ঢাকা ওয়াসার পয়ঃশোধনাগারের চারটি লেগুনে আগের মতো বিষাক্ত মাছ আর পাওয়া যায়নি। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, লেগুনে রোটেনন প্রয়োগ ও মাছ ধরে তা ধ্বংস করার কাজ নিয়মিত পরিচালনা করছে ঢাকা ওয়াসা। এর আগে ২০২০ সালে পাগলা পয়ঃশোধনাগারের লেগুন থেকে বিষাক্ত মাছ পাওয়া গিয়েছিল প্রায় দুই মণ। সে অর্থে এবার আর ঢাকা ওয়াসার লেগুন থেকে আগের মতো বিষাক্ত মাছ পাওয়া যায়নি।

রোববার (২ জানুয়ারি) ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে রাজধানীর পাগলা পয়ঃশোধনাগারের চারটি লেগুনে জাল ফেলা হলে সেখান থেকে মাছ পাওয়া যায় মাত্র ১৬টি। প্রথমে একটি লেগুনে জাল ফেলা হলে সেখান থেকে উঠে আসে ছয়টি ছোট টাকি মাছ। বাকিগুলোতে জাল ফেলে সব মিলিয়ে ১৬টি মাছ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসার পাগলা পয়ঃপরিশোধনের আকার প্রায় ২৪৬ একর। এর মধ্যে রয়েছে ১৬টি লেগুন বা পুকুর। প্রতিটি লেগুনের আকার গড়ে ২৫ হাজার বর্গমিটার। বিশাল আয়তনের এ লেগুনে এক সময় স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করত। পয়ঃবর্জ্যের পানিতে মাছ চাষ করে তা আবার রাতের আঁধারে বাজারজাত করা হতো, যা ছিল বিষাক্ত।

এমন পরিস্থিতিতে ২০১১ সালের ১৩ জুলাই ‘ওয়াসার লেগুনের বিষাক্ত মাছ খাচ্ছে ঢাকার মানুষ’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই বছরই প্রতিবেদনটি যুক্ত করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে দুই আইনজীবী রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানির পর ২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেয়। রুলের ওপর পাঁচ কার্যদিবস শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ৩০ আগস্ট হাইকোর্ট বিষয়টি রায়ের জন্য রাখে। সে অনুযায়ী ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আদালত রুল মঞ্জুর করে সাত দফা নির্দেশনাসহ রায় দেন।

২০১৫ সালে আদালতের সাত দফা নির্দেশনায় বলা হয়— দুই বছরের মধ্যে লেগুন এলাকার চতুর্দিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে হবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে। ম্যাজিস্ট্রেট, মৎস্য বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে দুই মাস পর পর ওষুধ প্রয়োগ করে লেগুনের মাছ নিধন করতে হবে। লেগুন এলাকায় তদারকির জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আনসার ও নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ করতে হবে। লেগুন এলাকায় নৈশ টহল জোরদার করতে হবে। জনসচেতনতার জন্য ‘এই মাছ বিষাক্ত, ক্ষতিকর এবং মাছ চাষ ও ধরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ লেখা প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাইনবোর্ড স্থাপন করতে হবে লেগুন এলাকায়। লেগুন এলাকার প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এবং সবশেষ নির্দেশনায় বলা হয়, ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা নাগরিক কমিটি গঠন করে মাছ চাষ বন্ধের ব্যবস্থা নেবেন এবং ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করবেন।

নির্দেশনা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে এসব বাস্তবায়ন করেছে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার কারণে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধ হয়েছে। একই সঙ্গে বন্ধ হয়েছে স্থানীয়দের মাছ চাষও। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, লেগুনে রোটেনন প্রয়োগ ও মাছ ধরার কাজ নিয়মিত পরিচালনা করছে ঢাকা ওয়াসা।

এরই ধারাবাহিকতায় সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিতে রোববার (২ জানুয়ারি) পাগলা পয়ঃশোধনাগারের চারটি লেগুনে জাল ফেলা হয়। সেখান থেকে মাছ পাওয়া ১৬টি। যেখানে ২০২০ সালে পাগলা পয়ঃশোধনাগারের লেগুন থেকে মাছ পাওয়া গিয়েছিল প্রায় দুই মণ, যা এবার কমে এসেছে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাসান বিন মোহাম্মদ আরিফের উপস্থিতিতে লেগুনে জাল ফেলা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাইরে থেকে প্রকল্পস্থলে প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। ফলে এখানে আর মাছ চাষ হয় না। যে কারণে জাল ফেলে আগের মতো বিষাক্ত মাছ পাওয়া যায়নি।

এসময় উপস্থিত মৎস কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন বলেন, এ পানিতে যে অক্সিজেন লেভেল আছে, তাতে কোনো প্রাণী থাকার কথা না। ফলে এখানে খুব একটা মাছ পাওয়া যায়নি।

লেগুনে মাছের বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, পাগলা পয়ঃশোধনাগারে যে মাছের জন্ম হয়, সেটা পরিষ্কারের জন্য আমরা উদ্যোগ নিই নিয়মিত। হাইকোর্টের নির্দেশনাটা ছিল এমন যে বিষাক্ত মাছ যেন কোনোভাবেই জনগনের মধ্যে বিতরণ করা না হয়। হাইকোর্ট থেকে বলা হয়েছিল সীমানা ওয়াল করতে, আমরা সীমানা ওয়াল করেছি। এখন আর বাইরে থেকে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। মাছ চাষ করার চেষ্টাও করতে পারে না। তারপরও সুযোগ থেকেই যায়, তাই আমরা জাল ফেলে নিয়মিত বিষয়টি দেখছি।

এএসএস/এসএসএইচ