কুর্মিটোলা হাসপাতালের সিনিয়র নার্স রুনু বেরুনিকা কস্তা - ছবি : ঢাকা পোস্ট

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে টিকা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে বুধবার (২৭ জানুয়ারি)। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন। এদিন দেশের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে করোনার টিকা নেবেন সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরুনিকা কস্তা। তিনি কুর্মিটোলা হাসপাতালের ডায়ালাইসিস ইউনিটের ইনচার্জ।

মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে কুর্মিটোলা হাসপাতালের বিশ্বস্ত একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, তিন জন নার্স ও তিন জন চিকিৎসককে প্রাথমিকভাবে টিকা নেওয়ার জন্য বাছাই করা হয়েছে। তারা দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তাদেরকে টিকা নেওয়ার জন্য বাছাই করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুর্মিটোলা হাসপাতালের এক নার্স জানান, বুধবার প্রথমে ৩ জন নার্সকে টিকা দেওয়া হবে। একইসঙ্গে এদিন আরও ৩ জন চিকিৎসককেও টিকা দেওয়া হবে। প্রথমে টিকা নেবেন ডায়ালাইসিস ইউনিটের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরুনিকা কস্তা। তার পরে টিকা নেবেন ফিমেল মেডিসিন ইউনিটের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স মুন্নি খাতুন ও একই ইউনিটে নার্স রিনা সরকার।

তিনি আরও জানান, চিকিৎসকদের মধ্যে টিকা নেওয়ার তালিকায় প্রথমে রয়েছেন কুর্মিটোলা হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. লুৎফর কবির মবিন ও ডা. শাহরিয়ার আলম।

কু‌র্মিটোলা জেনা‌রেল হাসপাতালের প‌রিচালক ব্রিগেডিয়ার জা‌মিল আহ‌মেদ - ছবি : ঢাকা পোস্ট

এদিকে টিকা প্রয়োগের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কু‌র্মিটোলা জেনা‌রেল হাসপাতালের প‌রিচালক ব্রিগেডিয়ার জা‌মিল আহ‌মেদ। আজ মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের জানান, ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

জানা গেছে, আজ (২৬ জানুয়ারি) বিকেলে কুর্মিটোলা হাসপাতাল পরিদর্শনে আসছেন স্বাস্থ্যসচিব আব্দুল মান্নান। 

এদিকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানিয়েছে, বেক্সিমকোর আনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫০ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন ল্যাব টেস্টে উত্তীর্ণ হয়েছে। এ ভ্যাকসিন মানবদেহে ব্যবহারের উপযুক্ত।

সারাদেশে ৮ ফেব্রুয়ারি টিকা দেওয়া শুরু
২৭ জানুয়ারি ঢাকায় টিকা প্রয়োগ শুরু হলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসহ নানা বিষয় পর্যবেক্ষণ করে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে সারাদেশে একযোগে টিকাদান। সংক্রমণের হার ও জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় সারাদেশের কোন জেলায় কত সংখ্যক ভ্যাকসিন যাবে তা নির্দিষ্ট করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তারা জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে সারাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেছেন, ৫০ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ দেওয়া হবে।

জানা গেছে, দেশের ৬৪ জেলাতেই প্রথম ধাপে পর্যায়ক্রমে টিকা দেওয়া হবে। তবে ঢাকা জেলার জন্য রাখা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ জেলায় বরাদ্দ রয়েছে ১২ লাখ ৫৪ হাজার ২০০ ডোজ। সবচেয়ে কম বরাদ্দ বান্দরবন জেলায়। জেলাটিতে ৪০ হাজার ৪৩৯ ডোজ টিকা দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যানে দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে টিকা দেওয়া হবে ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ৫৪৫ জনকে। চট্টগ্রাম বিভাগে দেওয়া হবে ২৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৩ জনকে, রাজশাহী বিভাগে ১৯ লাখ ২৪ হাজার ৯২২ জনকে, রংপুর বিভাগে ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫৯ জনকে, খুলনা বিভাগে দেওয়া হবে ১৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪৬ জনকে, সিলেট বিভাগে দেওয়া হবে ১০ লাখ ৩২ হাজার জনকে এবং বরিশাল বিভাগে আট লাখ ৬৬ হাজার ৯৯৪ জনকে টিকা দেওয়া হবে। তিন রাউন্ডে এ জনগোষ্ঠী টিকা পাবেন।

মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি - ফাইল ছবি

কোন জেলায় কতজন টিকা পাচ্ছেন
জেলা পর্যায়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকায় ১২ লাখ ৫৪ হাজার ২০০ জন, ফরিদপুরে এক লাখ ৯৯ হাজার ২০৭ জন, গাজীপুরে তিন লাখ ৫৪ হাজার ৪৬৭ জন, গোপালগঞ্জে এক লাখ ২২ হাজার ৯০ জন, জামালপুরে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৭৪৮ জন, কিশোরগঞ্জে তিন লাখ তিন হাজার ২৩২ জন, মাদারীপুরে এক লাখ ২১ হাজার ৪১৬ জন, মানিকগঞ্জে এক লাখ ৪৫ হাজার ৪৬ জন, মুন্সীগঞ্জে এক লাখ ৫০ হাজার ৫৪৪ জন, নারায়ণগঞ্জে তিন লাখ সাত হাজার ১৩ জন, নরসিংদীতে দুই লাখ ৩১ হাজার ৬৯৫ জন, নেত্রকোনায় দুই লাখ ৩২ হাজার ১৮৪ জন, রাজবাড়ীতে এক লাখ নয় হাজার ৩১৯ জন, শরীয়তপুরে এক লাখ ২০ হাজার ৩৬২ জন, টাঙ্গাইলে তিন লাখ ৭৫ হাজার ৪১৬ মানুষ টিকা পাবেন।

বান্দরবনে টিকা পাবেন ৪০ হাজার ৪৩৯ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৫ জন, চাঁদপুরে দুই লাখ ৫১ হাজার ৫৯২ জন, চট্টগ্রামে সাত লাখ ৯৩ হাজার ১২৯ জন, কুমিল্লায় পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ছয়জন, কক্সবাজারে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৪৬৮ জন, খাগড়াছড়িতে ৬৩ হাজার ৯৩০ জন, লক্ষ্মীপুরে এক লাখ ৮০ হাজার ৬৯ জন, নোয়াখালীতে তিন লাখ ২৩ হাজার ৬৬০ জন, রাঙ্গামাটিতে ৬২ হাজার ৬২ জন।

ভোলায় টিকা পাবেন এক লাখ ৮৫ হাজার ২৭ জন, ঝালকাঠিতে ৭১ হাজার ৯০ জন, পটুয়াখালীতে এক লাখ ৫৯ হাজার জন, পিরোজপুরে এক লাখ ১৫ হাজার ৯২৯ জন, বরগুনায় ৯২ হাজার ৯৭০ জন, বরিশালে দুই লাখ ৪২ হাজার ৪২ জন।

এদিকে বাগেরহাটে এক লাখ ৫৩ হাজার ৭১৩ জন, চুয়াডাঙ্গায় এক লাখ ১৭ হাজার ৫৭০ জন, যশোরে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৮৮৬ জন, ঝিনাইদহে এক লাখ ৮৪ হাজার ৪৫৫ জন, খুলনায় দুই লাখ ৪১ হাজার ৪৪০ জন, কুষ্টিয়ায় দুই লাখ দুই হাজার ৭৩৪ জন, মাগুরায় ৯৫ হাজার ৬৪০ জন, মেহেরপুরে ৬৮ হাজার ২৪৯ জন, নড়াইলে ৭৫ হাজার ১৫১ জন, সাতক্ষীরায় টিকা পাবেন দুই লাখ ছয় হাজার ৮০৮ জন।

বগুড়ায় টিকা পাবেন তিন লাখ ৫৪ হাজার ১৫০ জন, জয়পুরহাটে ৯৫ হাজার ১৫৫ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক লাখ ৭১ হাজার ৫৬৫ জন, নওগাঁয় দুই লাখ ৭০ হাজার ৭৬৮ জন, নাটোরে এক লাখ ৭৭ হাজার ৭২৫ জন, পাবনায় দুই লাখ ৬২ হাজার ৭৫১ জন, রাজশাহীতে দুই লাখ ৭০ হাজার ২৫১ জন, সিরাজগঞ্জে তিন লাখ ২২ হাজার ৫৫৭ জন।

রংপুরে তিন লাখ ২২ জন, দিনাজপুরে তিন লাখ ১১ হাজার ৩৭৭ জন, কুড়িগ্রামে দুই লাখ ১৫ হাজার ৪৮৪ জন, লালমনিরহাটে এক লাখ ৩০ হাজার ৮০৪ জন, গাইবান্ধায় দুই লাখ ৪৭ হাজার ৭৬৪ জন, নীলফামারীতে এক লাখ ৯১ হাজার আটজন, পঞ্চগড়ে এক লাখ দুই হাজার ৮৪৮ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে এক লাখ ৪৪ হাজার ৭৫২ জন টিকা পাচ্ছেন।

এছাড়া হবিগঞ্জে দুই লাখ ১৭ হাজার ৫৩৮ জন, মৌলভীবাজারে এক লাখ ৯৯ হাজার ৮৪২ জন, সুনামগঞ্জে দুই লাখ ৫৭ হাজার দুজন, সিলেটে তিন লাখ ৫৭ হাজার ৬১৯ জন করোনা টিকা পাবেন।

ভারতের উপহারের ২০ লাখ করোনা টিকা গ্রহণ করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী | ঢাকা পোস্ট, ২১ জানুয়ারি

যেসব স্থানে দেওয়া হবে টিকা
করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগের জন্য সরকার কিছু জায়গা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা/সদর হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ-বিজিবি হাসপাতাল ও সিএমএইচ, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে এ টিকা দেওয়া হবে। এসব জায়গায় প্রথম ধাপের ৫০ লাখ ভ্যাকসিন দিতে ৭ হাজার ৩৪৪টি দল গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি দলে দুজন সরাসরি ভ্যাকসিন দেবেন এবং বাকি চারজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অন্যান্য কাজ করবেন।

টিআই/এইচকে