অবৈজ্ঞানিক ও অযৌক্তিক কাজের চাপ এবং গণহারে ব্যাখ্যা তলব ও ডিপি করায় কাজের পরিবশে নষ্ট হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

একই সময়ে দুদক কর্মচারী বিধিমালা , ২০০৮ এর ৫৪ (২) বিধি বাতিলের মাধ্যমে ভীতিমুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। 

রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) কর্মকর্তা-কর্মচারীরের পক্ষ থেকে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বরাবর আবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

আবেদনে বলা হয়, আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মচারী হিসেবে কমিশন কর্তৃক অর্পিত কাজ যাথাযথভাবে সম্পাদনের মাধ্যমে কমিশনের ভিশন-মিশন বাস্তবায়ন ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। অত্যন্ত সীমিত সংখ্যক জনবল হওয়া সত্ত্বেও কমিশনের কর্মচারীদের কর্মনিষ্ঠা, কর্তব্যপরায়নতা ও দায়িত্বশীলতা সর্বজনবিদিত, যার ফলশ্রুতি কমিশনকে দেশের অন্যতম শীর্ষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মর্যাদা দিয়েছে। দেশের অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মতো ন্যূনতম লজিস্টিকস্ সুবিধা কর্মচারীদের সামান্যতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা না থাকার সত্ত্বেও কমিশনের কর্মচারীদের অনুসন্ধান ও তদন্তের মান সর্বজন প্রশংসিত। কর্মচারীদের পেশাগত দক্ষতার কারণে কমিশনের প্রায় ৭০ শতাংশ মামলায় কমিশনের পক্ষে রায় প্রাপ্তির ধারা দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত রয়েছে যা দেশের অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের মধ্যে একটি বিরাট নজির। অথচ আমরা এক মহা অনিশ্চয়তা ও ভীতিকর পরিস্থিতিতে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছি।

আবেদনে আরও বলা হয়, আমরা স্বাধীন কমিশনের কর্মচারীগণ সরকারের রাজস্বখাতভুক্ত শূন্য পদে নিয়োজিত হয়ে কমিশনের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে আমাদের একজন সহকর্মীকে কোনোরূপ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে বিতর্কিত ৫৪ ( ২ ) বিধি প্রয়োগের মাধ্যমে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে । কোনো কর্মচারী অপরাধ করলে দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যায় দুর্নীতি দমন কমিশন কর্মচারী ( চাকুরী ) বিধিমালা , ২০০৮ এর ৩৮-৪৯ বিধিতে উল্লিখিত বিধান অনুযায়ী প্রচলিত নিয়মে চাকরি থেকে অপসারণের সুযোগ থাকার পরও একই বিধিমালার বিতর্কিত ৫৪ ( ২ ) বিধি প্রয়োগ করা হয়েছে; যা অন্যান্য কর্মাচারীদের মধ্যে ব্যাপক অনিশ্চয়তা ও ভীতির সঞ্চার করেছে। সম্প্রতি কমিশনের রিভিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায় স্থগিত করেন অর্থাৎ ৫৪ ( ২ ) বিধি এখনও বিচারাধীন। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বিধিমালার ৩৮-৪৯ বিধিতে ক্ষমতা থাকার পরও একটি বিচারাধীন বিধি প্রয়োগ করে েআত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কমিশনের কর্মচারীকে চাকরি থেকে যেভাবে অপসারণ করা হয়েছে তা নজিরবিহীন।

এ অবস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশন কর্মচারী ( চাকুরী ) বিধিমালা  ২০০৮ এর ৫৪ (২) বিধির বিষয়ে আপিল বিভাগে কমিশন কর্তৃক দায়েরকৃত রিভিশন প্রত্যাহার করে ৫৪ (২) বিধি বাতিলের মাধ্যমে ভীতিমুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণের জন্য অনুরোধ করা হলো।

আবেদনে বলা হয়, কমিশনের কর্মচারীরা অনুসন্ধান ও তদন্তকালে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তদন্তকারীকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে সফল না হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। এতে সফল না হলে অভিযোগ দাখিলসহ অনুসন্ধান ও তদন্তকারীর ক্ষতি করার বহুবিধ হীন পন্থা অবলম্বন করে। এছাড়া আমাদের কার্যক্রম যেহেতু সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে সম্পৃক্ত, সেহেতু পদে পদে আমাদের বিপদের সম্ভাবনা তৈরি হয়। সম্প্রতি আমাদের কাজের ছোট-খাটো ভুল-ত্রুটিকে বড় করে দেখে প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা তলব এবং ব্যাখ্যা পাওয়ার পর ব্যাখ্যা গৃহীত হয়নি মর্মে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হচ্ছে যা অস্বাভাবিক । ইতোপূর্বে ৫টি কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বর্তমান ৬ষ্ঠ কমিশনে অবৈজ্ঞানিক ও অযৌক্তিক কাজের চাপ ( মাসে ৩ টি প্রতিবেদন দেয়ার চাপ) গণহারে ব্যাখ্যা তলব ও ডিপি করায় কাজের পরিবশে নষ্ট হয়ে গেছে । 

একজন তদন্তকারীর নিকট ৪০-৫০টি অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তাধীন থাকার পরও মাসে ৩টি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার অব্যাহত অবৈজ্ঞানিক নির্দেশনা ও চাপিয়ে দেওয়া অন্যান্য কাজের খড়্গে আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। 

এদিকে আজ এক সংবাদ সম্মেলনে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে অপসারণের ১৩ কারণ জানান সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

আরএম/এনএফ