ছবি : সংগৃহীত

সাকিব বিশ্রাম চেয়েছিলেন। বিসিবি বিশ্রাম দিয়েছে। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। সবমিলিয়ে সময়ের হিসাবে ৫৩ দিনের বিশ্রাম।

ব্রেকিংটা দেখে ফোন বাজল। অপরপ্রান্ত থেকে কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞাসা, ‘ভাই কে জিতল’?

-মানে। কিসে কে জিতল?

- সাকিব বনাম বিসিবির ‘ম্যাচের’ কথা বলছি!

কি আশ্চর্য! এখানে লড়াইয়ের কথা আসছে কেন? সাকিব তো বিসিবির চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়। নিজ দেশের খেলোয়াড় কি কখনো নিজের বোর্ডের বিরুদ্ধে লড়ে? বোঝাই গেল, সাকিবের বিশ্রাম নিয়ে বিসিবি কী সিদ্ধান্ত নেয়- সেই অপেক্ষায় থাকা অনেকেই এখানে হার-জিতের তত্ত্ব দাঁড় করাচ্ছিলেন।

সাকিবের বিশ্রাম বিষয়ক সমস্যা সমাধানে বিসিবি আপাতত বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। সাকিব যা চেয়েছিলেন, সেই বিশ্রাম পেয়েছেন। বিসিবি তার অনুরোধ রক্ষা করেছে।

সাকিব মোহামেডানকে কথা দিয়েছিলেন, লিগের অন্তত কয়েকটা ম্যাচ খেলে দেবেন। এখন বিসিবি যেহেতু তার বিশ্রাম বাড়িয়ে দিয়েছে তাই মোহামেডানের হয়ে সেই কমিটমেন্ট রাখা হচ্ছে না।

যখন দলের একজন সিনিয়র ক্রিকেটার বলেন, তিনি শারীরিক এমনকি মানসিকভাবেও এখন মাঠে নামতে প্রস্তুত নন, তখন সেই সত্য যাচাইয়ের জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয় না।

কেউ খেলতে না চাইলে তাকে জোর করে খেলিয়ে লাভ নেই। তাই বিসিবি সাকিবের বিশ্রামের আবেদন শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ পর্যন্ত না, আরেকটু বাড়িয়ে দিয়েছে; ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত।

সেই সঙ্গে এটাও পরিষ্কার করে দিয়েছে, এই বিশ্রাম পর্বে সাকিব কোনো ধরনের প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে অংশ নিতে পারবেন না। এমনকি দিন কয়েক বাদে শুরু হতে যাওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগেও না।

এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে সাকিব নাম লিখিয়েছেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে। তবে নাম লেখাই সারা। আপাতত বিসিবির নির্দেশ, এই লিগেও তার খেলা হচ্ছে না। কারণ সাকিবের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্রামের আগেই লিগ শেষ হয়ে যাবে!

সাকিব মোহামেডানকে কথা দিয়েছিলেন, লিগের অন্তত কয়েকটা ম্যাচ খেলে দেবেন। এখন বিসিবি যেহেতু তার বিশ্রাম বাড়িয়ে দিয়েছে তাই মোহামেডানের হয়ে সেই কমিটমেন্ট রাখা হচ্ছে না। লিগে খেলতে না পারলে সাকিব আর্থিকভাবে কিছুটা তো অবশ্যই বঞ্চিত হচ্ছেন।

তবে বিসিবির এই সিদ্ধান্তে সাকিবের এখন অভিযোগ-অনুযোগ করার কোনো উপায় নেই। জাতীয় দলের দায়িত্ব পালনের চেয়ে নিশ্চয়ই ক্লাব ক্রিকেটে সময় দেওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নয়।

বিসিবি সেই স্মার্ট পদক্ষেপই নিয়েছে। ভাত না খাওয়ার জেদ করা অভিমানীর সামনে থেকে তরকারির বাটিও সরিয়ে নেওয়া আরকি!

ক্রিকেটারদের ওপর যেমন বিসিবির প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার রয়েছে, ঠিক তেমনি ক্রিকেট বোর্ডও যেন ক্রিকেটারদের সঙ্গে সামন্ত প্রভুর মতো চাবুকে আচরণ না করে। পক্ষ-বিপক্ষ নয়, ক্রিকেটার এবং বোর্ড বরং একে অন্যের পরিপূরক।

সাকিবের বিশ্রাম চাওয়ার বিষয়ে বিসিবি কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেবে কি না—সেই আশায় যারা কোমর দৌড়ে নেমেছিলেন তাদের দুঃখ বাড়ল। বড় বিতর্ক এবং জটিলতায় না গিয়ে বিসিবি সাকিবের ‘ব্রেক’ বিষয়ক সমস্যার আপাতত ‘ব্রেক’ কষল কূটনীতিক ভঙ্গিতেই।

সাকিবের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই বিসিবি সামনের সংকটও মিটিয়ে ফেলতে চায়। ঝগড়াঝাঁটির কিছু নেই। এখানে কেউ কারো প্রতিপক্ষ নয়। ক্রিকেটারদের ওপর যেমন বিসিবির প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার রয়েছে, ঠিক তেমনি ক্রিকেট বোর্ডও যেন ক্রিকেটারদের সঙ্গে সামন্ত প্রভুর মতো চাবুকে আচরণ না করে। পক্ষ-বিপক্ষ নয়, ক্রিকেটার এবং বোর্ড বরং একে অন্যের পরিপূরক।

শুধু সাকিব না, দলের যেকোনো ক্রিকেটারের ছুটি বা বিশ্রামের প্রয়োজন হতে পারে। পুরো বছর জুড়ে বাংলাদেশ দল কখন কার সঙ্গে কোন ফরমেটের ক্রিকেট খেলবে- সেই ক্রম তালিকা তো বিসিবির কাছেই আছে।

যদি কোনো ক্রিকেটার নির্দিষ্ট কোনো সিরিজ খেলতে না চান, বিশ্রাম চান, তাহলে সেটা তাকে অবশ্যই আগে জানাতে হবে। বিসিবি সেই অনুযায়ী আগেভাগে যেন তার শূন্যতা পূরণের ব্যবস্থা নিতে পারে। তাহলে সিরিজ শুরুর আগে যেন কারো জন্য হাপিত্যেশ করতে না হয়।

৫৩ দিন ক্রিকেট থেকে বিশ্রামের মানে এমন না যে সাকিবকে পুরোটা সময় চেয়ারে বসে কাটাতে হবে। তিনি তার সময়টা তার মতো করে কাটান। ঢাকায় থাকেন, নাকি দুবাই-আমেরিকায়, পরিবারের সঙ্গে থাকেন নাকি বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে-সিদ্ধান্ত এবং আনন্দটা একান্তই তার থাকুক।

সাকিব যাতে শারীরিক এবং মানসিকভাবে পুরোমাত্রায় ফিট হয়ে মে মাসে শ্রীলঙ্কা সিরিজে খেলতে পারেন সেই আশায় রয়েছে এখন বিসিবি। তার আগ পর্যন্ত, উড়ে গিয়ে বার্গারে সস লাগিয়ে কীভাবে খেতে হয়- সাকিব বিষয়ে সেই দৃশ্যেই আমরা আপাতত আনন্দে থাকি!

এম. এম. কায়সার ।। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, রাইজিংবিডি ডটকম ও ক্রিকেট বিশ্লেষক