নদী অধিকার বলতে মূলত নদীর পাড়ে বসবাসকারী মানুষের অধিকার বুঝায়। তাই নদীরও রয়েছে তার নিজ ধারা বহমান রাখার অধিকার বলে জানিয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এনভায়রনমেন্ট রিসার্চ-এর প্রফেসর এমিরেটস ড. আইনুন নিশাত। ৬ষ্ঠ আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘নদীর অধিকার’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।

আইনুন নিশাত বলেন, নদীর স্বাভাবিক গতিধারাকে ব্যাহত না করে নদীর প্রবাহ ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা ও কৌশল নিতে হবে। এক্ষেত্রে, নদীর বাৎসরিক গতির প্রবাহকে আমলে না নিয়ে মাসিক গতিপ্রবাহকে বিবেচনায় নিতে হবে। এছাড়াও বিবেচনায় আনতে হবে, বৃহৎ বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে সামাজিক ও বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত বিষয়গুলো। তিস্তা নদীর গতিপ্রবাহ শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। এই সমস্যা সমাধানে বর্ষা মৌসুমের পানি সংরক্ষণ করে শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে।

সেশনে জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট স্কুল অব এশিয়ান অ্যান্ড আফ্রিকান এরিয়া স্ট্যাডিজের সহযোগী অধ্যাপক ড. রোহান ডি সুজা বলেন, ১৯৩০ সাল থেকে দেশ গঠন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাঁধ নির্মাণকে একটি অন্যতম নির্দেশক হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু এখন এই ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। কারণ, এই বাঁধ কেন্দ্রিক উন্নয়ন নদীর প্রতি মানুষের চিরন্তন অধিকারকে অবজ্ঞা অথবা অস্বীকার করে। যদিও বলা হয়, বড় বাঁধসমূহ হলো নবায়নযোগ্য জ্বালানীর একটি অন্যতম ভাল উৎস। ফলশ্রুতিতে, প্রাকৃতিক সম্পদের সুবিধা জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়লেও স্থানীয়রা বঞ্চিত হচ্ছে।

ভারতের কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ স্কলার আদিল কাইয়ুম মোল্লাহ্ তার ‘বাংলাদেশ রিভার রাইটস: কনটেস্টিং দ্যা তিস্তা ওয়াটার’ শীর্ষক উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন, আন্তঃদেশীয় পানি ব্যবস্থাপনা দক্ষিণ এশিয়ার একটি উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। পানি নিয়ে যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তা দুটো দেশের ভৌগলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে। তিস্তা এই দুই দেশের মধ্যে চতুর্থ বৃহৎ আন্তঃদেশীয় নদী। ভৌগলিকভাবে ওপরে অবস্থিত ভারতের দেওয়া বড় বাঁধ নির্মাণের কারণে নিচের দিকে অবস্থিত বাংলাদেশে পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও অ্যাকশনএইডের বাংলাদেশ সোসাইটির জেনারেল অ্যাসেম্বলি মেম্বার অধ্যাপক ড. মন্জুরুল কিবরিয়া বলেন, অপরিকল্পিত স্লুইস গেইট ও বাঁধ নির্মাণ, এশিয়ান পেপার মিল ও অন্যান্য আবাসিক এলাকার বর্জ্য ফেলার কারণে হালদা নদীর পরিবেশগত ভারসাম্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশগত ভারসাম্যহীন ও দূষণের কারণে দেশের একমাত্র কার্প প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মাছের ডিম উৎপাদনের হার কমে যাচ্ছে। দূষণ কম হওয়ার কারণে করোনাকালে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম উৎপন্ন হয়েছে যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনের বিষয় ছিল, ‘ওয়াটার, জেন্ডার অ্যান্ড কোভিড-১৯ নেক্সাস’। সেখানে করোনা মহামারিতে বিশেষ করে নারীদের পানি কেন্দ্রিক কি ধরনের সমস্যা পোহাতে হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা।

এসময় অনলাইনে আরও যুক্ত ছিলেন ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ওয়াটার রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট-এর পাকিস্তানি বিশেষজ্ঞ হিনা লটিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের পরিচালক ও অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন, অ্যাকশন এইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটির চেয়ারপার্সন ব্যারিস্টার মনজুর হাসান ওবিই, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব জিওগ্রাফি অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্টের পোস্ট-ডক্টোরাল গবেষক ড. ক্যাথরিন গ্রাশাম, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির, নৃত্যশিল্পী ও সাংস্কৃতিক কর্মী লুবনা মারিয়াম এবং আভাস-এর নির্বাহী পরিচালক রহিমা সুলতানা কাজল প্রমুখ।

এইচএন/ওএফ