মন্ত্রণালয় দায় নেয় না, আমরা শুধু মামলা খাই
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের নেতা ইলিয়াসুর রহমান বাবুল বলেছেন, আমরা ট্যানারি মালিক, আমরা পরিবেশবান্ধব ট্যানারি তৈরি করতে চাই। কিন্তু আমাদের কারোরই কোনো পরিকল্পনা নেই। শিল্প মন্ত্রণালয় কোনো বিষয়ের দায়ভার নিতে চায় না। শুধু মামলা খাই আমরা ট্যানারি মালিকেরা। আরও অন্তত ৪০০ একর জায়গা পেলে পরিবেশবান্ধব ট্যানারি করতে পারবো।
মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) বছিলা উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ আয়োজিত ‘ট্যানারি শিল্প ও নদী দূষণ’ শীর্ষক এক আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
আলোচনায় বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর পানির মান নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনা করেন কনসোর্টিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. নূরুল ইসলাম। গবেষণাপত্রে তিনি বলেন, হেমায়েতপুর ট্যানারি সংলগ্ন এলাকাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি বেশ ভালোভাবেই লক্ষ্য করা যায়। অতি উচ্চমাত্রার অক্সিজেনের চাহিদা, আর্দ্রতা, অ্যামোনিয়া ও ফেনলের উপস্থিতি মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকারক। সিসিএমই সূচকে ঢাকার অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে হেমায়েতপুরের অবস্থান সবার নিচে; যা পানির গুনমানকে সর্বদাই হুমকির মুখে রাখে। যেহেতু হেমায়েতপুর উজানে অবস্থিত এবং ধলেশ্বরী বুড়িগঙ্গার উপনদী, সেহেতু হেমায়েতপুরের পানিই পরবর্তীতে ঢাকায় প্রবেশ করে।
ওয়াটারকিপার্সের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, ট্যানারিগুলোকে হাজারীবাগ থেকে হেমায়েতপুর নিয়ে গেলাম। তাতে কি আমরা দূষণের মাত্রা কমালাম নাকি আরও ছড়িয়ে দিলাম? আমরা ট্যানারি শিল্পকে ধ্বংস হতে দিতে চাই না। আমরা চাই দূষণ বন্ধ করে পরিবেশসম্মতভাবে এই শিল্পের কলেবর আরও বৃদ্ধি হোক। ট্যানারি শিল্পের দূষণের সমস্যার সমাধান আমাদের সবাই মিলে করতে হবে। আর এর জন্য সরকারকে রোডম্যাপ করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
আলোচনায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার প্রতিনিধি রুমানা আফরোজ বলেন, আমরা উন্নয়ন করতে চাই। কিন্তু উন্নয়ন করতে গিয়ে আমরা নদী হারাতে চাই না। উন্নয়ন তো করাই যাবে, কিন্তু নদী মরে গেলে আমরা আর নদীকে ফিরিয়ে আনতে পারবো না।
পরিবেশ অধিদফতরের প্রতিনিধি ফাতেমাতুজ্জোহরা বলেন, আমরা নতুন করে আর কোনো ট্যানারির অনুমোদন দিচ্ছি না। তবে দেশটা আমাদের সবার। সবাই মিলে যদি দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তবে দেশটাকে সুন্দর করা সম্ভব।
রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, আগে একটা গরুর চামড়া দেড় হাজার অথবা তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হতো কিন্তু এখন ২০০ টাকাও না। ফলে গবাদীপশু পালনকারীরা আর লাভবান হয় না। আমরা দেখেছি চোরাই লাইন দিয়ে নদীর মাঝখানে দূষিত বর্জ্য ফেলা হয় আর কর্তৃপক্ষের লোক গেলে চোরাই লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সিইউপির প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মাহবুল হক বলেন, আমরা উন্নয়নের বিপক্ষে নই, আমরা টেকসই উন্নয়ন চাই। কিন্তু সে উন্নয়ন পরিবেশ সংরক্ষণ আইন মেনে করতে হবে। পরিবেশ রক্ষার পরিকল্পনা রেখে উন্নয়ন করতে হবে। নদী দূষণের দায় পরিবেশ অধিদফতর কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।
আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম নেতা এ বি এম মাসুদ, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ক্লইমেট চেঞ্জ এক্সপার্ট মনির হোসেন চৌধুরী, বছিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সোলায়মান, দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. রাকিবুল ইসলাম, বারসিকের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফেরদৌস আহমেদ, সিইউপির প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মাহবুল হক, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. কামরুজ্জামান প্রমুখ।
এমএইচএন/এনএফ