১৫ থেকে ৩০ দিনে টাকা দ্বিগুণের ‘জাদু’ নিয়ে এসেছিলেন তারা
অনেকটা জাদুর মতো শুনতে। টাকা দিলেই ১৫-৩০ দিনে তা হয়ে যাবে দ্বিগুণ। এমন স্বপ্ন দেখিয়ে দুই মাসে একটি চক্র হাতিয়ে নিয়েছে ৪০-৫০ কোটি টাকা। শনিবার সাভারের আমিনবাজার থেকে চক্রটির সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডি বলছে, এ চক্রের সদস্যরা চড়তেন দামি গাড়িতে, পরতেন দামি পোশাক, চলাফেরা করতেন অভিজাত সব জায়গায়। এভাবে মানুষের বিশ্বাস অর্জনের পর চক্রটি তাদের এমএলএম সাইটে ১ হাজার ৮৫০ টাকা দিয়ে সদস্য হতে বলত। এই টাকা ১৫ অথবা ৩০ দিনে দিগুণ করার কথা বলত চক্রটি। একজন ব্যক্তি একাধিক আইডি দিয়ে টাকা বিনিয়োগ করতে পারতেন।
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী ধাপে চক্রটি এই সদস্যদের নতুন সদস্য নিয়ে আসতে বলত। বলা হতো প্রতিজন নতুন সদস্যের জন্য ৫০ টাকা করে পাবেন। আর যে সদস্য ১৫০ জন নতুন সদস্য নিয়ে আসতে পারবেন তিনি হবেন স্টার সদস্য। স্টার সদস্যকে আইফোন, গাড়ি ও বিদেশ ট্যুরের প্রলোভন দেখানো হতো। এসব প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে ভুক্তভোগীরা হাজার হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন।
এভাবে চক্রটি অনলাইনভিত্তিক চারটি এমএলএম কোম্পানিতে সারা দেশ থেকে ৫-৬ লাখ সদস্য সংগ্রহ করেন। আর মাত্র দুই মাসে চক্রটি প্রায় ৪০-৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
বিজ্ঞাপন
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে চক্রটির সাত জন সদস্যকে শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সাভারের আমিন বাজার থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি। যাদের গ্রেফতার করা হয় তারা হলেন- মো. আবুল হোসেন পুলক (৪০), মো.মাহাদী হাসান মল্লিক (৩৫), মো. মিজানুর রহমান ওরফে ব্রাভো মিজান (৫৫), মো.মহি উদ্দিন জামিল (৩৮), মো.সাইফুল ইসলাম আকন্দ (৪২), মো. কভেজ আলী সরকার (৩৫) ও মো. শাহানুর আলম শাহীন (৪২)।
তাদের কাছ থেকে ৯টি মোবাইল ফোন, ২০টি সিম কার্ড, একাধিক ব্যাংক একাউন্টের চেক বই, একাধিক ব্যাংকের এটিএম কার্ড, বিভিন্ন অবৈধ এমএলএম কোম্পানির বিজনেস প্লানের কাগজপত্র এবং নগদ ৬২ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
আজ (রোববার) দুপুরে মালিবাগে অবস্থিত সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিআইডির ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন।
ইমাম হোসেন বলেন, চক্রটি প্রথমে একটি অনলাইন গ্রুপ খুলে তাদের ব্যবসার বিষয়ে প্রচারণা শুরু করে। তারা বলে, তাদের অনলাইন ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে ১৫ দিনে অথবা ৩০ দিনে টাকা দ্বিগুণ করে দেবেন। মাত্র ১ হাজার ৮৫০ টাকা জমা দিয়ে তাদের কোম্পানির সদস্য হওয়া যায়। চক্রটি এভাবে প্রচারণা চালিয়ে সদস্য সংগ্রহের পাঁয়তারা করে। সদস্যদের আকৃষ্ট করার জন্য তারা নিজেরা খুব বিলাসী জীবন যাপন করত। যারা বেশি সদস্য এনে দিতে পারত তাদের নিয়ে বড় বড় প্রোগ্রাম আয়োজন করা হতো, যেন আরও সদস্য আনা যায় এসব প্রোগ্রাম দেখিয়ে।
তিনি আরও বলেন, এই চক্রের হোতা হলেন মো. আবুল হোসেন পুলক ও মো.মাহাদী হাসান মল্লিক। তারা ডেসটিনিতে কাজ করতেন। ডেসটিনি থেকে এমএলএম ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে তারা এখন অনলাইনে এই প্রতারণা করে আসছেন। যদিও চক্রটির সদস্যরা এটিকে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বলেন। সবাইকে মনে রাখতে হবে এক মাসে বা ১৫ দিনে কোনোভাবে টাকা দ্বিগুণ করা সম্ভব নয়। আমরা এই চক্রের প্রতারিত ভিকটিমদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি, যাদের অধিকাংশই নারী। ঘরে বসে কিছু অর্থ আয় করার লোভে এই চক্রের ফাঁদে পা দেন তারা।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, চক্রটির চারটি অনলাইন এমএলএম কোম্পানি আছে। চারটি কোম্পানির মাধ্যমে কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় লাখ লোককে তারা প্রতারিত করেছে। এভাবে তারা ৪০-৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া টাকা এখন কোথায় আছে এবং এই অনলাইন প্লাটফর্মগুলা সিআইডি বন্ধ করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব অনলাইন প্লাটফর্ম বন্ধ করার এখতিয়ার আমাদের নেই, তবে আমরা এ বিষয়ে সুপারিশ করব। তারা ভিকটিমদের কাছ থেকে টাকাগুলো বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নিয়েছে। প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া টাকার মধ্যে কিছু তারা বিনিয়োগ করেছে, আবার কিছু টাকা বড় বড় অনুষ্ঠান আয়োজনে খরচ হয়েছে। আর কিছু টাকা ব্যাংকে রেখেছে। আসামিদের আজ আমরা রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠাব। রিমান্ডে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ পেলে আমরা জানতে পারব টাকাগুলো আসলে তারা কোথায় কীভাবে রেখেছে বা খরচ করেছে।
এমএসি/এনএফ/জেএস