আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর)। ১৯তম দিবসে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের বার্তা দিতে চায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিশেষ করে সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করে দুর্নীতি প্রতিরোধে আরও এগিয়ে আসার আহ্বান থাকবে দুদকের বার্তায়।

যে কারণে প্রথমবারের মতো রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা এবং ৪৯৫টি উপজেলায় বড় পরিসরে উদযাপন করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সারাদেশে দুর্নীতি বিরোধী কার্টুন প্রদর্শনী, মানববন্ধন, সেমিনার ও আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়েছে।

যেখানে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সামাজিক সংগঠন, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি ও সাধারণ জনগণ অংশগ্রহণ করবে। প্রথমবারের মতো দুদকের কোনো অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে সংযুক্ত থাকছেন। দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় এমন আয়োজনকে দুদকের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় উদ্যোগ বলছেন প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

দুর্নীতিবিরোধী মহা আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জনসম্পৃক্ততা ছাড়া দুর্নীতি দমন করা যায় না। মহামান্য রাষ্ট্রপতি এখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন। তার বক্তব্য যেন সবাই বাস্তবায়ন করে সেই কামনা করি। জনসম্পৃক্ততা ছাড়া শুধু আইন দিয়ে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব না। জনসচেতনতা লাগবে। আমরা চেষ্টা করছি জনগণকে সচেতন করতে, তারাও যেন দুর্নীতি দমনে অংশগ্রহণ করে।

সর্বস্তরের অংশগ্রহণে এমন বড় আয়োজনের পর মানুষের প্রত্যাশা বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক, সেক্ষেত্রে সেই প্রত্যাশা পূরণে আপনাদের প্রস্তুতি কেমন থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষের লক্ষ্য সব সময় বড় থাকবেই। আমরা চেষ্টা করব, এগিয়ে যাওয়ার জন্য। চেষ্টা করতে তো কোনো অসুবিধা নেই। অবশ্যই দুর্নীতি দমনে যেন জনগণের প্রত্যাশার কাছাকাছি যেতে পারি, সেই চেষ্টা করবো।

দুর্নীতিবিরোধী দিবসে প্রতিষ্ঠানটির আয়োজন সম্পর্কে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার মধ্যে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন দৃশ্যমান ও উন্মুক্ত স্থানে দুর্নীতি বিরোধী ব্যানার ও ফেস্টুন স্থাপন করা হবে।

সকাল পৌনে ৯টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসটি উদ্বোধন করা হবে। এরপর ১০ থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন,  ইংলিশ রোড, ফার্মগেট, মিরপুর-১০, উত্তরার বিমানবন্দর চত্বর, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী ও মুক্তাঙ্গনসহ দেশের জেলা-উপজেলায় মানববন্ধন আয়োজন করা হবে। যেখানে সরকারি দফতর বা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার প্রতিনিধি, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা, দুদকের প্যানেল আইনজীবী, বিএনসিসি, গার্লস গাইড ও স্কাউটসের সদস্যরা, পিকেএসএফের প্রতিনিধি এবং এনজিও ব্যুরোর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবে।

বেলা ১১টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আর বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

এবারের আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবসের প্রতিপাদ্য রাখা হয়েছে ‘আপনার অধিকার,আপনার দায়িত্ব: দুর্নীতিকে না বলুন।’

জাতিসংঘ ২০০৩ সালে ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ঘোষণা করে। সে হিসেবে এবার ১৯তম আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। জাতিসংঘ সারা বিশ্বকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যেই ইউনাইটেড ন্যাশনস কনভেনশন অ্যাগেইনেস্ট করাপশনের (আনকাক) মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ আনকাকের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন শুরু করে। যদিও সরকারিভাবে ২০১৭ সাল থেকে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।

দুদকের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা: গণমাধ্যমের প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রতিযোগিতা আয়োজন করবে সংস্থাটি।

দুদক থেকে প্রাপ্ত এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত দুদকে তিন হাজার ৮৬৯টি দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন ও এক হাজার ৫৫৩টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। 

আরএম/এসএম