দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ডাকে এবারও সাড়া দেননি জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। তার সঙ্গে স্ত্রী সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রত্নাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল দুদক। 

বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় দুইশত কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের উৎস ও ব্যাখ্যা জানতে সোমবার (১০ জানুয়ারি) কমিশনে উপস্থিত হতে তাদের চিঠি দেওয়া হয়। 

দুদকের একটি ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা গেছে, দুদকের তলবি নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রুহুল আমিন হাওলাদার সম্প্রতি উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করেছেন। তাই রিট ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত রুহুল আমিন দুদকে উপস্থিত হবেন না বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে রুহুল আমিনের ফোনে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এর আগেও বিভিন্ন অভিযোগে দুদকের পক্ষ থেকে কয়েক দফা তলব করা হয় রুহুল আমিন হাওলাদারকে। তবে কখনো তিনি হাজির হননি। 

এর আগে, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং তার স্ত্রী সংসদ সদস্য নাসরিন রত্নাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান সম্প্রতি তলবি নোটিশ দেন।

নোটিশে বলা হয়, ১০ নভেম্বর রুহুল আমিন হাওলাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ সংশ্লেষ বক্তব্য প্রদানের দুই মাস সময় দেওয়া হয়। দুই মাস সময় দেওয়ার পর কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ জানুয়ারি কমিশনে উপস্থিত হয়ে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার কাছে বক্তব্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এবং বরিশাল-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী নাসরিন রত্নার নামে থাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে প্রায় ২০০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারিতে সন্দেহজনক লেনদের তথ্য ধরা পড়লে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুদককে অনুরোধ করা হয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান পর্যায়ের প্রথম ধাপে গত বছরের আগস্টে প্রথমবার তলব করা হলে তখন হাজির হননি জাপা নেতা ও তার স্ত্রী। তারা সময় চেয়ে আবেদন করেন। তাদের আবেদন আমলে নিয়ে দুই মাস সময় দেওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো তলব করা হয়।

এর আগেও দুদকের তরফ থেকে কয়েকদফা তলব করা হয়েছিল রুহুল আমিন হাওলাদারকে, কিন্তু তিনি হাজির হননি। ২০১৯ সালের ২০ মে ওমরাহ হজে যাওয়ার প্রস্তুতির কারণ দেখিয়ে দুদকের তলব এড়িয়ে যান তিনি।

সরকারি সম্পদ আত্মসাতের মাধ্যমে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রুহুল আমিন হাওলাদারকে প্রথম দফায় তলব করে দুদক। কিন্তু সে সময় নির্বাচনের প্রস্তুতির কারণ দেখিয়ে দুদকে হাজির না হয়ে তিনি হাজিরা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন।

২০১৯ সালের ২৮ মার্চ রুহুল আমিন হাওলাদারকে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। ওই নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাওলাদার রিট আবেদন করলে আদালত প্রাথমিক শুনানি নিয়ে চার সপ্তাহের জন্য দুদকের তলব স্থগিত করে দিয়েছিলেন।

এরপর স্থগিতাদেশটি ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর ফলে হাওলাদারকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে আর কোনো আইনি বাধা না থাকায় তলব করে ফের নোটিশ দেওয়া হয়।

আরএম/আরএইচ