ঢাকা শহরের যানজটের অন্যতম কারণ প্রাইভেটকারকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। রাজধানীতে ব্যক্তিগত গাড়িতে চলাচলকারী ৫ শতাংশ বাসিন্দার জন্য সড়কের ৭০ শতাংশ জায়গা দখল হয়ে যায়। আর এতে সৃষ্ট যানজটে রাজধানীতে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতি হয় প্রায় ১০০ কোটি টাকা।  

সোমবার জাতীয় জাদুঘরের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ (পবা) ১২টি সংগঠন আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। যানজট নিরসনে সব রুটে পর্যাপ্ত বড় বড় বাস নিশ্চিত করা এবং প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণের দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরও অনেক সময় বাসে ওঠা যায় না। এ কারণে বাধ্য হয়ে অনেকে ছোট ছোট যানবাহনে যাতায়াত করেন। অনেকে দুর্ঘটনা এড়াতে বাসে ওঠার ঝুঁকি নিতে চান না বলে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। ফলে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ইত্যাদির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এতে যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। 

রাজধানী ঢাকাকে সবার জন্য বসবাসের উপযোগী করতে যানজট নিরসনে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ ও সব রুটে পর্যাপ্ত বড় বড় বাস নিশ্চিতসহ সুদূরপ্রসারী ও সমন্বিত পরিকল্পনা নেওয়া ও বাস্তবায়ন জরুরি। কারণ দুটি প্রাইভেটকারে দুজন যাত্রী সড়কের যে জায়গা দখল করেন, একই জায়গায় একটি বাস অর্ধশতাধিক যাত্রী বহন করতে পারে।

পবাসহ ১২টি সংগঠনের সংবাদ সম্মেলন

 

বক্তারা বলেন, ২০১৭ সালের জুলাইয়ে বিশ্বব্যাংক এক গবেষণায় বিশ্বব্যাংক বলছে, যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে বছরে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, অঙ্কের হিসাবে তা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। ঢাকায় গাড়ির গতি ঘণ্টায় গড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার। বিশ্বব্যাংকের মতে, এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর হেঁটেই গাড়ির আগে যেতে পারবে মানুষ। 

মানববন্ধন থেকে বেশ কয়েকটি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, সব রুটে পর্যাপ্ত সংখ্যক, মানসম্মত বাস নিশ্চিত করতে হবে; যাতায়াত সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারক, কনসালটেন্ট ও কর্মকর্তাদের গণপরিবহনে চলাচল বাধ্যতামূলক করা; বিআরটিসি বাসের লিজ প্রথা বাতিল করে নিজস্ব উন্নত ব্যবস্থাপনায় গণপরিবহন হিসেবে চালানোর ব্যবস্থা নেওয়া; প্রাইভেটকারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা; গাড়ির চালককে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে বাধ্য করা; যত্রতত্র গাড়ি পার্ক করা ও গাড়ি ঘোরানো থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করা; ছোট ছোট যানবাহনের সংখ্যা সীমিত করে সব রুটে দোতলা বাস সার্ভিস চালু করা; অবৈধ দখলদারির হাত থেকে সড়ক মুক্ত করা এবং সড়কে দোকানপাট বসানো নিষিদ্ধ করা।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিমউদ্দীন, জাতীয় সচেতন ফাউন্ডশেনের প্রধান সমন্বয়ক মনিরুল ইসলাম মনির, বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট সাইক্লিস্টের প্রধান সমন্বয়ক রোজিনা আক্তার, বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাসিবুল হক পুনম, ঢাকা যুব ফাউন্ডশেনের মুখপাত্র মো. ইমরান হোসাইন প্রমুখ।

এমএইচএন/আরএইচ