মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে গ্রাম থেকে শহরে আসার পথে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি মনিটরিং করতে জেলা প্রশাসকদের প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।

বুধবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় অধিবেশন শেষে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী।

মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘দিনাজপুর, ঈশ্বরদী কিংবা সাতক্ষীরায় ফসল হলো। চাষি মাঠ পর্যায়ে বিক্রি করে প্রতি কেজিতে ১৫ টাকা পাচ্ছে। এটা ঢাকায় এসে হয় দ্বিগুণের বেশি। এই যে দ্বিগুণ দাম ৪০-৪৫ টাকা হয়, এটা কেন হবে? এটা হওয়ার কারণ হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী বা ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য। এটা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় আরও এক্সট্রা খরচ হয়। এটা কেন হয় তার মনিটরিং করার জন্য ডিসিদের সহযোগিতা চেয়েছি। এই যে বাড়তি টাকাটা এটা কমানোর জন্য তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। তারা বলেছেন দায়িত্ব নেবেন।’

‘আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আসলে গ্রাম থেকে ঢাকায় আসা অবদি কোথায় কোথায় টাকাটা দিতে হয় সেটা বের করা। সেটা বের করা গেলে জাতীয় পর্যায়ে ব্যবস্থার মাধ্যমে এটা কীভাবে বন্ধ করা যায় তা নিয়ে কাজ করা যাবে,’ যোগ করেন কৃষিমন্ত্রী।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সময় আমরা আধুনিক ও বিজ্ঞান ভিত্তিক কৃষিতে যেতে পারিনি বলে দেশে খাদ্যের ঘাটতি ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে অনেকগুলো কর্মসূচি নিয়েছে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার জন্য। সারের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমানো হয়েছে। কৃষকদের ১৬টি কৃষি পণ্যে ৪ শতাংশ সুধে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এখন বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ হলো কৃষিপণ্য বিক্রি করে কীভাবে কৃষকরা লাভ করতে পারে, যা দিয়ে চাষিদের আয় বাড়ে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়। কৃষি খাতের উন্নয়ন হলে অর্থনীতির অন্যান্য খাতের উন্নয়ন তরান্বিত হয়।’

বর্তমানে দেশে খাদ্যের মজুত যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘খাদ্যের মজুত এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। দেশে এখন মোট ২০ লাখ টন খাদ্য মজুত আছে। এর মধ্যে চাল ১৭ লাখ টন রয়েছে।’

এ সময় মন্ত্রী জানান, বিদেশে কৃষিপণ্য রফতানিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব স্থাপনে আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা নেদারল্যান্ড গিয়েছিলাম। তাদের সঙ্গে আমাদের একটি সমঝোতা হচ্ছে। টেকনোলজিক্যাল সাপোর্ট দেবে তারা।’

করোনা মহামারির কারণে দুই বছর বিরতির পর মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারপ্রধান দেশের জনগণের জন্য কাজ করার পাশাপাশি জেলা পর্যায়ের এই শীর্ষ কর্মকর্তাদের ২৪টি নির্দেশনা দেন।

সম্মেলন শুরুর দিন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন। রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে দায়িত্ব পালনে জনগণের সেবা দেওয়ার বিষয়টিতে অগ্রাধিকার দিতে ডিসিদের প্রতি অনুরোধ করেন।

করোনা মহামারির কারণে এবার ভেন্যু বদলে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলন হচ্ছে। অন্যান্য বছর জেলা প্রশাসকদের অধিবেশনগুলো হয় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে। মঙ্গলবার শুরু হওয়া এ সম্মেলন শেষ হবে বৃহস্পতিবার।

এনআই/এসএসএইচ