অবৈধভাবে দখল করা খালগুলো হাউজিং ব্যবসায়ীদের নিজ খরচে ফেরত দিতে হবে, এর জন্য সরকার কোনো টাকা খরচ করবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।

শনিবার (২৭ নভেম্বর) সকালে বসিলা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম ও বুড়িগঙ্গা নদী মোর্চা আয়োজিত বুড়িগঙ্গা নদী উৎসব-২০২১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেছে, যে নামেই হাউজিং ব্যবসা করেন না কেন, আপনারা মালিকরা কিন্তু একই। অবৈধ কাজের জন্য সিটি করপোরেশন কোনো নোটিশ দেবে না।

আতিকুল ইসলাম বলেন, এই নদীতে আগে জাল ফেললে মাছ পাওয়া যেত। আর এখন পাওয়া যায় শুধু বালি। কী জন্য এই বালি আসবে। নদী, খাল ও ড্রেনের কম্বিনেশন আছে। ড্রেনের পানি যাবে খালে, খালের পানি যাবে নদীতে, এটাই কিন্তু হওয়ার দরকার ছিল। পানি জমতে জায়গা লাগবে তো। কিন্তু বর্তমানে পানি জমার কোনো জায়গা নেই। কারণ সব জায়গাগুলোতে আমরা নিজেরাই ব্যবসার জন্য বড় বড় বুলডোজার ও ড্রেজারের মাধ্যমে আমরা ভরাট করেছি। 

তিনি বলেন, আপনারা যারা ডেভলপার আছেন, আমি তাদেরকে স্বাগত জানাই ব্যবসার জন্য। কিন্তু আপনারা যারা ড্রেজার লাগিয়ে বালি ভরাট করতে থাকবেন, বালি যতদূর পর্যন্ত গড়াবে ততটুটু পর্যন্ত আপনাদের জায়গা হয়ে যাবে, এটা হতে পারে না। আপনাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কোর্ট-কাচারি করতে পারে না। সুতরাং তারা বাধ্য হয়ে আপনাদের কাছে ওই জমি বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এটি খাল-নদী যাউ হোক না কেন, আপনারা কাউকে তোয়াক্কা করছেন না।

মেয়র বলেন, ইস্টার্ন হাউজিংসহ যারা ডেভেলপার আছেন তাদেরকে ম্যাসেজ দিচ্ছি, আপনারা একটু একটু করে শহর দখল করে ফেলেছেন, এগুলা চলবে না। যতগুলো হাউজিংয়ে আছে, আপনারা নিজেরা টাকা দিয়ে যে ড্রেনগুলো করেছেন এগুলো উদ্ধার করে দেবেন। সরকার কোনো টাকা দেবে না। মোহাম্মদিয়া হাউজিং থেকে শুরু করে সব হাউজিং সুন্দর করে ডিজাইন করে। সেখানে খেলার মাঠ, বাজার, শ্মশান ঘাট থেকে শুরু করে সব কিছু থাকে। যখন জমির দাম বেড়ে যায়, ওই খেলার মাঠ ও বাজার বিক্রি করে দেন।

সকল হাউজিংয়ের বিরুদ্ধে কোর্টে গিয়ে মামলা করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, যেসব হাউজিং খেলার মাঠ দেখিয়ে পরে সেগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোর্টে বিচার চাইব। যে ডিজাইনে আমাদের কাছে জমি বিক্রি করা হয়েছিল, সেই ডিজাইন আমাদেরকে ফেরত দিতে হবে। তোমরা ব্যবসার জন্য আমাদের সঙ্গে চিট করেছ। এর জন্য আমাদের সবাইকে প্রতিবাদ করতে হবে। আজকে যদি প্রতিবাদ না করি, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কিন্তু বলবে, কী করেছেন আপনারা আমাদের জন্য।

মেয়র বলেন, যত ডেভলপার কোম্পানি আছেন আপনারা যারা খালগুলোকে বালি ভরাট করে দখল করেছেন সেগুলো আপনাদের টাকা দিয়ে আগের অবস্থায় ফেরত দিন। আপনারা বলতে পারেন না, আমরা অন্য জায়গায় অন্য নামে হাউজিং করেছি। আপনারা অন্য নামে হাউজিং করতে পারেন কিন্তু আপনারা মালিকরা একই আছেন। আপনাদের ধরার অনেক উপায় আছে। আপনারা নিজেরা ঠিক হয়ে যান। আর কোনো প্রহসন করবেন না। একজন মেয়র হিসাবে কিন্তু ক্ষমতায় আসিনি, আমি দায়িত্বে এসেছি। তাই অন্যায়ের প্রতিবাদ করা আমার দায়িত্ব। যারা অবৈধ দখল করেছেন, তাদের জন্য কোনো বৈধ নোটিশ নেই।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সভাপতি সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের (এনআরসিসি) চেয়ারম্যান এ এস এম আলী কবীর, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, ইউএসএআইডি বাংলাদেশের প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট-সিভিল সোসাইটি অ্যাডভাইজার সুমনা বিনতে মাসুদ, কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের প্রোমোটিং অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রাইটস (পার) প্রকল্পের ডেপুটি চিফ অব পার্টি শাহিদ হোসেন, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার প্রমুখ।

এমএইচএন/ওএফ