নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা যতবার আন্দোলনে গিয়েছে, ততবারই আশ্বাসের বাণী শুনতে হয়েছে। কিছুদিন ভালো যায়। তারপর আবারও সড়কে রক্ত ঝরে; শিক্ষার্থী মারা যায়। ফেরে না সড়কে শৃঙ্খলা, অব্যবস্থাপনাও কাটে না গণপরিবহনে। তাই কোনো আশ্বাস নয় আর, কোনো বিশ্বাসও নয়।

সড়ক দুর্ঘটনায় নটর ডেম কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে এবং নিরাপদ সড়কের দাবি ও হাফ ভাড়া নিশ্চিতের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এসব কথা বলেন। তারা বলেন, এবার আমরা নিরাপদ সড়কের দাবির বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

রাজধানীর ধানমন্ডি-২৭ এলাকায় রোববার (২৮ নভেম্বর) সকাল ১১টা থেকে সড়ক অবরোধ করেন মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া ও ধানমন্ডি এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

দুপুর পৌনে ৩টার দিকে সড়ক ছাড়লেও একই দাবিতে আগামীকাল সোমবার (২৯ নভেম্বর) সড়কে নামবেন বলে জানান তারা।

আজ শুরু থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে সড়ক-শৃঙ্খলায় নেমে পড়েন। রাস্তার এক পাশ আটকে রেখে আরেক পাশে যান চলাচলের সুযোগ করে দেন তারা। এই সময় যানবাহন ধরে ধরে কাগজপত্র দেখতে চান শিক্ষার্থীরা। 

চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে পুলিশ সার্জেন্ট ডেকে মামলার তোড়জোড় করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এসময় বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ, সাংবাদিক এমনকি মোটরসাইকেল নিয়ে বের হওয়া শিক্ষার্থীকেও ছাড়েননি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। লাইসেন্স না থাকলেই মামলা করতে হচ্ছিল ট্রাফিক সার্জেন্টকে।

শিক্ষার্থীদের রাস্তায় অবস্থানের কারণে মিরপুর-নিউমার্কেটগামী সড়কে যান চলাচল সীমিত করা হয়। মানিক মিয়া এভিনিউ মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের গাড়ি ডাইভারশন করতে দেখা যায়।

দুপুরের পরও সড়কে থাকা বাস, প্রাইভেটকার, কাভার্ডভ্যান ও মোটরসাইকেলসহ সব যানবাহনের কাগজপত্র দেখতে চান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

ওই এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা জানান, আন্দোলন চলাকালে অন্তত অর্ধশত মামলা হয়েছে। চালকের আসনে হেলপার, চালকের লাইসেন্স না থাকা, ফিটনেস, রুট পারমিট, হেলমেট না থাকার কারণে এসব মামলা দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরাই তাদের শনাক্ত করে ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে নিয়ে যান।

বাদ যায়নি পুলিশ সদস্যরাও। দুজন পুলিশ সদস্যকে আটকে মামলা করতে বাধ্য করেছেন শিক্ষার্থীরা। একজনের ছিল না হেলমেট, আরেক পুলিশ সদস্যের ছিল না ড্রাইভিং লাইসেন্স। একই সময় বিভিন্ন সরকারি দফতরের গাড়ীর চালকদের কাগজপত্রও চেক করা হয়। সাংবাদিক লেখা স্টিকার দেখেও লাইসেন্স দেখতে চাওয়া হয়।

লালমাটিয়া মহিলা কলেজের এক ছাত্রী বলেন, আমরা নিরাপদ সড়ক চাই, শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাসের বাস্তবায়ন চাই, বাসে ছাত্রীদের হয়রানি বন্ধ চাই। শিক্ষার্থীদের ড্রেস দেখে বাসে উঠতে না দেওয়া, হাফ পাসের ভাড়া নিয়ে হয়রানি থেকে রেহাই চাই। আর কোনো ছাত্র-ছাত্রীর যেন অকাল মৃত্যু না হয় সেজন্য সড়কে গণপরিবহন চলাচলে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা চাই।

আরেক ছাত্রী বলেন, আমরাও ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে সড়কে থাকতে চাই না। কিন্তু যখন লাইসেন্স নেই এমন কারো হাতে গাড়ীর স্টিয়ারিং থাকে, সেই গাড়ী চাপায় ছাত্র মারা যায়, তখন কোনো আশ্বাসেই আমরা আশ্বস্ত হতে পারি না। তাই সড়কে আসা। এবার আশ্বাস নয়, নিরাপদ সড়কের দাবির বাস্তবায়ন দেখতে চাই আমরা। 

আন্দোলনে সকাল থেকে সক্রিয় মোহাম্মদপুর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সিফাত জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা আজকের মতো ফিরে যাচ্ছি। তবে কাল আবার আসব। আশা করছি খুব দ্রুতই গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ পাসের ঘোষণা, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতের বিষয়ে সরকারি ঘোষণা শুনব।

ধানমন্ডি-২৭ এলাকার ট্রাফিক সার্জেন্ট সামশুর রহমান জানান, বেলা আড়াইটার পর শিক্ষার্থীরা সড়ক ছাড়তে শুরু করে। পৌনে ৩টার মধ্যে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। 

জেইউ/আইএসএইচ/জেএস