পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে (কপ ২৬) প্রত্যাশা অনুযায়ী যথাযথ প্রাপ্তি না হলেও বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অনেক দাবি পূরণ হয়েছে।

বুধবার (১ ডিসেম্বর) পরিবেশ অধিদফতরের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ ২৬) : প্রত্যাশা, প্রাপ্তি এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, এবারের সম্মেলনে প্রথমবারের মতো গ্লোবাল গোল অন এডাপটেশন সংক্রান্ত বৈশ্বিক লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য ‘গ্লাসগো-শার্ম আল শেখ ওয়ার্ক প্রোগ্রাম অন দি গ্লোবাল গোল অন এডাপটেশন’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যা আমাদের ভবিষ্যৎ এডাপটেশন কার্যক্রমকে আরও বেগবান করবে।

তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার লক্ষ্যে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে সদস্য দেশগুলোকে উচ্চাভিলাষী ও শক্তিশালী পরিকল্পনা প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্যারিস চুক্তির রুল বুক সম্পন্ন হয়েছে এবং উক্ত চুক্তির আওতায় ‘আর্টিকেল ৬ (মার্কেট এন্ড নন মার্কেট মেকানিজম)’ এর মোডালিটিজ, প্রোসিডিউরস অ্যান্ড গাইডলাইন্স নেওয়া হয়েছে।

শাহাব উদ্দিন বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলো অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণ করার পাশাপাশি কপ-২৬ এর বিভিন্ন ডিসিশন টেক্সটে অভিযোজন ও প্রশমন অর্থায়নের মধ্যে ৫০ : ৫০ সমতা আনার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও উন্নত দেশগুলো জলবায়ু অর্থায়নে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের নিমিত্ত ২০২২-২০২৪ সময়ের জন্য একটি এডহক ওয়ার্ক প্রোগ্রাম প্রতিষ্ঠা করেছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে ধনী দেশগুলোকে জলবায়ু তহবিলে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ অন্তত দ্বিগুণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। 

পরিবেশমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কপ-২৬ এর ওয়ার্ল্ড লিডার্স সামিটে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের পক্ষে কান্ট্রি স্টেটমেন্ট দেন। উক্ত সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (CVF) বর্তমান চেয়ার হিসেবে সদস্য ৪৮টি সর্বাপেক্ষা বিপদাপন্ন রাষ্ট্রসমূহের পক্ষে অত্যন্ত জোরালো ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। সম্মেলনে বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক আলোচনায় বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নতদেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অত্যন্ত বিপন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর পক্ষে কার্যকর ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।

তিনি বলেন, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির আলোকে আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা এখনই ঠিক করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য সব ধরনের ঝুঁকি চিহ্নিতপূর্বক তা মোকাবিলায় আমাদেরকে কাজ শুরু করতে হবে। কেবলমাত্র বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নের উপর নির্ভর না করে আমাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়েই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যকর অভিযোজন এবং প্রশমনমূলক কার্যক্রম গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আশাকরি সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে আমরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সফল হবো।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী হাবিবুন নাহার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, কমিটির সদস্য তানভীর শাকিল জয় এমপি, পিকেএসএফ এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আইনুন নিশাত, সিভিএফ প্রেসিডেন্সির বিশেষ দূত আবুল কালাম আজাদ, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোঃ মিজানুল হক চৌধুরী এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ আশরাফ উদ্দিন প্রমুখ। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ জিয়াউল হক এবং মির্জা শওকত আলী।

এমএইচএন/আইএসএইচ