মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাদ দিতে চিঠি দিয়েছে ১২টি মানবাধিকার সংস্থা। 

বৃহস্পতিবার ডিসি সম্মেলন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই যেখানে পুলিশের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের এনকাউন্টারের (বন্দুকযুদ্ধ) ঘটনা না ঘটে। যখন সন্ত্রাসীরা অস্ত্র তুলে কথা বলে, তখন পুলিশ বাহিনী তো চুপ হয়ে বসে থাকতে পারে না। তখনই এ সমস্ত ফায়ারিং-এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। আর এগুলোর সবই যদি এলিট ফোর্স র‍্যাবের ঘাড়ে দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আমি মনে করি এটা অবিচার হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি সব সময় বলে আসছি, যদি পেছনের দিকে তাকান, র‍্যাব কখন তৈরি হয়েছিল... যারা র‍্যাব তৈরি করেছিল তারাই এখন র‍্যাবকে অপছন্দ করছে, নানা ধরনের অপপ্রচার করছে। 

তিনি বলেন, র‍্যাব যে ভালো কাজ করছে সেগুলো তারা তুলে ধরছে না। র‍্যাব যে মাদকের বিরুদ্ধে, ভেজাল দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করছে, সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করল, চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে, তারা সব সময় জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনের জন্য কাজ করছে- সেসব কথা তারা কখনো তুলে ধরে না। তারা নানা ধরনের মানবাধিকারের কথা বলে।  
 
র‍্যাব ভালো কাজ করছে। যারা র‍্যাব তৈরি করেছিল তারাই এর বিরোধিতা করছে। তাহলে কি বলা যায় র‍্যাব পলিটিক্যাল বিরোধিতার মুখে- এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, আপনারাই বিচার করবেন, আপনাদের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম। 

উল্লেখ্য, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাবকে শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাদ দিতে গত বছরের নভেম্বরে জাতিসংঘে চিঠি দেয় ১২টি মানবাধিকার সংস্থা।আজ (বৃহস্পতিবার) হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে ওই চিঠির কথা প্রকাশ করা হয়।

চিঠি পাঠানো ১২টি আন্তর্জাতিক সংস্থা হলো- অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলানটারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স (এএফএডি), এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ফোরাম-এশিয়া), এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন (এএনএফআরইএল), ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস, দ্য অ্যাডভোকেটস ফর হিউম্যান রাইটস এবং ওয়ার্ল্ড অরগানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, দুই মাসেরও বেশি সময় আগে গত বছরের ৮ নভেম্বর ১২টি মানবাধিকার সংস্থার সই করা চিঠিটি গোপনে জাতিসংঘে পাঠানো হয়। তবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন সংশ্লিষ্ট দফতর এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব দেয়নি।

এর আগে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটি।

নিষেধাজ্ঞার বিজ্ঞপ্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ সেসময় জানায়, র‌্যাব আইনের শাসন ও মানবাধিকার খর্ব করেছে।

পরে জানুয়ারি মাসের শুরুতে নিষেধাজ্ঞার বিষ‌য়ে যুক্তরাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক জবাব পাঠায় বাংলা‌দেশ। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের পক্ষ থেকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের কাছে পাঠানো চিঠিতে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকসহ আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ দমনে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ ও কর্মকা‌ণ্ডের কথা তু‌লে ধরা হয়। চি‌ঠি‌তে র‌্যা‌বসহ বাংলা‌দে‌শের অন‌্য বা‌হিনীগু‌লোর অবদানের কথাও গুরুত্বের স‌ঙ্গে তু‌লে ধরা হয়।

এআর/আরএইচ/জেএস