বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সাফল্যের জন্য গণতান্ত্রিক কাঠামো আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার। তিনি বলেন, সব মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে গণতন্ত্র কার্যকর হয়।

বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) কসমস ফাউন্ডেশনের ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক : ভবিষ্যতের পূর্বাভাস’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রদূত মিলার।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ অত্যন্ত স্থিতিস্থাপকতা, প্রতিশ্রুতি এবং সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে চলা একটি দেশ। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে গণতান্ত্রিক উন্নয়নেও এগিয়ে যেতে হবে। গণতন্ত্র তখনই কার্যকর হয় যখন সব মানুষকে সম্পূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মানুষের অধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং ভোটের অধিকার সুরক্ষিত থাকে। গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারকে পারস্পরিকভাবে শক্তিশালী করতে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।’

অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান। প্রখ্যাত কূটনীতিক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। 
আলোচক প্যানেলে ছিলেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) বিশিষ্ট ফেলো ও বোর্ড সদস্য সাবেক রাষ্ট্রদূত ফারুক সোবহান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আনম মুনিরুজ্জামান, কসমস ফাউন্ডেশনের সম্মানিত উপদেষ্টা ইমেরিটাস, সাবেক রাষ্ট্রদূত (অব.) তারিক এ করিম এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।

মিলার বলেন, ‘সব নাগরিকের জন্য মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি বজায় রাখতে অবিরাম কাজ করতে হবে। একটি বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে আমি মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগের বিষয়গুলো সর্বোচ্চ পর্যায়ে উত্থাপন করছি। বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র শক্তিশালী করার জন্য কাজ করা আমার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করি।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করে, যা বাংলাদেশি জনগণের ইচ্ছাকেও প্রতিফলিত করে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে ভোটার এবং অংশগ্রহণকারীদের সুরক্ষাসহ একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে।’

এ সময় মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, ‘সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য সংবাদপত্র এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা অত্যাবশ্যক। গণমাধ্যম, সুশীল সমাজের সদস্য, বিরোধী দল এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের অবশ্যই ভয় ছাড়াই তাদের মতামত প্রকাশ করতে এবং পরিবর্তনের পক্ষে সহায়তা করতে হবে। ভিন্নমতের কণ্ঠস্বর শুনতে হবে এবং সম্মান করতে হবে।’

উদ্বোধনী বক্তব্যে এনায়েতুল্লাহ খান বলেন, ‘গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক অনেকাংশে সমৃদ্ধ হয়েছে। শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের সংযোগের ভিত্তিতে এটি সমৃদ্ধ হয়েছে।’

ড. ইফতেখার চৌধুরী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘পারস্পরিক সুবিধার জন্য এগুলোকে আরও প্রশস্ত ও গভীর করা দরকার। বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উত্তরণ করেছে সে জন্য বাজারে প্রবেশাধিকার প্রাপ্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে সমর্থন এটিকে অর্থনৈতিকভাবে বৃদ্ধি ও অগ্রগতিতে সহায়তা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’

এনআই/এসকেডি