রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার ‘লও ঠেলা’ গ্রুপের মূলহোতা বাবু ওরফে দশের বাবুসহ ৯ জনকে দেশীয় অস্ত্রসহ আটক করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

র‍্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আবু নাঈম মো. তালাত জানান, গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ‘ভাইব্বা ল কিং’ নামে একটি কিশোর গ্যাং এবং ৩১ ডিসেম্বর কবির বাহিনীর নামে একটি দস্যু বাহিনীকে গ্রেফতার করে র‍্যাব-২। এরপর থেকে মোহাম্মদপুরে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক অপরাধরোধে র‍্যাব-২ গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে। এরই অংশ হিসেবে র‍্যাব-২ মোহাম্মদপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত বেশ কয়েকটি গ্রুপ সম্পর্কে জানতে পারে। কয়েকজন ভুক্তভোগীও ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কে র‍্যাবের কাছে অভিযোগ দেন।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে র‍্যাব-২ মোহাম্মদপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। গত ৩১ ডিসেম্বর গভীর রাতে মোহাম্মদপুর থানাধীন নবী নগর হাউজিং এলাকায় একদল সন্ত্রাসী দোকানপাট, বাড়িঘরে ভাঙচুর এবং ছিনতাই করে। অভিযোগ পাওয়ার পর র‍্যাব-২ বিভিন্ন আলামত, ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং গোয়েন্দা তৎপরতা ও ছায়া তদন্ত বৃদ্ধি করে। অভিযোগের ভিত্তিতে র‍্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বাবু ওরফে দশের বাবু (২৬) ও তার ৮ জন সহযোগীকে আটক করে।

আটক অন্যরা হলেন, মো. ফোরকান (২২), মো. পলাশ (২৩) মো. সুমন (২২), মো. সাগর (২৩), মো. রাজন (২৩), মো. নাজিম (২৪), শাকিল (২০) ও মিলন (২১)। তাদের কাছ থেকে ২টি চাপাতি, ৫টি ছুরি, ১টি স্টিলের পাইপ, ১টি হোল্ডিং চাকু এবং ১টি চেইন পাওয়া যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে র‍্যাব-২ অধিনায়ক লে. কর্নেল তালাত জানান, আটকরা ‘লও ঠেলা’ নামে কিশোর গ্যাং চক্রের সক্রিয় সদস্য। দলের মূলহোতা বাবু ওরফে দশের বাবু। তারা দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মাদক কেনাবেচা, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।

‘লও ঠেলা’ গ্রুপের প্রধান দশের বাবু জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ২০০০ সালে মায়ের সঙ্গে নড়াইল থেকে ঢাকায় আসে। প্রথমে মায়ের সঙ্গে থাকত সে। পরবর্তীতে সে গাড়ির হেলপার, হোটেল পরিষ্কারের চাকরিসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিল। কাজের ফাঁকে সে মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। মাদকের টাকার জন্য মায়ের সঙ্গে প্রায়ই তার ঝগড়া হতো।

পরবর্তীতে মাদকের টাকার জন্য ছোট ছোট চুরি, ছিনতাইয়ের মাধ্যমে অপরাধ জগতে হাতেখড়ি হয়। ২০১৪ সালে ‘ভাইব্বা ল কিং’ কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। এ বাহিনীতে যোগদানের মাধ্যমে তার অপরাধের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। সে বাহিনীর সঙ্গে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং মাদক কেনাবেচায় জড়িয়ে পড়ে।

তিনি জানান, একসময় তার কুখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে অপরাধ জগতে সে ‘দশের বাবু’ নামে খেতাব পায়। পরবর্তীতে তাদের নিজেদের মধ্যে অন্তর্কোন্দলে ‘ভাইব্বা ল কিং’ গ্রুপ থেকে আলাদা হয়ে ২০১৭ সাল থেকে ‘লও ঠেলা’ গ্রুপ নামে দুর্ধর্ষ এক গ্রুপ গড়ে তোলে। গ্রেফতার বাবু বখে যাওয়া ছেলেদের তার গ্রুপে যোগদান করাত। মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, বসিলা, চাঁদ উদ্যান এলাকায় ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ত ‘লও ঠেলা’ গ্রুপ। এছাড়াও জবর দখল, ভাড়ায় শক্তি প্রদর্শন এবং আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপকর্মে তাদের ব্যবহার করে বাবু। বাবুর বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, ডাকাতি, দস্যুতা, মাদক,  ছিনতাইসহ ৬টি মামলা রয়েছে।

এ র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, আটক অন্য সদস্যরা বিভিন্ন পেশার আড়ালে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাদের মধ্যে ফোরকানের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১টি, পলাশের নামে হত্যা চেষ্টা আইনে ১টি, শাকিলের নামে ১টি মাদক মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

জেইউ/এসকেডি