নটর ডেম কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল নাঈম হাসান। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করে নিজেকে যুক্ত করতে চেয়েছিলেন আইন পেশায়। কিন্তু তা আর হলো না। বুধবার (২৪ নভেম্বর) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্জ্যবাহী গাড়ি চাপায় মারা যায় নাঈম হাসান।

শুধু নাঈম হাসানই নয় নটর ডেমের এ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর আগেও এ ধরনের গাড়িতে একাধিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন। চলতি বছরের মার্চে ডিএসসিসির একই ধরনের গাড়িচাপায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার টেলিফোন অপারেটর মোহাম্মদ খালিদ প্রাণ হারান। পরের মাসে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির ধাক্কায় মো. মোস্তফা নামে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় জনতা ওই সময় ময়লার গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। একের পর এক দুর্ঘটনা জানান দিচ্ছে ময়লার গাড়িগুলোর বেপরোয়া আচরণের। তাছাড়া চালকের অদক্ষতাকেও এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করছেন অনেকে। তাদের এ খামখেয়ালিপনায় ঝরছে একের-পর এক প্রাণ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিএসসিসির ময়লার গাড়ি বেপরোয়া গতিতে চালানোর অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। বারবার দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রতিকারে ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ডিএসসিসির মোট যানবাহন ৫১৩টি হলেও সংস্থাটির নিবন্ধিত চালক মাত্র ১৪৭ জন। এছাড়া ২০০টি গাড়ি চলে মাস্টাররোলে নিয়োগপ্রাপ্ত চালকদের দিয়ে। তাদের অধিকাংশই ক্লিনার। এসব চালকের নেই প্রশিক্ষণ বা লাইসেন্স। বাকি ১৬৬টি গাড়ি কীভাবে চলে সেটার সঠিক তথ্য দিতে পারেনি ডিএসসিসি। ডিএসসিসির বাকি গাড়িগুলো চলে অদক্ষ ও অনিবন্ধিত চালক দিয়ে। ফলে গাড়িগুলো দিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

চলতি বছরের মার্চে ডিএসসিসির একই ধরনের গাড়িচাপায় বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার টেলিফোন অপারেটর মোহাম্মদ খালিদ প্রাণ হারান। পরের মাসে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির ধাক্কায় মো. মোস্তফা নামে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়।

দক্ষিণ সিটির পরিবহন বিভাগ সূত্র বলছে, যে গাড়ির চাপায় নাঈম হাসান নিহত হয়েছেন সেটি ভারী যান। সংস্থাটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যবহারের জন্য এমন ৩১৭টি ভারী যান আছে। কিন্তু চালক আছেন মাত্র ৮৬ জন। চলমান নিয়ম অনুযায়ী পরিচ্ছন্নতা-কর্মীদের মধ্যে যাঁদের লাইসেন্স আছে, তারা গাড়িগুলো চালাচ্ছেন। ফলে এমন দুর্ঘটনা সংখ্যা বাড়ছে।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্য একটি সূত্র বলছে, নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানকে চাপা দেওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়িটি যে চালাচ্ছিলেন তিনি একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। নাঈমকে চাপা দেওয়ার পরপরই ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান তিনি। তবে তার সহযোগী রাসেল পালাতে পারেননি। রাসেল দৈনিক মজুরিতে সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।

 ডিএসসিসির মোট যানবাহন ৫১৩টি হলেও সংস্থাটির নিবন্ধিত চালক মাত্র ১৪৭ জন। এছাড়া ২০০টি গাড়ি চলে মাস্টাররোলে নিয়োগপ্রাপ্ত চালকদের দিয়ে। তাদের অধিকাংশই ক্লিনার। এসব চালকের নেই প্রশিক্ষণ বা লাইসেন্স। বাকি ১৬৬টি গাড়ি কীভাবে চলে সেটার সঠিক তথ্য দিতে পারেনি ডিএসসিসি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসানের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ঘটনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর সিতওয়াত নাঈমকে আহ্বায়ক এবং মহা-ব্যবস্থাপক (পরিবহন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আনিছুর রহমানকে সদস্য করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ৭ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

তিনি আরও বলেন, কমিটির কার্য পরিধির মধ্যে রয়েছে এ দুর্ঘটনা কীভাবে সংগঠিত হলো তা উত্থাপন ও দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানো যায়, সেজন্য সুপারিশ করা।

এদিকে বুধবার (২৪ নভেম্বর) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় নিহত নটর ডেম কলেজের ছাত্র নাঈম হাসানের পরিবারের সদস্যদের রাতে সান্ত্বনা দিতে যান ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সময় তিনি বলেন, সন্তানহারা পিতা-মাতাকে তো সান্ত্বনা দেওয়া যায় না। আমার নিজেরও দুই সন্তান। নিজেই উপলব্ধি করি, কী বেদনাদায়ক-মর্মান্তিক ঘটনা। এ কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

মেয়র তাপস বলেন, ঘাতক চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করছি। গাফিলতি, অন্যায় বরদাশত করা হবে না। আমরা এরইমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছি। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি। জড়িতদের চিহ্নিত করেছি। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা এবং প্রাতিষ্ঠানিক যে ব্যবস্থা আছে সেগুলোও আমরা নেব। সুষ্ঠু বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি যেন হয়, আমরা সেটিই কামনা করি।

এএসএস/এসকেডি