রাজশাহী শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত এক অঞ্চল হুজুরিপাড়া ইউনিয়ন। পবা উপজেলাধীন এই ইউনিয়নের হুজুরিপাড়ার কলেজপড়ুয়া এক মেয়ের নাম মোসাম্মাদ কুসুম খাতুন। জন্ম থেকেই পায়ে সমস্যায় চলাচলে কষ্ট ও বিড়ম্বনা পোহাতে হয় তাকে। বর্তমানে তিনি পড়ছেন নওহাটার পলিটেকনিক কলেজে। কলেজটির নাম শাহমকদুম পেয়ারলেস এমবি কলেজ।

সরকারের কাছ থেকে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভাতায় চলছে তার পড়ালেখার খরচ। এক সময় এই ভাতা তুলতে তাকে যেতে হতো উপজেলা সদরে, দীর্ঘ লাইন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা- এটি ছিল কুসুম খাতুনের জন্য খুবই ভোগান্তির কাজ। কিন্তু সেই দিন বদলে গেছে। সরকারি ভাতা এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে পেয়ে যাওয়ায় ভোগান্তি লাঘব হয়েছে তার। ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ-এর মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে কুসুম খাতুনের মোবাইলে চলে আসে ভাতার টাকা। সঙ্গে থাকে ওই টাকা ক্যাশ আউটের খরচও। 

সম্প্রতি রাজশাহী শহর থেকে দূরে প্রত্যন্ত হুজুরিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে কথা হয় কুসুম খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার ভাতা পাওয়া এত সহজ করে দেওয়ার জন্য নগদ এবং সরকারের প্রতি আমার বিশেষ কৃতজ্ঞতা। এখন পায়ে সমস্যা নিয়ে ভাতার জন্য আর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় না, যেতে হয় না উপজেলা সদরেও। এখন আমার নগদ অ্যাকাউন্টেই ভাতার টাকা চলে আসে।

হুজুরিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে কথা হয় আনিসুর রহমান নামের এক প্রবীণের সঙ্গে। তিনিও বলেন, ভাতার টাকা পেতে আর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার দরকার হয় না। শুক্রবার-শনিবার বা ছুটির দিন বন্ধ থাকার ঝামেলাও নেই। টাকা এলেই সঙ্গে সঙ্গে হাতে পেয়ে যাচ্ছি।

কুসুম-আনিসুরের মতো সমাজের তিন কোটি পিছিয়ে পড়া মানুষকে গত এক বছরে সাড়ে আট কোটিবার সরকারের বিভিন্ন ভাতা ও অনুদান বিতরণ করেছে নগদ। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা জানান, দিন বদলের সময়ে দিন বদলে দেওয়া সেবা হয়ে এসেছে নগদ। 

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে ঢাকা থেকে সাংবাদিকদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় নানান ডিজিটাল প্রকল্প দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সফরের অংশ হিসেবেই রাজশাহীর প্রত্যন্ত গ্রাম হুজুরিপাড়ায় চোখে পড়ে ডিজিটাল সেবাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা সেবার। 

এ সময় হুজুরিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে সাংবাদিকদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন নগদের হেড অব কমিউনিকেশন জাহিদুল ইসলাম সজল। তিনি বলেন, নগদ চালু হওয়ার মাধ্যমেই আর্থিক লেনদেনসহ বিল প্রদান সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট খাতে ডিজিটালাইজেশন চালু হয়েছে। 

জানা গেছে, নগদ বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান, যারা গ্রাহক পরিচয় নিশ্চিত করতে ইলেক্ট্রনিক কেওয়াইসি চালু করে। ২০১৯ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘নগদ’-এর উদ্বোধন করার সময় দেশের আর কোথাও ই-কেওয়াইসির প্রচলন ছিল না। 

ই-কেওয়াইসি প্রচলনের ফলে এক দিকে যেমন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট খোলার জটিল প্রক্রিয়া সহজতর হয়, অন্যদিকে অ্যাকাউন্ট খোলা সংক্রান্ত খরচও কমে যায়। অধিকাংশ ব্যাংক, এমএফএস এবং অন্যান্য আর্থিক সেবা কোম্পানি ই-কেওয়াইসির মাধ্যমে গ্রাহক হিসাব খোলার পদ্ধতি চালু করে সাফল্য পাচ্ছে। অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে সহজ হয়েছে। ফলে মাত্র ৩২ মাসের মধ্যে ‘নগদ’-এর গ্রাহক সংখ্যা এখন সাড়ে ৫ কোটি ছাড়িয়েছে।

বিস্তৃতি এই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ওপর নির্ভর করেই করোনার সময় নগদ-এর মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতাসহ প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য আর্থিক অনুদান ও সহায়তা বিতরণ ডিজিটালাইজড করতে পেরেছে সরকার। ২০২০-২১ অর্থবছরে ‘নগদ’-এর মাধ্যমে সরকার তিন কোটি মানুষকে সাড়ে আট কোটিবার নানান ধরনের ভাতা, উপবৃত্তি ও অনুদান বিতরণ করেছে। যার মাধ্যমে স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হয়েছে।

নগদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ের দেড় কোটি শিক্ষার্থীর মায়ের মোবাইলে উপবৃত্তি বিতরণ করা হচ্ছে। তাছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ৫৮ লাখ দুস্থ ও হতদরিদ্র স্বচ্ছতার সঙ্গে নগদ-এর মাধ্যমে ভাতা পেয়েছেন। এই দুটি কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল সেবার আওতায় নিয়ে আসে সরকার। নগদ এখন দৈনিক গড়ে সাতশ কোটি টাকার লেনদেন করছে। 

এএসএস/এইচকে