নাসিক নির্বাচন
ভোটারদের উপস্থিতিতে ‘সন্তুষ্ট’ রিটার্নিং কর্মকর্তা
চলছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। শুরুতে উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা বেড়েছে। শীতের মধ্যেও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে কেন্দ্রে হাজির হন ভোটাররা। তরুণ থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ, সব বয়সী ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তারের কাছে নির্বাচন কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সবকিছু বিবেচনায় সার্বিক পরিবেশ ভালো বলা চলে। প্রথমদিকে ভোটারদের উপস্থিতি কম ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিতি বাড়ছে এবং উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কত শতাংশ ভোট পড়েছে— জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, এই মুহূর্তে আমরা সেটা বলতে পারব না। কারণ, এখনো গড় হিসাব করা হয়নি। ১, ২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি কেন্দ্র আমিসহ সংশ্লিষ্টরা পরিদর্শন করেছি। তাতে মনে হয়েছে, ভোটারদের সমাগম বাড়ছে এবং প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার গতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে।
বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের দেওভোগ শিশুবাগ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে জানা যায়, সেখানে ভোটার রয়েছেন ২০৪৯ জন। সবাই পুরুষ ভোটার। এ সময় পর্যন্ত পাঁচ কক্ষের ওই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২০ শতাংশ।
বিজ্ঞাপন
ইভিএমের কারণে ভোটদানে দেরি হচ্ছে, বিশেষ করে বয়স্ক ভোটারদের ক্ষেত্রে— এ বিষয়ে সেখানে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার আবু খালেদ মোহাম্মদ রায়হান বলেন, প্রথমদিকে একটু সময় লাগছিল। এখন ভোটদানের গতি বাড়ছে, ভোটারদের উপস্থিতিও বাড়ছে।
এদিকে, ১৬নং ওয়ার্ডের দেওভোগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে তৈমূর আলম খন্দকার অভিযোগ করেন, ইভিএমের কারণে ভোট দিতে দেরি হচ্ছে। লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও মানুষ ভোট দিতে পারছেন না। ত্রুটিপূর্ণ মেশিনের কারণে এমন ভোগান্তি হচ্ছে।
তিনি ভোটগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আরও বলেন, পুলিশ দিয়ে তার কর্মী-সমর্থকদের হয়রানি করা হচ্ছে। এর আগে ‘লক্ষাধিক ভোটে তার জয় হবে’ বলে ঘোষণা দেন তৈমূর আলম খন্দকার।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী শিশুবাগ বিদ্যালয়ের নারীকেন্দ্রে সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটের দিকে ভোট দিতে আসেন। ভোট শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের মানুষ নির্ধারণ করে ফেলেছেন আমাকেই ভোট দেবে। ইনশাআল্লাহ নৌকার জয় হবেই হবে, আইভীর জয় হবেই হবে।’
তিনিও অভিযোগ করেন, ভোটের গতি ‘স্লো’। বলেন, নগরীর ৩, ৫, ১৮, ১৭, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে খুবই স্লো ভোট কাস্টিং হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চাচ্ছি, যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে আমার লোকগুলো ভোট দিতে পারে।
ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে আইভী বলেন, ইভিএম নতুন, বিষয়টি ভোটারদের কাছেও নতুন। তাদের ট্রেইন-আপ করে গতি বাড়াতে হবে। দিন ছোট, শীতকাল। সব কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি আছে। আমি চাই ভোটাররা যাতে দ্রুত ভোট দিতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হোক।
রোববার সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হচ্ছে।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে মেয়র পদে সাত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীক নিয়ে সেলিনা হায়াত আইভী। এর আগে দুবার নাসিকের মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাতি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা তৈমূর আলম খন্দকার, খেলাফত মজলিসের এ বি এম সিরাজুল মামুন দেয়ালঘড়ি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ হাতপাখা, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসীম উদ্দিন বটগাছ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস হাতঘড়ি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
এছাড়া সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন এবং সংরক্ষিত নয়টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩২ জন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬ জন এবং নারী ভোটার দুই লাখ ৫৭ হাজার ১১১ জন। ট্রান্সজেন্ডার ভোটার রয়েছেন চারজন।
পিএসডি/ওএফ/এমএআর/