করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ওপর বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। বিধিনিষেধ মোতাবেক, এসব অনুষ্ঠানে ১০০ জনের বেশি মানুষের সমাবেশ করা যাবে না। এছাড়া যারা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তাদের অবশ্যই করোনা টিকার সনদ অথবা পিসিআর টেস্টের নেগেটিভ সনদ থাকতে হবে।

বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, উন্মুক্ত স্থানে ও ভবন অভ্যন্তরে সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ১০০-র বেশি জনসমাবেশ করা যাবে না। এসব ক্ষেত্রে যারা যোগদান করবেন তাদের অবশই কোভিভ টিকা সনদ অথবা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর সার্টিফিকেট আনতে হবে।

আরও পড়ুন- টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ নয়

এই বিধিনিষেধ আগামী ৭ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলেও এতে জানানো হয়।

এদিকে করোনার সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধ আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

আরও পড়ুন- ফ্লাইটে চড়তে দুই ধরনের কোভিড সনদ বাধ্যতামূলক : এমিরেটস

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনা ভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯)-এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও বাংলাদেশে এ রোগের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের জারি করা সব বিধিনিষেধ ও নির্দেশনার সঙ্গে নিম্নবর্ণিত শর্ত সংশোধন করে সার্বিক কার্যাবলী চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো। এই বিধিনিষেধ আগামী ৭ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

নতুন বিধিনিষেধ

১. উন্মুক্ত স্থানে ও ভবনের ভেতরে সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ১০০-র বেশি জনসমাবেশ করা যাবে না। এসব ক্ষেত্রে যারা যোগ দেবেন তাদের অবশ্যই কোভিভ টিকা সনদ অথবা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর সার্টিফিকেট আনতে হবে।

২. সব স্কুল, কলেজ এবং সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কক্ষে পাঠদান বন্ধ থাকবে।

এর আগে ১৩ জানুয়ারি থেকে বিধিনিষেধ আরোপ করে ১০ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে যেসব বিধিনিষেধ আরোপের কথা বলা হয়- 

১. দোকান, শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। 

২. অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারা দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে। 

৩. রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা টিকার সনদ প্রদর্শন করতে হবে।

৪. ১২ বছরের ঊর্ধ্বের কোনো ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের পরে টিকার সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।

আরও পড়ুন- অনলাইনে করোনার টিকা সনদ সংগ্রহ করবেন যেভাবে

৫. স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দরসমূহে স্ক্রিনিং-এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। পোর্টসমূহে ক্রু-দের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতেও দেশের বাইরে থেকে আসা ট্রাকের সঙ্গে শুধু ড্রাইভার থাকতে পারবে। কোনো সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। 

৬. ট্রেন, বাস ও লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সর্বপ্রকার যানবাহনের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে কোভিড-১৯ টিকার সনদধারী হতে হবে।

৭. বিদেশ থেকে আগত যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক কোভিড ১৯ টিকার সনদ প্রদর্শন এবং র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে।

আরও পড়ুন- শহীদ মিনারে প্রবেশে লাগবে টিকা সনদ

৮. স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে দেশের সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। 

৯. সর্বসাধারণের করোনার টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার ও উদ্যোগ নেবে। এক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা গ্রহণ করবে। 

১০. কোভিড আক্রান্তের হার ক্রমবর্ধমান হওয়ায় উন্মুক্ত স্থানে সর্বপ্রকার সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা সমাবেশসমূহ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।

১১. কোনো এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

এসএইচআর/এমএইচএস