গণমাধ্যমে প্রতিদিন হাজারও খবর পাঠক-দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। তবে, সব খবরের আবেদন যে দিনশেষে একই রকম থাকে, তা নয়। হাতে গোনা গণমাধ্যমের হাতে গোনা খবরই পাঠক-দর্শককে ছুঁয়ে যায়। অসংখ্য মুদ্রিত পত্রিকা, টেলিভিশন ও নিউজ পোর্টালের ভিড়ে সেই ‘হাতে গোনা’ গণমাধ্যম হয়ে ওঠাও সহজ নয়।

অনেক প্রতিষ্ঠান তো অনেক স্বপ্ন নিয়েই শুরুটা করে। গ্রহণযোগ্যতার শীর্ষে যেতে পারে কটি? শীর্ষস্থান দখলে নিতে কতই না কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়, কাঠখড় পোড়াতে হয়, সময় দিতে হয়। তবে, নিউজ পোর্টাল ‘ঢাকাপোস্ট.কম’ একটু ব্যতিক্রম। মাত্র এক বছরের মধ্যে দেশের অন্যতম শীর্ষ গণমাধ্যম হয়ে ওঠার স্বীকৃতি পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পাঠক-দর্শকসহ বিশিষ্টজনরাই দিয়েছেন এ স্বীকৃতি।

আজ (১৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা পোস্টের প্রথম বর্ষপূর্তি। শুরু থেকে প্রতিদিন নতুন উদ্যমে, নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে বছর পরিভ্রমণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর তরুণ ও উদ্যমী সাংবাদিকরা যেভাবে সবার আগে সর্বশেষ সত্য তুলে আনতে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, সেটা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।

বিদায়ী বছরে (২০২১ সাল) ঢাকা পোস্টের ঝুলিতে জমা পড়েছে নানা অর্জন। অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে এসব অর্জনের ছোট ছোট স্মৃতি ভিড় করেছে ঢাকা পোস্টের সংবাদকর্মীদের মনের আকাশে। আমি নিজেও এসব স্মৃতির অংশীজন। ঝুলি থেকে একের পর এক স্মৃতি বের করে বলতে গেলে কেটে যাবে অনেক সময়।

কোনো একটি গণমাধ্যমের অগ্রগতির পেছনে এক বছর যে খুব বেশি সময় নয়, তা চোখ বন্ধ করেই বলে দেওয়া যায়। যাত্রা শুরুর পর থেকে অক্লান্ত চেষ্টায় প্রতিদিন নিজেকে ছাড়িয়ে গেছে ঢাকা পোস্ট। ছয় মাসের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখযোগ্য স্থানে পৌঁছে গেছে পাঠকের ভালোবাসাকে সঙ্গী করে।

কোভিড-ক্রান্তিতে ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে ঢাকা পোস্ট। সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ সেই শুভযাত্রার সঙ্গী হয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। শুরুর পর থেকে পাঠক-দর্শকদের প্রত্যাশার চাপ মাথায় নিয়ে ঢাকা পোস্ট যখন হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন অনেকেই উৎসাহ দিয়েছেন, পাশে থেকেছেন। বর্ষপূর্তিতে তারাও আমাদের অংশীজন, আগামীতে তারা আমাদের পথচলাকে আরও বেগবান করবেন— এমন প্রত্যাশা রইল।

ঢাকা পোস্টের বর্ষপূর্তিতে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, ‘সত্যের সাথে সন্ধি’— এ স্লোগানকে ধারণ করে অনলাইন গণমাধ্যম ‘ঢাকাপোস্ট.কম’ গত এক বছর ধরে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করে আসছে।’

“‘ঢাকাপোস্ট.কম’ দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তরুণ প্রজন্মের সামনে যথাযথভাবে তুলে ধরার পাশাপাশি দেশ ও জনগণের কল্যাণে তাদের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখবে— এ প্রত্যাশা করি।”

যাত্রার শুরুতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে অনলাইন পত্রিকাটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে জনসম্মুখে তুলে ধরার পাশাপাশি জাতি গঠনে অবদান রাখবে। আমি এ সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সার্বিক সফলতা কামনা করছি।’

ঢাকা পোস্টের বর্ষপূর্তিতে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, “অনলাইন গণমাধ্যম ‘ঢাকা পোস্ট’ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন এবং গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে দেশে সুশাসন, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা ত্বরান্বিত করতে বিশেষ অবদান রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। পেশাদারিত্ব বজায় রেখে ঢাকা পোস্ট দেশ ও দশের কথা বলে মাটি ও মানুষের আরও কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হবে বলেও প্রত্যাশা করি।”

এভাবে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে শুরু থেকে সঙ্গী হয়ে শুভকামনা জানিয়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ। মাঠের কৃষকও যখন ঢাকা পোস্টের জন্য উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন, তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না যে এটি গণমানুষের সংবাদমাধ্যম হয়ে উঠতে পেরেছে।


 
ঢাকা পোস্টের অর্জন

আনুষ্ঠানিক যাত্রার ছয় মাসের মধ্যেই চমক দেখাতে শুরু করে ঢাকা পোস্ট। দুর্নীতি-ভোগান্তিসহ নানা খবরের পেছনের খবর তুলে ধরে জনপ্রিয়তার চূড়ায় পৌঁছায় গণমাধ্যমটি। গত কয়েক মাস ধরে অ্যালেক্সা র‍্যাংকিংয়ে দেশে ঢাকা পোস্টের অবস্থান ছয় নম্বরে। এখনও অবস্থানটি ধরে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বের কোটি ওয়েবসাইটের মধ্যে দুই হাজার ৫৮৪তম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা পোস্ট।

গত এক বছরে ঢাকা পোস্টের সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হয়েছে একের পর এক পালক, সম্মান ও স্বীকৃতি। অর্জনের মাত্রাকে সমৃদ্ধ করেছে মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের বর্ষসেরা রিপোর্টিং পুরস্কার।

‘রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের’ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনের জন্য ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আদনান রহমান পেয়েছেন মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১। একইসঙ্গে জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জসীম উদ্দীন ‘বাল্যবিবাহ’ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনের জন্য পেয়েছেন এ পুরস্কার।

একই বছর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আরাফাত জোবায়ের। ‘শতবর্ষে ঢাবি’ শীর্ষক সিরিজ প্রতিবেদনের জন্য তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। এছাড়া অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আদনান রহমান ও জসীম উদ্দীন পান বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) বর্ষসেরা রিপোর্টিং পুরস্কার।

‘রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের’ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনের জন্য ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আদনান রহমান পেয়েছেন মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১। একইসঙ্গে জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জসীম উদ্দীন ‘বাল্যবিবাহ’ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনের জন্য পেয়েছেন এ পুরস্কার

চলার পথে নিয়মিত অর্জন তো আছেই। ঢাকা পোস্টে গত ১০ জানুয়ারি ‘শিশুদের বিনোদনের কিছুই নেই বাণিজ্য মেলায়’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের পর মেলা কর্তৃপক্ষ শিশুদের জন্য দুটি জাম্পিং হাউজ চালু করে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মাহফুজুল ইসলাম।

আগে ৫০০ টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে এটিএম বুথ ব্যবহার করতে পারতেন ডাচ-বাংলা ব্যাংকের গ্রাহকরা। তবে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নতুন নিয়ম চালু করে যে, নিয়মিত বুথ ব্যবহার করতে হলে জমা রাখতে হবে পাঁচ হাজার টাকা। সাধারণ হিসাবে নিয়মিত এটিএম বুথ ব্যবহার করতে হলে গুনতে হবে বাড়তি চার্জ। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন সাধারণ গ্রাহকরা। এ নিয়ে ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক শফিকুল ইসলাম লেখেন ‘কৌশলে গ্রাহকের গলা চেপে ধরছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক!’ পরে কর্তৃপক্ষ গ্রাহকবিরোধী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।


বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের তহবিলে ৫০০ কোটি টাকার বেশি জমা থাকলেও গত এক বছরে অনুদান দেওয়া হয়েছে মাত্র ১১ কোটি টাকা। তহবিলে এত টাকা থাকলেও শ্রমিকের লাশ দাফনের সময় চাঁদা তুলতে হয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতারা। এক বছরে দেওয়া অনুদানও তুলনামূলক কম বলে অভিযোগ তাদের। এ নিয়ে নিজস্ব প্রতিবেদক শাহাদাত হোসেন রাকিব তৈরি করেন ‘শ্রমিক তহবিলে ৫০০ কোটি টাকা, তবুও লাশ দাফনে তুলতে হয় চাঁদা’ প্রতিবেদনটি। এটি প্রকাশের দুদিন পর নয় কোটি টাকা সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনসার সদস্যদের দায়িত্ব বণ্টন নিয়ে চলছিল অনৈতিক বাণিজ্য। সুবিধামতো স্থানে দায়িত্ব দিয়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হতো মোটা অঙ্কের টাকা। ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক সৈয়দ আমানত আলীর ‘ঢামেক হাসপাতালে কোটি টাকার ‘বিট বাণিজ্য’, নেপথ্যে পিসি আউয়াল!’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরপরই ব্যবস্থা নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আরাফাত জোবায়ের। ‘শতবর্ষে ঢাবি’ শীর্ষক সিরিজ প্রতিবেদনের জন্য তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। এছাড়া অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আদনান রহমান ও জসীম উদ্দীন পান বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) বর্ষসেরা রিপোর্টিং পুরস্কার

এমন সাড়া জাগানো অসংখ্য প্রতিবেদনের উদাহরণ রয়েছে ঢাকা পোস্টের ঝুলিতে। দিন যত যাচ্ছে, ঢাকা পোস্টের পাঠকের মনে ভালোবাসার শেকড় গভীর থেকে গভীরে যাচ্ছে। এ কারণে দেশ-বিদেশে প্রতিদিন লাখেরও বেশি পাঠক-দর্শক ঢাকা পোস্টের সঙ্গে থাকছেন।

বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষী প্রতিদিন সবার আগে সর্বশেষ খবর পেতে যুক্ত হন ঢাকা পোস্টে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোর্টালটির অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। আধুনিক প্রযুক্তিকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিন এগিয়ে যাচ্ছে ঢাকা পোস্ট। সরাসরি সংবাদ প্রচার, মোবাইল জার্নালিজম, মাল্টিমিডিয়ায় এটি এখন শীর্ষে।

গত বছরের ভাষার মাসে দেশের গণমাধ্যমের আকাশে ঢাকা পোস্ট যুক্ত হয় নতুন পালক হিসেবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে শুরু হয়েছিল এর নবযাত্রা। সেদিন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নিউজ পোর্টালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ এবং বাঙালির বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক তথ্যশক্তি হিসেবে শুরু হয় ঢাকা পোস্টের যাত্রা। এ যাত্রা থেমে যাওয়ার নয়।
 
পিএসডি/আরএইচ/এমএআর/