সাইনবোর্ড, সায়েদাবাদ, রামপুরা, মালিবাগ হয়ে নতুন বাজার পর্যন্ত আসা অনাবিল পরিবহন নামক বাসের হেলপার লাল মিয়া। মাস্ক না পরেই নতুন বাজার এলাকায় যাত্রী তুলতে হাঁক দিচ্ছেন। যাত্রী ওঠার পরই ভাড়া তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন তিনি। এ সময়ও তার মুখে নেই মাস্ক।

লাল মিয়ার কাছে প্রশ্ন ছিল বিধিনিষেধ অনুযায়ী চালক-হেলপারেরও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। তাহলে আপনি কেন পরেননি? উত্তর জানাতে গিয়ে কিছুটা লজ্জা পেলেন লাল মিয়া। এরপর তুলে ধরলেন তার পক্ষের যুক্তি। তিনি বলেন, মাস্ক আমার কাছে আছে, পরেও ছিলাম। কিন্তু বাসে ডিউটি করতে হয় প্রায় ১৫ ঘণ্টা, ভোর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত বাসে থাকতে হয়। কতক্ষণ একটানা মাস্ক মুখে পরে থাকা যায় বলেন।

তিনি আরও বলেন, মাস্ক পরেই থাকি, কিন্তু দীর্ঘসময় পরে থাকার পর মাঝে মাঝে দম বন্ধ লাগে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় তখন খুলে রাখি। আবার কিছু সময় পরপর পরি। অনেক যাত্রী আছে যারা মাস্ক পরে না, আবার অনেকে আছে যাদের কাছে ভাড়া তুলতে যাওয়ার সময় আমি মাস্ক না পরে থাকলে মাস্ক পরতে বাধ্য করে। আসলে বেশি সময় একটানা মাস্ক পরে থাকতে কষ্ট হয়।

দেশে হঠাৎ করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সরকার ১১ দফা বিধিনিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে, যা ১৩ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। সেখানে মাস্ক পরাকে জোর দিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। গণপরিবহন থেকে শুরু করে সব স্থানেই নির্দেশনা পালনে উদাসহীন সাধারণ মানুষ।

প্রথমে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চলাচল করতে বলা হলেও পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হয়। তবে গণপরিবহনের যাত্রী, চালক, হেলপার সবাইকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এটি বাস্তবায়ন অনেকেই করছেন না। বাসচালক হেলপারসহ যাত্রীদের অনেককেই মাস্ক পরে চলাচল করতে দেখা যায়নি।

রোববার (১৬ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন রুটের বাসে উঠে দেখা গেছে চালক, হেলপার ছাড়াও যাত্রীদের অনেকের মধ্যে মাস্ক পরতে এক ধরনের অনীহা রয়েছে। কেউ কেউ মাস্ক থুতনিতে ঝুলিয়ে রেখেছেন। তবে মাস্ক না পরায় সবচেয়ে বেশি অনীহা দেখা গেছে হেলপারদের।

রাজধানীর কুড়িল থেকে সাভারগামী বৈশাখী পরিবহনে বাসে উঠে কথা হয় হেলপার আলমাস আলীর সঙ্গে। মাস্ক কেন পরেননি, জানতে চাইলে তিনি পকেট থেকে বের করে দেখিয়ে বলেন, মাস্ক আছে কিন্তু সবসময় পরে থাকা যায় না। যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া তোলার সময় পরি।

একইভাবে মিরপুর-বনশ্রী রুটে চলাচলকারী আলিফ বাসের চালক-হেলপার দুজনকেই দেখা গেল তারা মাস্ক পরেননি। কেন পরেননি জানতে চাইলে বাসের চালক নরুল ইসলাম বলেন, ভোর ৫টায় বাস নিয়ে বের হয়েছি, কতক্ষণ মাস্ক পরে থাকা যায়? একটু পর আবার পরব। বেশিরভাগ মানুষই তো মাস্ক পরে না, আমাদেরকেই কি শুধু চোখে পড়ে?

চালকের কথার সঙ্গে মিল পাওয়া গেল বাসের ভেতরের চিত্রে। পুরো বাসের মধ্যে বেশ কয়েকজন আছেন যারা মাস্ক পরেননি। এছাড়া ৫/৬ জন থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে রেখেছেন। সেই বাসের মাস্ক না পরা তোফাজ্জল হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, আমার টিকা দেওয়া আছে, তাই মাস্ক পরিনি। পকেটে মাস্ক আছে, যখন ভিড়ের মধ্যে যাব তখন পরব।

ভিক্টর ক্লাসিক বাসের ভেতরেও দেখা গেল যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই মাস্ক পরেননি। মাস্ক না পরার কারণ দেখিয়ে মকিদুর রহমান নামের এক যাত্রী বলেন, বাসে খুব বেশি ভিড় নেই তাই খুলে রেখেছি। সবসময় মাস্ক পরে থাকলে দম বন্ধ লাগে। তবে আমাদের সবারই মাস্ক পরা উচিত।

এএসএস/জেডএস