বিতর্কিত মন্তব্য ও কল রেকর্ড ফাঁসের পর চারদিকে যখন সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই ঢাকা ছেড়ে চট্টগ্রামে এসেছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। সোমবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এলাকার পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লুতে উঠেছিলেন তিনি। কয়েক ঘণ্টা রেডিসন ব্লুতে কাটিয়ে সোমবার দিবাগত রাত ১২টার পর তিনি চট্টগ্রামের হোটেল রেডিসন ব্লু ছেড়ে যান।

মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোটেল রেডিসন ব্লু’র এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ডা. মুরাদ হাসান সোমবার আমাদের এখানে এসেছিলেন। আবার রাতেই চলে গেছেন। তবে কোথায় গেছেন তা জানাতে পারেননি তিনি।

আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, রাতে হোটেল রেডিসন ব্লু থেকে বেরিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় চলে গেছেন। তবে তথ্যটি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মঙ্গলবার মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। বর্তমানে পত্রটি মন্ত্রণালয়ের সচিবের দফতরে রয়েছে।

আরও পড়ুন : মা-বোনদের কাছে ক্ষমা চাইলেন মুরাদ

মঙ্গলবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, এখনও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দেওয়া হয়নি। ই-মেইলে তিনি (ডা. মুরাদ হাসান) এ পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।

জানা গেছে, পদত্যাগপত্রটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। অথবা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হবে।

পদত্যাগপত্র পাঠানোর পর পরই দেশবাসী ও মা-বোনদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে মুরাদ ক্ষমা চান।

ফেসবুকে দেওয়া ওই স্ট্যাটাসে মুরাদ বলেন, ‘আমি যদি কোনো ভুল করে থাকি অথবা আমার কথায় মা-বোনদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।’

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী মা দেশরত্ন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সব সিদ্ধান্ত মেনে নেব আজীবন। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’।

আরও পড়ুন : রুম সাজানো শেষ হওয়ার একদিন আগেই করতে হলো পদত্যাগ

এর আগে নারীদের নিয়ে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ায় মুরাদকে মঙ্গলবারের মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার রাত ৮টার দিকে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে এ বার্তা পৌঁছে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বেশ কয়েকদিন ধরেই বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে আলোচনায়-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ডা. মুরাদ হাসান। বিশেষ করে রাষ্ট্রধর্ম, রাজনীতি, খালেদা জিয়ার নাতনি ও সবশেষ ফোনালাপ ফাঁস নিয়ে ভেতর-বাইরে আলোচনা-সমালোচনায় ছিলেন। তার উল্টাপাল্টা মন্তব্য এবং অস্বাভাবিক আচরণের কারণে দলীয় সহকর্মীদেরও বিব্রত হতে হয়েছে।

এসবের জেরে সোমবার রাতে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে মুরাদ হাসানকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে আগামী কার্যনির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, দল থেকে বহিষ্কার হলে তাকে সংসদ সদস্যপদও হারাতে হতে পারে।

আরও পড়ুন : ইমনের ফোনটাকে ধন্যবাদ, ইমনকে নয়: ওমর সানী

মুরাদ হাসান পেশায় চিকিৎসক ও আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য।

ডা. মো. মুরাদ হাসান একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালেও তিনি একই আসনে থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে সরকার গঠনের সময় মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে ৫ মাসের মাথায় ওই বছরের ১৯ মে তার দফতর পরিবর্তন করে তথ্য প্রতিমন্ত্রী করা হয়।

কেএম/এসএসএইচ