রেল পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. শাহ আলম বলেছেন, ইন্টারনেটের অপব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সহিংস উগ্র মতবাদ ছড়ানো হচ্ছে। সচেতনতা বৃদ্ধি, আইনের প্রয়োগ বাড়ানো এবং সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধ সম্ভব হবে। এ বিষয়ে অংশীজনরা একসঙ্গে বসে নিয়মিত মতবিনিময় করলে করণীয় নির্ধারণ করা সহজ হবে।

শনিবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

‘সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে সাইবার সচেতনতার গুরুত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিসিএ ফাউন্ডেশন)।

এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের উপদেষ্টা আরিফ সোহেল। সঞ্চালক ছিলেন সংগঠনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ। এতে পৃষ্ঠপোষকতা করে বেসরকারি সংস্থা রূপান্তর।

সভায় কি-নোট স্পিকার ছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মো. সাইমুম রেজা তালুকদার। প্যানেল আলোচক ছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন খন্দকার ফারজানা রহমান, ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী ও বেসরকারি সংস্থা আপন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এম. আফতাবুজ্জামান। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন রূপান্তরের লিয়াজু ম্যানেজার মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুছ।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসা শিক্ষার্থী ২৯ জন ‘ট্রুথ অ্যাম্বাসেডর’কে সচেতনতামূলক কর্মসূচির জন্য পুরস্কৃত করা হয়।

ডিআইজি মো. শাহ আলম বলেন, ইন্টারনেট পুরোপুরি উন্মুক্ত জগৎ। এখানে ব্যবহারকারীর প্রতিটা কাজ নজরদারির আওতায় থাকে। অপরাধ করে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কাজেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে এমন কোনো আচরণ করা যাবে না, যা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে সাইমুম রেজা তালুকদার বলেন, সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা তৈরিতে ধর্মীয় নেতাদের এগিয়ে আসতে হবে। স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারে ক্ষতিকর দিকগুলোর বিষয়ে যুব সমাজকে সচেতন করতে হবে। সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে পারিবারিকভাবে মূল্যবোধ তৈরি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সমাজের প্রত্যেক স্তরে যতো বেশি আলোচনা করা যাবে ততো সহিংস উগ্রবাদের বিস্তার ঠেকানো সহজ হবে।

খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, গত ২০ বছরে সংগঠিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সহিংস উগ্রবাদ অন্যতম সমস্যা। শুধু পুলিশিংয়ের মাধ্যমে সহিংস উগ্রবাদ ঠেকানো সম্ভব নয়। এজন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি সামাজিক সংগঠনগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

মুরসালিন নোমানী বলেন, ইন্টারনেট এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের মৌলিক অংশ হয়ে গেছে। কনটেন্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। অভিভাবকরা বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে ইন্টারনেটে সন্তানের নিয়মিত কার্যক্রম এবং বন্ধু নির্বাচনের বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত।

ইমদাদুল হক বলেন, ইন্টারনেটে সহিংস উগ্র আচরণ ঠেকাতে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে। সাংবাদিকরা এ নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারে সহযোগিতা করলে এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। অভিভাবকদের প্রতি সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বলেন, ইন্টারনেটে গুজব বা মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে সমাজে সহিংসতা ছড়ানো হচ্ছে। কোনো কিছু শুনেই তা প্রচার করাই মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই ইন্টারনেটে কিছু দেখা মাত্রই তা অন্যদের মধ্যে ছড়ানোর বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ভিন্ন মতদর্শের প্রতি আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখানো যাবে না। সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে ধর্মীয় নেতাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

এম. আফতাবুজ্জামান বলেন, তরুণদের সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। ফলে তারা ইন্টারনেটকেই দীর্ঘসময় ব্যবহার করছে এবং সচেতনতার অভাবে তারা উগ্রবাদে জড়ানোর ঝুঁকিতে আছে। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল দিতে পারে।

জেইউ/জেডএস