দেশে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে ৫০ কোটি ডলার অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। ইলেকট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশন মর্ডানাইজেশন কর্মসূচির আওতায় এই ঋণ অনুমোদন দিয়েছে সংস্থাটি।

বুধবার (২২ ডিসেম্বর) বিশ্বব্যাংকের ওয়াশিংটন অফিস এ ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বলে জানায় সংস্থাটির ঢাকা অফিস।

বিশ্বব্যাংক জানায়, এ অর্থে আধুনিক, নির্ভরযোগ্য এবং টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। বিদ্যুৎ বিতরণ আধুনিকীকরণ কর্মসূচি ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রায় ৪ কোটি মানুষের কাছে উন্নত বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দেবে এ অর্থায়ন। এটি বাংলাদেশ গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ২৫টি গ্রামীণ বৈদ্যুতিক সমবায়ে (পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি) নেটওয়ার্ক অবকাঠামো উন্নয়নে বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের আওতায় ৩১ হাজার কিলোমিটারের বেশি ডিস্ট্রিবিউশন লাইন, ১৫৭টি ডিস্ট্রিবিউশন সাবস্টেশন এবং সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং রূপান্তর করতে নেটওয়ার্কগুলোকে নতুন এবং উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করা হবে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যানড্যান চেন বলেন, গত দশকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা চারগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৯৯ শতাংশেরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিতরণ নেটওয়ার্ক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি। এই প্রোগ্রামটি বিতরণ নেটওয়ার্কের আধুনিকীকরণ এবং নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে, যা একটি নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য পাওয়ার সিস্টেমের মেরুদণ্ড।

সংস্থাটি জানায়, প্রোগ্রামটি একটি আধুনিক গ্রিড সিস্টেম চালু করবে যা বিদ্যুৎ এবং তথ্যের দ্বিমুখী প্রবাহকে সমর্থন করতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং চরম আবহাওয়ার ঘটনাসহ জলবায়ু এবং সাইবার ঝুঁকি থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করবে প্রকল্পটি। এটি সুপারভাইজরি কন্ট্রোল এবং ডেটা অধিগ্রহণ সিস্টেমের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি চালু করবে এবং উন্নত মিটারিং অবকাঠামো ইনস্টল করবে। এটি বিদ্যুৎ বিতরণ নেটওয়ার্কে নবায়ন শক্তি এবং ব্যাটারি শক্তি স্টোরেজ সিস্টেমের একত্রীকরণের সুবিধার মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন করবে। এ সবই বিদ্যুৎ ব্যবস্থার টেকসই রূপান্তর ঘটাবে।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অ্যানার্জি স্পেশালিস্ট এবং প্রোগ্রামের টিম লিডার বিপুল সিং বলেন, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বিশ্বের বৃহত্তম গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। ৯ কোটির বেশি লোকের কাছে বিদ্যুৎ পৌছেঁ দিয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। এই প্রোগ্রামটি নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করবে।

বিশ্বব্যাংকের অঙ্গভুক্ত প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) তহবিল নমনীয় শর্তে ঋণ দিয়ে আসছে বাংলাদেশকে। এখানে পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরের মেয়াদ রয়েছে। এছাড়াও, প্রোগ্রামটিতে ক্লিন টেকনোলজি ফান্ড হিসেবে ১৫ মিলিয়ন অনুদান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এ কর্মসূচিসহ নবায়নযোগ্য শক্তির উত্স থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণের জন্য বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বিশ্বব্যাংকের ১৮০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চলমান সহায়তা রয়েছে। ১৯৮১ সাল থেকে বিশ্বব্যাংক পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বিদ্যুতায়ন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে কাজ করছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে ১৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা চলমান রেখেছে আইডিএ। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী। স্বাধীনতার পর থেকে সংস্থাটি বাংলাদেশে ৩৫  বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অনুদান, সুদ-মুক্ত ঋণ, ঋণ এবং সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এসআর/আইএসএইচ