করোনার সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের অনেক কর্মসূচি ছিল, কিন্তু আমরা সব ভার্চুয়ালি করছি। সুতরাং সবাই নিয়ম মেনে চলবেন, মাস্ক পরবেন। সবকিছু স্বাভাবিক চলুক, সেটাই আমরা চাই। 

বুধবার (১২ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় তিনি এ কথা বলেন। 

শেখ হাসিনা বলেন, করোনা নতুনভাবে হানা দিয়েছে। সবাই নিয়ম মেনে চলবেন, মাস্ক পরবেন। সবকিছু স্বাভাবিক চলুক, সেটাই আমরা চাই।

তিনি বলেন, ২০২২ সালে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আছে আমরা সেগুলো উদ্বোধন করব। দেশের মানুষের জন্য গত ১৩ বছরে আমরা অবকাঠামোগত বিভিন্ন উন্নয়ন করেছি। এটি আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনারোধে সারা দেশের জাতীয় মহাসড়কে ২০১০ থেকে ২০১২ সালে ২০৯টি ব্ল্যাকস্পট (দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান) চিহ্নিত করা হয়েছে। সেসব স্থানে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে আরও ২৫২টি ব্ল্যাকস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৭২টির প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৮০টি ব্ল্যাকস্পটেও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর ফলে সড়ক ও মহাসড়কে দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে কমবে।

পথচারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের দেশে একটা প্রবণতা আছে- দুর্ঘটনা হলেই গাড়ির ড্রাইভারকে পেটানো হয়। অনেক সময় গণপিটুনিতে তাকে মেরেই ফেলা হয়। কেন দুর্ঘটনা ঘটল, কার দোষে ঘটল, সেটা খুঁজে বের করা দরকার। আর সবার ট্রাফিক রুল সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার এবং সেটা মেনে চলা দরকার। মোবাইল ফোন কানে দিয়ে সড়ক পার হওয়া, রেল লাইনে চলাচল করা বন্ধ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ দৌড়ে রাস্তা পার হবেন না। রাস্তা পারাপারেই কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সব জায়গায় ফুট ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস করা আছে। সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের বলব, রাস্তায় চলাচলে ট্রাফিক রুল মানতে হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাফিক রুলটা শেখাতে হবে। 

তিনি বলেন, স্কুলে যাতায়াতে নিরাপদে রাস্তা পারাপারে ট্রাফিক পুলিশ সহায়তা করবে। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষেরও লোক রাখতে হবে। অনেক সময় বাচ্চারা অন্যদের মানতে চায় না। স্কুল কর্তৃপক্ষের লোক থাকলে ঠিকই মানবে। প্রত্যেকটা স্কুলকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশ দেবে, যাতে তাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। দোষ কার, সেটা পরে দেখা যাবে। অনেক সময় ধাক্কা লেগে পড়ে যায়, সে হয়ত বেঁচে যেত। কিন্তু ড্রাইভার গাড়ি থামালে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে এই ভয়ে সে পিষে চলে যায়। একটা মানুষের জীবন চলে যায়। কিছু হলেই ড্রাইভারকে ধরে পেটাবেন, গাড়িতে আগুন দেবেন, এটা ঠিক না। আইন কেউ হাতে তুলে নেবেন না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, তারাই সেটা দেখবে। 

গাড়ির চালক ও হেলপারদের তিনি বলেন, আমি জানি অনেক সময় ড্রাইভাররা ক্লান্ত হয়ে পড়ে, ঝিমিয়ে পড়ে। সেজন্য মহাসড়কের পাশে চালক ও যাত্রীর জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা নিচ্ছি। সুনির্দিষ্ট দূরত্বে একটি করে বিশ্রামাগার থাকবে। পাশাপাশি চালকদের ট্রেনিংয়েরও ব্যবস্থা করছি। গাড়ি বাড়ছে, চালক বাড়ছে না। সেজন্য সব উপজেলায় চালকদের ট্রেনিং দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। তাহলে এ সংকট কিছুটা কমবে। ড্রাইভার ক্লান্ত হলে গাড়ি থামাবেন, রেস্ট নেবেন। কিন্তু হেলপার দিয়ে চালানো ঠিক নয়, এটা অন্যায় কাজ। 

অনুষ্ঠানে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতায় ঢাকা এয়ারপোর্ট মহাসড়কে শহিদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন পথচারী আন্ডারপাস, সিলেট শহর বাইপাস-গ্যারিসন লিংক ৪ মহাসড়ক, বালুখালী (কক্সবাজার)-ঘুনধুম (বান্দরবান) সীমান্ত সংযোগ সড়ক এবং রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর চেংগী নদীর উপর ৫০০ মিটার দীর্ঘ সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং চিফ মেজর জেনারেল ইবনে ফজল শায়েকুজ্জামান প্রমুখ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এলাকা থেকে সরকারি কর্মকর্তা ও উপকারভোগীরা অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন। 

এইউএ/জেডএস/জেএস