মহান স্বাধীনতার প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা পুলিশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশের আইকনিক এই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

আজ শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত হয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। 

এতে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। 

অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে মোট ৫৯ জন বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। আগত বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে কয়েকজন সদস্য মুক্তিযুদ্ধকালীন তাদের দুঃসাহসিক অভিযানের বর্ণনাসহ বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন। এই সময়ে অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। 

মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের নিহত সকল শহীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গর্ববোধ করি যে, আমার অগ্রজরা রাজারবাগের এই পুণ্যভূমি থেকে প্রথম প্রতিরোধ বুলেটটি ছুঁড়েছিলেন। তারা আত্মত্যাগ করেছিলেন বলেই আজ আমি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার।’ 

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘যখন দেশে যুদ্ধ চলছিল, তখন আমি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। আমরা শুনতে পাই, খানেরা আক্রমণ করেছে, তখন আমরা সকলে সেখানে দৌড়ে যাই। দেখি জনগণ তাদের দা, শাবল, কুড়াল, বাঁশ, লাঠি-সোঁটা নিয়ে তাড়া করে বেল গাছে উঠিয়েছে। এরপর তারা গাছ থেকেই অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে।’

এরপর কমিশনার চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন্সে ১৭ জন পুলিশ সদস্যের একসঙ্গে আত্মত্যাগের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রাম থানায় কর্মরত সাব-ইন্সপেক্টরকে নির্মমভাবে হত্যার লোমহর্ষক চিত্র তুলে ধরেন। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের এই আয়োজনে বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাগণ সাড়া দেওয়ায় তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। সবার সুস্থতা কামনা করে বলেন, ‘আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, আপনারা দেশের জন্য কাজ করেছেন, আমাদের জন্য দোয়া করবেন আমরা যেন এদেশের মানুষের জন্য কিছু করতে পারি।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ডিএমপি কমিশনার। এরপর স্বাগত বক্তব্যে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) মীর রেজাউল আলম বলেন, ‘আপনারা মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন বলে আমরা গর্বিত। আপনারা রাজারবাগ পুণ্যভূমিতে এসেছেন এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আপনাদের আত্মত্যাগ, আমাদের করবে অনুপ্রাণিত, করবে উজ্জীবিত।’

মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অবদান ও মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মহানুভবতার স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্যে বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধারা নানা অনুভূতি ব্যক্ত করেন। স্মৃতিচারণ করেন সেই সময়ের বীরত্বগাঁথা ঘটনাবলীর। 

এআর/এইচকে/জেএস