ডা. ফওজিয়া মুসলিম

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সংগঠনের সহ-সভাপতি ডা. ফওজিয়া মুসলিম। শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির অনলাইন সভায় প্রয়াত সভাপতি আয়শা খানমের শূন্য পদে সহ-সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমকে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।

রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানমের দীর্ঘ দিন থেকে অসুস্থ থাকায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ডা. ফওজিয়া।

ডা. ফওজিয়া মোসলেম ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে একজন সংগঠক হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে নারী নির্যাতন প্রতিরোধসহ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই-সংগ্রামে যুক্ত রয়েছেন।

নারী-শিশু নির্যাতন, আইন সংশোধন করে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান, নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানবিক রাষ্ট্র গঠন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এবং মহিলা পরিষদের কার্যক্রমকে গতিশীল করতে তিনি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন।

উল্লেখ্য, গত ২ জানুয়ারি ভোরে আয়শা খানম অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রয়াত নারীনেত্রী আয়শা খানম বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবাধিকার ও প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় সংগঠক।

আয়শা খানম ১৯৪৭ সালের ১৮ অক্টোবর নেত্রকোনার গাবড়াগাতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯-৭০ সেশনে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে মহিলা পরিষদের সঙ্গে যুক্ত হন এবং পরে সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এরপর ২০০৮ সাল থেকে তিনি সংগঠনটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ, আইন সংস্কার আন্দোলনসহ নারী মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। একজন দক্ষ, সংগঠক ও সুবক্তা ছিলেন আয়শা খানম। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তার কণ্ঠ ছিল সোচ্চার। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে অ্যাডভোকেসি ও লবির ক্ষেত্রেও তিনি পারদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী নারী আন্দোলন গড়ে তুলতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।

২০০২ সাল থেকে ৬৮টি সংগঠনের প্লাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির সেক্রেটারিয়েটের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। বৈশ্বিক নারী আন্দোলনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

এ নারী নেত্রী ১৯৯২ সালে ভিয়েনাতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় মানবাধিকার সম্মেলন এবং ১৯৯৫ সালে বেইজিং এ অনুষ্ঠিত ৪র্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন, ২০১১ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত সিডও কমিটির এবং কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অফ উইমেনের (সিএসডব্লিউ) বিভিন্ন অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও ইউএনএসসিএপ, আইডব্লিউআরএডব্লিউ, ইউএনআইএফইএম আয়োজিত বিভিন্ন আঞ্চলিক কর্মসূচিতে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও নারী ইস্যুতে তিনি পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করতেন।

জেইউ/এসএম