জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন এবং বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশনের গৌরবময় বছরের সমাপ্তি উপলক্ষে শিগগিরই কলকাতায় প্রথম অফিসিয়াল ভিসা আবেদন কেন্দ্র (ভিএসি) চালুর ঘোষণা দিয়েছে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন।

এর ফলে, বাংলাদেশ ভ্রমণে ইচ্ছুক ভারতের জনগণ, বিশেষ করে ভারতের পূর্বাঞ্চলের মানুষ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। একইসঙ্গে বহু প্রতীক্ষিত এ পদক্ষেপ বাংলাদেশের পর্যটন এবং শিল্প উভয় খাতে ইতিবাচক অবদান রাখবে। 

২০০৫ সালে ভারত বাংলাদেশে ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারে (আইভিএসি) আউটসোর্স করে। এ সফল মডেলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দূতাবাস অনুসরণ করছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, কূটনৈতিক ও ব্যবসা কেন্দ্রিক কাজই মিশনের প্রধান লক্ষ্য। বিশ্বের ৭৫টি দেশে বাংলাদেশের মিশন রয়েছে। বিশেষ করে যেসব দূতাবাসে সেবা গ্রহীতাদের চাপ রয়েছে, সেসব স্থানে আমরা ভিসা সেন্টারটিকে পৃথক করার পরিকল্পনা করছি। এ পরিকল্পনারই অংশ হিসেবে মূল দূতাবাস বা হাইকমিশন থেকে আমরা এটি আলাদা করছি। এ জন্যই কলকাতায় বাংলাদেশ সরকার পৃথক ভিসা সেন্টার করেছে।  

বর্তমান পদ্ধতিতে, আবেদনকারীদের আবেদনপত্র এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরাসরি বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে জমা দিতে হয়। এটি সকাল ৯.৩০ থেকে দুপুর ১২.৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে এবং এর কেবল তিনটি কাউন্টার রয়েছে। ডেপুটি হাইকমিশন প্রাঙ্গণের বাইরের রাস্তায় প্রায়ই আবেদনকারীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়, আবার কখনও কখনও মানুষ লাইনে নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করতে রাতভর অপেক্ষাও করে। এটি কূটনৈতিক কাজের জন্য গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে। বেশিরভাগ দূতাবাসই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আশেপাশে ভিড় করার অনুমতি দেয় না। এছাড়া, এখানে রোদ ও বৃষ্টির সময় আবেদনকারীদের আশ্রয় দেওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই, সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো উপায় নেই, নারী ও শিশুদের টয়লেটের অভাব রয়েছে এবং ফর্ম পূরণে সহায়তা করার মতো কেউ নেই। আবেদনকারীরা প্রতিদিনই এসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। 

১৩ হাজার বর্গফুটের সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নতুন ও অত্যাধুনিক বাংলাদেশ ভিএসি, কলকাতার সল্টলেক সেক্টর ভি-এ অবস্থিত। এটি এ শহরে অবস্থিত কোনো দেশের সর্ববৃহৎ ভিসা আবেদন কেন্দ্র। বিনিয়োগকারী, শিক্ষানবিশ, পর্যটক, কূটনৈতিক, গবেষণা, শিক্ষার্থী, এনজিও, সরকারি প্রতিনিধি, সাংবাদিক, ব্যবসায়, কর্মসংস্থান ও ওয়ার্ক পারমিট এবং পরিবার নিয়ে ভ্রমণসহ বাংলাদেশের সকল ক্যাটাগরির ভিসা গ্রহণের জন্য এখানে ১০টি কাউন্টার রয়েছে। কেন্দ্রে দুটি পাসপোর্ট রিটার্ন কাউন্টারসহ তিনটি প্রি-স্ক্রিনিং ডেস্ক এবং দুটি ফর্ম ফিলিং ডেস্ক রয়েছে। আবেদনকারীদের সুবিধার্থে, ভিসা ফর্ম পূরণের জন্য একটি বিনামূল্যে সেলফ-হেল্প ডেস্ক ও একটি ফটো ডেস্ক এবং নামমাত্র চার্জে ফটোকপিয়ার সেবা, ব্যক্তিগত লাউঞ্জ ও কুরিয়ার সেবা ইত্যাদির ব্যবস্থা করবে ভিএসি।

এছাড়াও কেন্দ্রে গাড়ি এবং সাইকেল-মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের জন্য যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। অভিনব এ কেন্দ্রে একটি অন-সাইট ক্যাফেটেরিয়া, নারীদের জন্য নার্সিং এরিয়া এবং প্রার্থনা কক্ষের (প্রেয়ার রুম) মতো সুবিধাও রয়েছে। আগতদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সকল কোভিড প্রোটোকল অনুসরণ করার সুব্যবস্থাও রয়েছে।

বর্তমান প্রক্রিয়ার অধীনে, কোনো নির্দিষ্ট ফি ও চার্জ নেই বলে দালাল এবং এজেন্টরা ভিসা ফি হিসেবে ১২,৫০০ রুপি পর্যন্ত নিয়ে থাকে। বাংলাদেশের ভিসা পেতে আবেদনকারীদের জন্য ঝামেলাহীন অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে ভিএসিতে সকল ক্যাটাগরির ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ফি কমিয়ে আনা হবে এবং প্রতি আবেদনের বিপরীতে ফি জিএসটিসহ ৮২৬ রুপি নির্ধারণ করা হবে, যা বর্তমানে ভারতে যেতে বাংলাদেশের ভিসা আবেদন কেন্দ্রে যে ফি প্রদান করা লাগে তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। বাংলাদেশের ভিসার জন্য ভারতীয় আবেদনকারীদের আর কোনো অতিরিক্ত ভিসা ফি প্রদান করতে হবে না। 

এসকেডি