বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে সরাসরি পণ্য যাবে ইউরোপের দেশ ইতালিতে। বিষয়টিকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলছেন রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, সরাসরি যোগাযোগে ইউরোপে রপ্তানি বাড়বে; এতে সময় ও অর্থও বাঁচবে।  

শিল্প সংশ্লিষ্ট এবং বন্দরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এতদিন বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য ইউরোপে রপ্তানি হতো অন্য দেশের বন্দর হয়ে। সেখানে অনেকদিন অপেক্ষায় থাকতো হতো বড় জাহাজের বুকিং পেতে। এভাবে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে পণ্য পৌঁছাতে সময় লাগতো ৪০ থেকে ৪৫ দিন, তাছাড়া খরচও বেশি হতো। 

সেসব ঝামেলা দূর করতেই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইতালিতে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে। শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি জেটি-৪ এ নোঙর করেছে সরাসরি ইতালিগামী প্রথম জাহাজ ‘এমভি সোঙ্গা চিতা’। এ জাহাজে ১৬ থেকে ১৭ দিনেই ইতালিতে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশি পণ্য। 

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইতালি থেকে এমভি সোঙ্গা চিতা নামের একটি জাহাজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। জাহাজটিতে প্রায় সাড়ে নয়শ টিইইউএস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কনটেইনার সমতুল্য একক) খালি কনটেইনার রয়েছে। 

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ইতালির এই রুটে সরাসরি যোগাযোগ হবে। জাহাজটি পণ্য  নিয়ে সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যাবে। এতে রপ্তানি পণ্যের ৯৮ শতাংশই থাকবে গার্মেন্টস পণ্য।

চট্টগ্রাম-ইতালি রুটে সরাসরি জাহাজ চালু হওয়ায় কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি চালু হওয়ায় কোনো ট্রানজিট লাগবে না, ট্রান্সশিপমেন্ট লাগবে না। আগে সিঙ্গাপুর হয়ে যেতো হতো। কিন্তু এখন জাহাজটি সরাসরি যেতে পারবে। এতে সময় ও অর্থ দুইই বাঁচবে। 

তিনি আরও বলেন, এমভি সোঙ্গা চিতা জাহাজটিকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে। পণ্য পরিবহন করতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে যাতে সঠিক সময়ে জাহাজটি সঠিক গন্তব্যে যেতে পারে। 

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলক যাত্রায় ইতালি থেকে খালি কনটেইনার নিয়ে পরীক্ষামূলক যাত্রায় চট্টগ্রামে ক্যাপ ফ্লোরেস নামের একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। ইতালির ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার প্রতিষ্ঠান আরআইএফ লাইন এবং এটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্যালিপসো কোম্পানিয়া ডি নেভিগেশন চট্টগ্রাম-ইতালি সরাসরি জাহাজ চলাচলের এ সেবা চালু করছে।

জাহাজটির স্থানীয় প্রতিনিধি রিলায়েন্স শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিকস লিমিটেডের চেয়ার‌ম্যান মোহাম্মদ রাশেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইতালি থেকে এমভি সোঙ্গা চিতা জাহাজটি আজকে চট্টগ্রামে এসেছে। এটি পণ্য নিয়ে সোমবার ইতালির রেভেনা বন্দরের  উদ্দেশে  চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যাবে। এসব কনটেইনারে ৯৮ শতাংশই পোশাক পণ্য থাকবে। সরাসরি জাহাজ চালু হওয়ায় খরচ ৪০ শতাংশ খরচ কমবে। আপাতত বাংলাদেশ থেকে একটি জাহাজ চলাচল করবে। সফল হলে জাহাজের সংখ্যা বাড়বে। 

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে সরাসরি পণ্য পরিবহন চালু হওয়ায় সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে পোশাক শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে পণ্য পরিবহনের সময় অনেক কমে যাচ্ছে।যত তাড়াতাড়ি ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছাবে ততই তাড়াতাড়ি পেমেন্ট পাব। পেমেন্ট সংশ্লিষ্ট জটিলতা সহজ হয়ে যাবে। সরাসরি পণ্য পরিবহনে খরচও অনেক কমে আসবে। খরচ কমলে বিদেশি ক্রেতারা যেমন সুবিধা পাবে, আমরাও সুবিধা পাব। আশা করি, ইউরোপের অনান্য দেশেও বাংলাদেশ থেকে সরাসরি জাহাজ চলাচল ধীরে ধীরে শুরু হবে। 

কেএম/আরএইচ