মহান বিজয় দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর ২১ পয়েন্টে সড়কের ডাইভারশন করেছিল ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। যান চলাচল ছিল সীমিত। দুপুর গড়াতেই সরব হয় সড়ক, শুরু হয় স্বাভাবিক যান চলাচল। বিজয়ের আনন্দ উপচে পড়ে জনবহুল রাজধানীতে। এর রেশ ছিল হাতিরঝিলেও। বিনোদনপ্রেমীদের ভিড়ে গোটা হাতিরঝিল হয়ে ওঠে উৎসবে রঙিন।

সকালের ফাঁকা রাজধানী রূপ বদলাতে শুরু করে দুপুরের পর। বেলা যত গড়াতে থাকে তত হাতিরঝিলের দৃশ্য পাল্টাতে থাকে। শিশু-কিশোর নারী-পুরুষের উপচে পড়া ভিড় জমে হাতিরঝিলে। কেউ প্রেমিক-প্রেমিকার হাত ধরে, কেউ পরিবারের সঙ্গে এসেছেন ঘুরতে। বন্ধুরা এসেছে দল বেঁধে। হাতিরঝিল যেন মেতেছে বিজয়ের আনন্দে। 

মহান বিজয় দিবস ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সাতটি দেশের ৩০২ জন বিদেশি অতিথির আগমন ঘটেছে রাজধানীতে। সে উপলক্ষে আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সড়কে সড়কে নিরাপত্তা চৌকি, চেকপোস্ট লক্ষ্য করা যায়। তবে সব বাঁধ যেন ভেঙে পড়েছে হাতিরঝিলে।

বৃহস্পতিবার(১৬ ডিসেম্বর) সরেজমিনে হাতিরঝিল ঘুরে দেখা যায় সর্বত্র মানুষের উপচে পড়া ভিড়। কোথাও দাঁড়িয়ে থাকার জায়গাটুকুও নেই। কেউ ঘুরছে ওয়াটার বাসে, কেউবা চক্রাকার বাসে। কেউ আবার হাতিরঝিলের ওভারপাস কিংবা ব্রিজের রেলিং ঘেঁষে গল্প আড্ডা আর খুনসুটিতে মশগুল। আগত বিনোদনপ্রেমীরা কেউ কেউ রেলিং ধরে বিজয় দিবসের বিকেল কিংবা সন্ধ্যার মুহূর্তটিকে স্মৃতিময় করে রাখতে ছবি তুলছেন, কেউবা প্রিয়জনকে নিয়ে এক ক্লিকে নিজেদের ফ্রেম বন্দি করছেন সেলফিতে। কেউ আবার ঝিলের পাড়ে বসে গল্প-আড্ডায় মেতে উঠেছেন। অনেকের মাথায় বিজয়ের পতাকা বাঁধা। কারো হাতে বিজয়ের পতাকা, কারো হাতে ব্যাজ, কেউ কেউ আবার রং তুলিতে গাল মুখ ও হাত রাঙিয়েছেন লাল-সবুজের পতাকার রঙে। 

হাতিরঝিলে ওয়াটার টেক্সি স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় সেখানেও নানা বয়সী মানুষের ভিড়। নতুন সাজে প্রস্তুত করা হয়েছে হাতিঝিল চক্রাকার ওয়াটার বাস। নামানো হয়েছে নতুন বোট। 

হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ওয়াটার ট্যাক্সি কর্তৃপক্ষ বিজয় দিবস উপলক্ষে চালু করেছে বিশেষ সার্ভিস। ৮০ টাকা জনপ্রতি ভাড়ায় পুরো হাতিরঝিল ঘুরিয়ে দেখানো হচ্ছে। এফডিসি, রামপুরা সেতু, গুলশান-১ এলাকায় ট্যাক্সির তিনটি টার্মিনাল থেকেই এ বিশেষ সেবায় বিনোদনপ্রেমীদের ঘুরতে দেখা যায় হাতিরঝিলে। উৎসবমুখর এ দিনে কেউবা ঝিলের রেস্টুরেন্টে বসে চা কিংবা কফির চুমুকে গল্প-আড্ডায় মশগুল হয়েছেন।

বনশ্রী থেকে স্ত্রী-কন্যাসহ হাতিঝিলে ঘুরতে এসেছেন খন্দকার শিমুল। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবার নিয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত কাটাতে নগরীর বেশিরভাগ মানুষের গন্তব্য হয়ে উঠেছে এ বিনোদন কেন্দ্র। বিকেলে এসেছি। তবে সন্ধ্যা গড়াতেই মানুষের ভিড় বেড়ে যায়। মেয়ের খুব ভালো লেগেছে হাতিরঝিলের ওয়াটার বাসে চড়ে।

উত্তরা থেকে পরিবার নিয়ে হাতিরঝিলে এসেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ট্রাফিক বিভাগের বিধিনিষেধের সময় পার হওয়ার পর পরিবারকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছি। হাতিরঝিল পছন্দের হওয়ায় এখানে আসা, ঘুরাঘুরি।

চক্রাকার বাসের টিকিট বিক্রি করতে হিমশিম খেতে দেখা গেছে কাউন্টারের কর্মরতাদের। শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন লাইনে। কিন্তু মানুষের চাহিদার তুলনায় বাসের সংখ্যা একেবারেই কম।

মেহনাজ আক্তার নামে ঘুরতে আসা এক নারী বলেন, আমার স্বামী কক্সবাজারে অফিসিয়াল ট্যুরে গেছেন। বছর জুড়েই ব্যস্ততা থাকে সংসারে। ছুটির দিনটা বিজয়ের রঙে রাঙাতে দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে নিজে গাড়ি চালিয়ে হাতিরঝিলে এসেছি। নিজেদের মতো একটা বিকেল কাটানো গেলো।

গুলশান-১ গুদারা ঘাটের ওয়াটার ট্যাক্সির টিকিট বিক্রেতা সবুজ মিয়া বলেন, আজ সকাল থেকেই এখানে ভিড়। বিনোদনপ্রেমীদের জন্য সাজানো হয়েছে সবগুলো ওয়াটার বাস। রাতে ঝলমল করবে সবকটি বাস।

জেইউ/এসকেডি/জেএস