নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক কিশোরীকে তিন মাস আটকে রেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম এবং সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জে এক কিশোরীকে তিন মাস আটকে রেখে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণের ঘটনা ঘটেছে। ওই ছাত্রী স্কুলে যাওয়া-আসার পথে উপজেলার নরোত্তমপুর গ্রামের আবদুল্লা আল মামুন (২৮), কামাল (৪৬), নাসের (২৫) এবং হাজীপুর পাঁচবাড়ির ফরহাদ (২৭) তাকে উত্ত্যক্ত করত। বিষয়টি স্কুলছাত্রী তার খালাকে জানালে অভিযুক্তরা ক্ষুব্ধ হয়। 

গত ২৬ আগস্ট সকালে ওই ছাত্রী স্কুলে যাওয়ার সময় মামুনের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা কিশোরীকে অপহরণ করে পার্শ্ববর্তী সেনবাগ থানার ছাতারপাইয়া গ্রামের একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে এক মাস আটকে রেখে মামুন ও কামাল তাকে ধর্ষণ করে। এরপর গত ২৮ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থেকে টাঙ্গাইলের শহিদপুর গ্রামের এক বাড়িতে নিয়ে ২ মাস কিশোরীকে আটকে রাখে। সেখানে কামাল, নাসের ও ফরহাদ পালাক্রমে ধর্ষণ করে এবং স্থানীয় অজ্ঞাত যুবকদের এনেও তাকে ধর্ষণ করায়।

ধর্ষণ ও নির্যাতনে ওই ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে গেলে ওষুধ খাইয়ে একটু সুস্থ করে তোলা হতো এবং আবারও ধর্ষণ করা হতো। গত ৯ নভেম্বর মেয়েটি কৌশলে পালিয়ে বাড়িতে আসে এবং শারীরিকভাবে কিছুটা সুস্থ হলে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। অভিযুক্তরা মামলা তুলে নিতে চাপ দেয় এবং নানাবিধ হুমকিসহ হত্যার হুমকি দেয় তাকে। 

বিবৃতিতে বলা হয়- মহিলা পরিষদ লক্ষ্য করছে, নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর, চরজব্বার ও বেগমগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত কিশোরী, তরুণী ও নারীরা যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, আত্মহত্যা ও হত্যাসহ নৃশংস নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এছাড়া সারা দেশে ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা দেশের সার্বিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। অব্যাহত নারী ও কন্যা নির্যাতনের ঘটনায় বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলতে থাকায় দুর্বৃত্তদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে দেশ এবং তারা (অপরাধীরা) ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী নারীর প্রতি বর্বর ও নৃশংস সহিংসতা এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য আশু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার ও প্রশাসনের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। 

একই সঙ্গে নির্যাতনের শিকার ওই নির্যাতিতা ছাত্রীর সুচিকিৎসাসহ তার ও তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবি জানিয়েছে মহিলা পরিষদ।

জেইউ/এইচকে/জেএস