বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ঝুলে থাকা অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানে জোর দিয়েছে দুই দেশ। একই সঙ্গে সামনের দিনে ঢাকা ও নয়া দিল্লি চলমান সম্পর্ক আরও বাড়াতে চায়।

মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন দুই পররাষ্ট্রসচিব।

প্রায় ঘণ্টাখানেকের বৈঠকে কানেকটিভিটি, বাণিজ্য, নিরাপদ সীমান্ত নিশ্চিত করা ও কোভিড সহযোগিতাসহ গ্রিন এনার্জিতে জোর দেয় উভয়পক্ষ।

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যে বিভিন্ন ইস্যু আছে সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। ফ্রুটফুল আলোচনা হয়েছে, প্রায় ৫০ মিনিট। ভারতের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক যে ইস্যুগুলো রয়েছে এবং অনেক পেন্ডিং ইস্যু রয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সামনের দিনে আমরা কীভাবে আমাদের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

ভারতের পররাষ্ট্রসবিচ বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে এসে আনন্দিত। এ ডিসেম্বর মাস বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের জন্য অনেক গুরত্বপূর্ণ। ভারতের রাষ্ট্রপতি বিজয় দিবসে বাংলাদেশে আসবেন। আমরা বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি, যেখানে আমাদের উভয়ের আগ্রহ আছে। আমরা একসঙ্গে কীভাবে আরও কাজ করতে পারি সেদিকে তাকিয়ে আছি। আমরা কানেকটিভিটি, গ্রিন এনার্জি, রিনিউবল এনার্জিসহ দু’দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাজ করতে পারি।’

ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের ঢাকা সফর নিয়ে আলোচনা করতে মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় আসেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব। বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রস‌চিব মাসুদ বিন মো‌মেন তা‌কে স্বাগত জানান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সাক্ষাতে যান শ্রিংলা। বিকেলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন শ্রিংলা। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তিনি।

দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের একটা সোনালী যুগ চলছে জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন, একই বছর ভারতের রাষ্ট্রপতিও বাংলাদেশ সফর করবেন। এটা একটা রেকর্ড। একই সঙ্গে আমরা বিভিন্ন দেশে মৈত্রী দিবস পালন করেছি। সব মিলিয়ে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের একটা সোনালী যুগ চলছে। আমরা বৈঠকে আরও শান্তিপূর্ণ বর্ডার কীভাবে করতে পারি সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের ট্রেড কীভাবে আরও বাড়ানো যায় সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

‘কোভিড সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছি। নতুন ভ্যারিয়ন্ট ওমিক্রন আসছে, সামনে আরও ভ্যারিয়েন্ট আসতে পারে। কোভিড সহযোগিতা কনটিনিউ রাখতে হবে। বাংলাদেশ কখনও সেইফ থাকবে না যদি ভারত সেইফ না থাকে। একইভাবে ভারতও সেইফ না থাকলে বাংলাদেশ সেইফ থাকবে না’, যোগ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব।

শ্রিংলা বলেন, ‘কানেকটিভিটি এরিয়াতে আমরা খুব ভালোভাবে এগোচ্ছি। দুই দেশের মধ্যে ১৯৬৫ সালের আগে বিদ্যমান ছয়টি রেলসংযোগের মধ্যে পাঁচটি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। ষষ্ঠটি শিগগিরই পুনরুদ্ধার করা হবে। আখাউড়াকে আগরতলার সঙ্গে যুক্ত করতে একটি অতিরিক্ত রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। মাল্টি মোরাল কানেকটিভিটি নিয়ে আমরা কাজ করছি।’

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস টেনে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘দু’দেশের লোক স্বাধীনতা যুদ্ধে উৎসর্গ করেছেন। ভারতের সেনারা ও বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা একসঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছিল। এটা খুব বিরল ইতিহাস। ভারত খুবই গর্বিত এই বিজয়ের অংশীদার হতে পেরে। আমরা বিজয় একসঙ্গে উদযাপন করছি। আমরা সোনালী অধ্যায়ে রয়েছি। মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসেছে। এখন রাষ্ট্রপতি আসছেন। দুটো সফরই হচ্ছে, তাদের প্রথম বিদেশ সফর। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের সম্পর্কের কারণে।’

বাংলাদেশের অর্জনে ভারত খুশি জানিয়ে দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ খুব ভালো করছে। বাংলাদেশ সফলতার একটি উদাহরণ। বাংলাদেশ জিডিপি গ্রোথ ও এলডিসি ইস্যু নিয়ে আমরা আমরা গর্বিত। আমরা খুব খুশি এ সফরে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হতে পেরে।’

আগামী ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশ নেওয়ার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছি কি না, জানতে চাইলে শ্রিংলা বলেন, ‘মার্চে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসে শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ করেছেন। এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জসহ কোভিড ইস্যু বিবেচনায় নিয়ে আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের দিকে তাকিয়ে আছি।’

এনআই/এসএসএইচ/জেডএস