় দফায় তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে, এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, এর আগে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা যারা সাধারণ মানুষ তাদের জন্য বিষয়টা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আমাদের আয়-রোজগার কম, এতো দামের তেল আমরা কীভাবে কিনবো? এভাবে কিছুদিন পরপর দাম বাড়ালে তো সমস্যা।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা হোসনে আরা নামে এক রোগী ঢাকা পোস্টকে বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আমাদের চরম ভোগান্তি হয়েছে। ধর্মঘট হোক, যাই হোক রোগীদের তো অবশ্যই হাসপাতালে আসতে হবে। কিন্তু রাস্তায় পরিবহন না থাকলে কীভাবে আসবে? আমি সকালে রাস্তায় বের হয়ে দেখি কোনো বাস নেই, বাধ্য হয়ে সিএনজি দিয়ে আসতে হয়েছে। সিএনজি চালকরাও সুযোগ বুঝে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। হঠাৎ করে অঘোষিতভাবে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ হয় আমাদের মতো রোগীদের।

ধর্মঘটে দুর্ভোগ শুধু রোগীদেরই নয়, হাসপাতাল স্টাফ থেকে শুরু করে চিকিৎসকদেরও পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ, হেড-নেক ও কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. মো. জাকারিয়া সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, গণপরিবহন বিষয়টির মানেই হলো জনগণের জন্য পরিবহন। যখনই গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, তখনই জনগণের দুর্ভোগ হবে।

তিনি বলেন, শনিবারে স্বাভাবিকভাবে আমার গাড়ি চালকের ছুটি থাকে, আমাকে গণপরিবহনেই হাসপাতালে আসতে হয়। কিন্তু আজ তো গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আমাকেসহ আমার পুরো পরিবারকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সিএনজিগুলোও এ সুযোগে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। এভাবে কী সাধারণ মানুষের জন্য চলাফেরা সম্ভব?

উল্লেখ্য, ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে গত শুক্রবার থেকে অঘোষিত পরিবহন ’ধর্মঘট’ চলছে। বৃহস্পতিবার পরিবহন খাতের মালিক-শ্রমিকদের একাধিক সংগঠন যাত্রী-পণ্যবাহী যান বন্ধ রাখার পক্ষে অবস্থান নেয়।

বুধবার ডিজেলের নতুন দাম ঘোষণার পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার মালিকরা সাফ জানিয়ে দেন, অতিরিক্ত দামে ডিজেল কিনে পরিবহন চালানো সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে তারা পরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। মালিকদের সঙ্গে একমত হন শ্রমিক নেতারা।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সরেজমিনে দেখা যায়, পরিবহন ধর্মঘটে হাজারো ভোগান্তি মাথায় চেপে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করেন যাত্রীরা। সড়কে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য ছোট যানের ভাড়া বেড়ে যায় কয়েকগুণ। যানবাহন না পেয়ে অনেকে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন।

টিআই/এসএম