‘স্বীকৃতি পেলে মরেও শান্তি পাব’
‘স্বীকৃতি পেলে মরেও শান্তি পাব। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও মিলছে না স্বীকৃতি’, এভাবে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শরীয়তপুরের মাহবুব হোসেন মোল্লা।
দেশকে পরাধীনতার গ্লানিমুক্ত করতে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। ৯ মাস যুদ্ধ শেষে মাতৃভূমি স্বাধীনতার লাল সূর্য পেলেও ভাগ্যযুদ্ধে আজ তিনি পরাজিত। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি এই মুক্তিযোদ্ধার।
বিজ্ঞাপন
তিনি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঘড়িষার ইউনিয়নের সুজাবাদ গ্রামের মৃত আলী আশ্রাব মোল্লা ও মৃত মেহেরুন নেছার ছেলে। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে কয়েক বছর ধরে ঘুরে আজ তিনি ক্লান্ত। ক্ষোভ, দুঃখ- কষ্টে তিনি মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন।
মাহবুব হোসেন মোল্লা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২১ মার্চ নড়িয়ার পন্ডিতসার হাই স্কুল মাঠে বাঁশের লাঠি দিয়ে ছাত্র-জনতা ট্রেনিং চালু করেন তিনি। ট্রেনিং পরিচালনা করেন তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা নুরুল হক (সাবেক এমপি)। সে সময় তিনি স্কুলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
পরবর্তীতে ছাত্রলীগ নেতা মো. সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ইউনিয়নের ছাত্র-জনতা ৩০ জন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মেলাঘর ক্যাম্পে যান। ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন আঞ্চলিক অধিনায়ক কর্নেল শওকত আলী (সাবেক ক্যাপ্টেন)। ট্রেনিং শেষে সেপ্টেম্বরের দিকে নড়িয়ার চাকধ বাজারের কাছে আবদুল লতিফ সরদার মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে অবস্থান নেন তারা। তখন প্লাটুন কমান্ডার সাবেদালী মিয়ার (বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত মেজর) সঙ্গে বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন মাহবুব হোসেন মোল্লা। কমান্ডার ও প্লাটুন কমান্ডারের নির্দেশে নড়িয়া, পালং, ভেদরগঞ্জ, গোসাইহাট এলাকায় পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন মাহবুব।
তিনি আরও জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মাদারীপুর মিলিশিয়া ক্যাম্পে অস্ত্র সমর্পণ করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক মোহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর স্বাক্ষরিত সনদপত্র আঞ্চলিক অধিনায়ক কর্নেল শওকত আলী আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে প্রদান করেন। এছাড়া, জামুকার দেওয়া ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি তাকে ‘ক তালিকাভুক্ত’ শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার সুজাবাদ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ৮ নং ক্রমিকে অন্তর্ভুক্ত করে।
২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বরে ‘ক তালিকা’ ৩ সদস্য বিশিষ্ট বাছাই কমিটি তাকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা গেজেট অন্তর্ভুক্ত করেন। ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি ৩ সদস্য কমিটি যাচাই বাছাই করে মাহবুবকে ‘ক তালিকাভুক্ত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট প্রকাশের জন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালকের কাছে পাঠান। তাতেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম যায়নি। সর্বশেষ, ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর পুনযাচাই বাছাই করে ৩ সদস্য কমিটি ‘ক তালিকা’ অন্তর্ভুক্ত মাহবুব হোসেন মোল্লাকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা করে জামুকাতে গেজেট প্রকাশের জন্য পাঠায়।
কয়েক দফা প্রতিবেদন দেওয়ার পরও মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তার নাম আসেনি। আদৌ আসবে কি না, মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবেন কি না তাও জানেন না রণাঙ্গনের এ বীর সেনানী।
এইউএ/এসকেডি