ডাকাতের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শফিকুল ইসলাম। গত শুক্রবার ঢাকা থেকে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন তিনি। রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে ঢাকা-রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী একটি বাসে উঠেন। সেই বাসেই যাত্রী বেশে উঠে পড়ে ডাকাত দল। পরে তাকেসহ অন্য যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতরা। রোববার (২৩ জানুয়ারি) তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই রাতের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।

ফেসবুক পোস্টে শফিকুল ইসলাম লিখেছেন, মহাসড়কে চলাচলকারী একটা বাস ১২ ঘণ্টা ধরে ঢাকা শহরে সারারাত ঘুরে ডাকাতি করে, কিন্তু ঢাকা সিটির কোনো চেকপোস্ট সেটি থামায় না, বিষয়টা খুবই ভাবনার।

তিনি জানান, দুই দিনের জন্য কিছু কাজে ঢাকায় আসেন। কাজ শেষে ফেরার পথে রাত হয়ে যায়। যাওয়ার সময় রাত সাড়ে ১০টার পর ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলে যাওয়ার বাস না পেয়ে এক বন্ধুকে নিয়ে রাত প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে আবদুল্লাহপুরে যান। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করে ঢাকা-রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী বাসে ওঠেন। বাসটা একটু অন্ধকার ও ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল তাদের কাছে। হেলপার জানান, বেশিরভাগ যাত্রীই ঘুমাচ্ছেন। এছাড়া আরও যাত্রী পথ থেকে উঠবেন।

বাসে ওঠার ৪-৫ মিনিটের মধ্যে তিনি ভাড়া দিয়ে দেন। বাস ছাড়ার মিনিট দশেক পর সম্ভবত কামারপাড়া পার হলে নির্জন স্থানে তাদেরকে ঘিরে ধনের ৭-৮ জন। তারা ডাকাত বলে জানান। তাদের সবার হাতেই অস্ত্র ছিল। দুই-এক জনের হাতে পিস্তলও ছিল। ডাকাতরা তাদের গলায় ও পেটে ছুরি ধরে জিম্মি করে। শফিকুল আত্মসমর্পণ করে তাদের বলেন, যা আছে নিয়ে যান। কিন্তু কোনো ক্ষতি করবেন না। এরপর ডাকাত দলের সদস্যরা শফিকুলের তিনটি মোবাইল ফোন, দুটি এটিএম কার্ড, দুটি ওয়ালেট, বিকাশ ও কার্ডের পিন নম্বর নেয়। সেই সঙ্গে তাকে বিকাশ থেকে টাকা দিতেও বাধ্য করে ডাকাতরা। সবকিছু নিয়ে ডাকাতরা তাদের চোখ বেঁধে ফেলে, পিছমোড়া করে হাত বাঁধে। 

শফিকুল অ্যাজমা রোগী। হাত-পা-চোখ সব বাঁধা থাকায় তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। দম যেন বন্ধ হয়ে আসছিল। ব্যাগ থেকে ডাকাতদের ইনহেলার দিতে বললেও তারা দেয়নি। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়ায় পানি চাইলে, তাও দেয়নি। মৃত্যুভয়ে শফিকুল শুধু কালেমা পড়ছিলেন। তার মনে হচ্ছিল, বাচ্চাদের মুখ বুঝি আর দেখা হলো না।

আশপাশের লোকজনের গোঙানি শুনতে পাচ্ছিলেন শফিকুল। সব নিয়েও নির্যাতন করছিল ডাকাত দল। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে চন্দ্রার আগে কবিরপুর এলাকায় শফিকুলের বন্ধুসহ বেশ কয়েকজন যাত্রীকে বাস থেকে ফেলে দেয় তারা। এরপর তাকে নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে বিভিন্ন বুথ থেকে টাকা তুলে নেয় আর কথায় কথায় মারধর করে। সারা রাতে অন্তত ৮০টি থাপ্পড় মারা হয়েছে তাকে। ওই বন্ধু পরে শফিকুলের স্বজনদের খবর দেন। একটা সময় বাসটি অনেকক্ষণ থামিয়ে রাখা হয়। এর মধ্যে বাসচালকের হেলপার পরিচয়ে একজন তার চোখ ও হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেন।

ওই ব্যক্তি দাবি করেন, তিনি আসল হেলপার। তিনি আর বাসচালকও ভুক্তভোগী। ডাকাত দলের লোকজন যাত্রী সেজে তাদের বাসে উঠে সেটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিল। জায়গাটি যাত্রাবাড়ীর কাছে বুঝতে পেরে শফিকুল বাসটি যাত্রাবাড়ী থানায় নিয়ে যেতে বলেন চালককে। চালক ও হেলপার প্রথমে রাজি হলেও পরে বলেন, মামলা করলে বাস থানায় আটকে রাখবে। মালিকের সঙ্গে পরামর্শ না করে এ সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারবেন না।

যাত্রাবাড়ী পৌঁছে শফিকুল বাস থেকে নেমে মাতুয়াইলের ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড অ্যান্ড মাদার হেলথ (আইসিএমএইচ) হাসপাতালে যান। সেখান থেকে পরে যাত্রাবাড়ী থানায় গিয়ে পুলিশকে সবকিছু খুলে বলেন। শুনে তারা বলেন, যেহেতু আবদুল্লাহপুর থেকে বাসে উঠেছেন, তাই অভিযোগ দিতে হবে সেখানে। শুনে তিনি উত্তরা পশ্চিম থানায় আসেন। সেখান থেকে অভিযোগের বিষয়ে কোনো সাড়া পাননি। কোনো থানাই যখন দায়িত্ব নিতে চাচ্ছিল না, তখন তিনি বাসায় ফিরে যান।

এসএসএইচ