স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

১৫তম অধিবেশনের মতো চলতি অধিবেশনেও করোনা টিকা কেনার খরচ সংসদে দিতে চাইলেন না স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ‘নন-ক্লোজার এগ্রিমেন্টের’ মাধ্যমে ভ্যাকসিন কেনার কারণে সংসদে অর্থ খরচের হিসাব প্রকাশ করা সমীচীন হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

মন্ত্রী জানান, চীন, ভারত ও কোভ্যাক্স হতে সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামত এবং অর্থ বিভাগ, সিসিজিপি ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনে সর্বোচ্চ সততা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে ভ্যাক্সিন কেনা হয়েছে। 

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) একাদশ জাতীয় সংসদের ষোড়শ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তরে স্বাস্থ্য মন্ত্রী টিকা কেনার খরচ প্রকাশ এড়িয়ে যান। অবশ্য সংসদে না জানালেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত বছর জুলাই মাসে টিকা কেনাসহ কোভিড-১৯ চিকিৎসায় সরকারের ব্যয় গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রচার করা হয়েছিল।

গত বছর ১৮ নভেম্বর জামালপুর-১ আসনের আবুল কালাম আজাদ সংসদের প্রশ্নোত্তরে কোন কোন দেশ থেকে কত সংখ্যক টিকা সংগ্রহ করা হয়েছে সেটার পাশাপাশি এ জন্য কত টাকা খরচ হয়েছে তা জানতে চেয়েছিলেন। এবারও সরকারি দলের একই জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য একই প্রশ্ন করলেন।

তবে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী দুইমাস আগে এ প্রশ্নের যে জবাব দিয়েছিলেন এবারও সেটা দিয়েছেন। এমনকি ওই সময় যত সংখ্যক টিকা দেশে আসার কথা বলেছিলেন আজকের (বুধবার) প্রশ্নের জবাবেও একই সংখ্যক টিকা আসার কথা জানিয়েছেন। অর্থাৎ, মন্ত্রীর দেওয়া জবাব অনুযায়ী গত ১৮ নভেম্বরের পরে দেশে কোনো টিকা আসেনি। অথচ এই সময়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক টিকা আসার তথ্য পাওয়া গেছে।

বুধবার প্রশ্নোত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশ এ পর্যন্ত (১৮ জানুয়ারি ২০২২) ২১ কোটি ১৭ লাখ ৩০ হাজার টিকা সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে কোভ্যাক্সের আওতায় দুই কোটি ৯৭ লাখ ২০ হাজার সিনোফার্ম, চীন হতে ৭ কোটি ৭০ লাখ সিনোফার্ম ও সাত কোটি ৫০ লাখ ১০ হাজার সিনোভ্যাকসহ মোট ১৫ কোটি ২০ লাখ ১০ হাজার এবং ভারত থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি টিকা সংগ্রহ করা হয়েছে।

এর আগে ৯ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে করোনা চিকিৎসার ব্যয় জানানো হয়। ওই বিজ্ঞাপনে বলা হয়, ১ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার ডোজ টিকা কেনা হয়েছে (ওই সময় পর্যন্ত)। প্রতি ডোজ ৩ হাজার টাকা হিসেবে মোট ৩ হাজার ৪৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

ঢাকা-২০ আসনের বেনজীর আহমেদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দেশে এ পর্যন্ত (১৮ জানুয়ারি) আট কোটি ৩৮ লাখ ১৩ হাজার ৬৮৬ জন করোনার টিকা গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এ সময় নয় কোটি তিন লাখ ৯১ হাজার ৮৩৮ জনকে প্রথম ডোজ এবং ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩৮ জনকে দ্বিতীয় ডোজ এবং ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৯শ জনকে বুস্টার ডোজসহ সর্বমোট ১৪ কোটি ৮৫ লাখ ৫২ হাজার ৭৭৬ ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক না থাকায় রেজিস্ট্রেশনের চেয়ে টিকা প্রদান বেশি হয়েছে। 

বেসরকারিভাবে করোনা টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নেই

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ আমিনুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে জাহিদ মালেক জানান, বর্তমানে দেশে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শুধুমাত্র সরকারিভাবে করোনা টিকা প্রদান করা হচ্ছে। বেসরকারি পর্যায়ে কোনো করোনা টিকা প্রদান করা হয় না। বেসরকারি পর্যায়ে করোনা টিকা চালু করার পরিকল্পনা সরকারের আপাতত নেই।

৪২ বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা

জামালপুর-১ আসনের সাংসদ আবুল কালাম আজাদের আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে ঢাকা মহানগরীতে ৩১টি, চট্টগ্রামে ৬টি, ময়মনসিংহে ১টি, রাজশাহীতে ১টি, রংপুরে ২টি এবং খুলনায় ১টিসহ মোট ৪২টি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার কার্যক্রম চলছে।

সরকার দলীয় সংসদ নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতায় সক্ষম দম্পতি প্রায় ২ কোটি ৭৭ লক্ষ ৭৯ হাজার ৩০৫ জন। এই সক্ষম দম্পতিদের মধ্যে পদ্ধতি গ্রহণকারীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি ১৮ লক্ষ ২০ হাজার ৯৮৫ জন এবং পদ্ধতি গ্রহণকারীর হার ৭৮.৫৫ শতাংশ। প্রথম সন্তান জন্মের পূর্বে নবদম্পতিদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণকারীর হার ২.৭৯ শতাংশ।

সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ বেগম লুৎফুন নেসা খানের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের প্রায় শতভাগ হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা আছে। প্রতিটি হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপণের জন্য সরকারিভাবে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপণের সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে সকল হাসপাতালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের সহযোগিতায় নিয়মিতভাবে অগ্নি নির্বাপণের প্রশিক্ষণ ও মহড়া আয়োজন করা হয়ে থাকে।

এইউএ/এইচকে