খাগড়াছড়ির রামগড়ে স্ত্রী ও চার মাসের সন্তানকে গলাকেটে হত্যার অভিযোগে মো. সোলেমান হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সিআইডি জানা যায়, মো. সোলেমানের স্ত্রী খালেদা আক্তার পিংকির ২০১৩ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এ দম্পতির ফারিয়া সুলতানা ও সালমা আক্তার জান্নাত নামে দুইটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। যার মধ্যে ফারিয়া সুলতানের বয়স পাঁচ বছর ও বাবার হাতে হত্যা হওয়া চার মাসের শিশু সালমা আক্তার জান্নাত। বিয়ে পর তাদের দাম্পত্য জীবন সুখে কাটলেও হঠাৎ করে সোলেমান পরকীয়ায় জড়িয়ে পরে। সোলেমানকে পরকীয়ায় বাঁধা দেওয়া সে গত ৩০ ডিসেম্বর তার স্ত্রী ও চার মাসের কন্যা সন্তানকে গলাকেটে হত্যা করে কম্বলে পেঁচিয়ে ঘরের মধ্যে রেখে পালিয়ে যায়।

এ বিষয়ে গত ৩ জানুয়ারি পিংকির বাবা আব্দুল খালেক দুলাল (৪৫) মো. সোলেমান হোসেনকে আসামি করে রামগড় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় সোমবার দিবাগত রাতে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট এলাকা থেকে সোলেমানকে গ্রেফতার করে সিআইডি। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোলেমান স্ত্রী ও সন্তানকে গলাকেটে হত্যা করার কথা সিআইডির কাছে স্বীকার করেন।

মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।

মুক্তা ধর বলেন, গত তিন জানুয়ারি এ জোরা হত্যাকাণ্ডের পর স্থানীয় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নজরে আসার পর থেকেই সিআইডি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে ছায়াতদন্ত শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডির একটি দল গতকাল রাতে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট এলাকা থেকে সোলেমানকে গ্রেফতার করে।

সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোলেমান জানায়, সে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার একটি টেক্সটাইল মিলে অপারেটর হিসেবে কাজ করত। অপারেটর হিসেবে কাজ করার সময় ২০১৩ সালে পারিবারিকভাবে তার সঙ্গে পিংকির বিয়ে হয়। বিয়ের পর সে গ্রামের বাড়িতে থেকে রাজমিস্ত্রির কাজ করত। তাদের সংসারে ফারিয়া সুলতানা ও সালমা আক্তার জান্নাত নামে দুই কন্যা সন্তান ছিল। কিন্তু সম্প্রতি এক নারীর সঙ্গে তার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যার ফলে তার সাংসারিক জীবনে সে আগের মত মনোযোগ দিতে পারছিল না। তার এই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে আপত্তি জানায় পিংকি। এ পরকীয়ার সম্পর্ক থেকে সোলেমান যেন দূরে সরে আসে সেজন্য পিংকি তাকে বারবার চাপ দিয়ে আসছিল। ফলে এ নিয়ে সংসার এ লাগাতার কলহ সৃষ্টি হতো তাদের মধ্যে।

তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ ঘটনার দিন অর্থাৎ ৩০ ডিসেম্বর সোলেমানের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে প্রচণ্ড কলহের সৃষ্টি হয় পিংকির সঙ্গে। পিংকি সোলেমানের পরকীয়ার সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আর এতে সোলেমান ক্ষুব্ধ হয়ে তার স্ত্রী পিংকি ও চার মাসের শিশু সন্তানকে ঘরের ব্যবহৃত দা দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে। হত্যা পর তাদের মরদেহ ঘরে থাকা কম্বলে পেঁচিয়ে মেঝেতে রেখে ঘর তালা দিয়ে পালিয়ে যায় সোলেমান।

এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আর সোলেমানের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও তিনি জানান।

এমএসি/আইএসএইচ