ছবি : সংগৃহীত

এক.

ছোট্ট শহর—নোয়াখালী। খুব একটা ঐতিহাসিক চিহ্ন এখানে নেই, কাউকে দেখানোর মতো কিছু নেই। অথচ মেঘনার স্তন্যধারায় সঞ্জীবিত, নারকেল-সুপারি, খেজুর, তাল সুশোভিত সমুদ্র শিকড়সিক্ত-সবুজাভ ধানক্ষেতে সমাচ্ছন্ন ছিল একদা। ছোট হলেও তার একটি বিশিষ্ট জীবন ও ইতিহাস আছে।

নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষ আর এর ভাষা নিয়ে দেশের অন্য অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে। নানান মুখরোচক গল্পও প্রচলিত আছে এই জেলাকে ঘিরে। একই সঙ্গে নানা বিদ্রূপ-টিপ্পনীও আছে। এটা তো মানতেই হবে—সারাদেশে তো বটেই, পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নোয়াখালীর মানুষ। এই অঞ্চলের ভাষার সঙ্গে মিশে গেছে গ্রিক, ইংরেজি, ল্যাটিন, পর্তুগিজসহ নানান ইউরোপীয় ভাষা। সেই সঙ্গে আরবি-ফারসি তো রয়েছে। ফলে নানান ভাষার মিশেল এক অনন্য বৈশিষ্ট্যের রূপ নিয়েছে ভাষায়।

পূর্ব-দক্ষিণ বাংলার মেঘনা, যেখানে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে, সেখান থেকে নোয়াখালী বেশি দূরে নয়। কিন্তু ভৌগলিক কারণে কোনো মর্যাদা পায়নি এই শহর। নদী ভাঙনে বড় ক্লান্ত এই শহর। তার সমস্ত ঐতিহ্য কেড়ে নিয়েছে নদী।

এখানে শিক্ষিতরা সকলেই প্রায় সরকারি চাকরিজীবী, উকিল, ডাক্তার, শিক্ষক—অন্যরা ব্যবসা-বাণিজ্য করে। একটা বড় অংশ দেশের বাহিরে থাকে, রেমিট্যান্স জোগান দেয়।

গত শতাব্দীর ত্রিশ দশক থেকে শুরু পঞ্চাশ দশকে নোয়াখালীর মানুষগুলো আতঙ্কগ্রস্ত জীবন-যাপন করেছে। দিনের পর দিন অস্থিরভাবে তারা আশ্রয় হারানোর আশঙ্কায় অবিাহিত করেছে। সাজানো সংসার, ঘরবাড়ি, ঐতিহ্য আর সভ্যতা ধারণে সুস্থির একটি সুদৃশ্য শহরকে নদীর প্রচ- ছোবল থেকে রক্ষা করার জন্য তাদের সেকি ব্যাকুলতা!

সর্বনাশা মেঘনা নদী যেন মানুষের সৃষ্টিকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে চাইছে। সর্বনাশার ছিনিমিনি খেলায় দুর্বিষহ হয়ে উঠলো হাজারও মানুষের জীবন। নদীর উন্মত্ত উচ্ছ্বাসে শত সহস্র সহজ-সরল জীবনের অবসান ঘটলো। ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ প্রকৃতির তাণ্ডবে হলো বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত।

আবার বিক্ষুব্ধ প্রকৃতির আঘাতে আঘাতে জীবনের কঠিন রূপের মুখোমুখি হলো এখানকার মানুষ। জীবনকে জানলো তারা নতুনভাবে। ‘ভাঙন সৃষ্টিকে আটকে রাখতে পারে না’। পৃথিবীর অমর সন্তানেরা আবার জীবনের সজীবতার স্পর্শ খুঁজে পায়।   

মেঘনার অপরিণামদর্শী গ্রাস এখানকার মানুষকে সংগ্রামী করেছে, প্রত্যয়ী করেছে; কিন্তু আটপৌরে করে রেখেছে। কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন এখানকার মানুষ পায়নি। চিরকাল নোয়াখালী অভাগাই থেকেছে।

দুই.

নোয়াখালীকে নিয়ে যখন কেউ কথা বলে, ভালো লাগে। আমার উজ্জ্বল কৈশোর-যৌবন কেটেছে নোয়াখালী। আমার বিকাশের ক্ষেত্র নোয়াখালীকেই আমার ‘গৌরব’ মানি। তবে ইদানীং নোয়াখালী নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, তা ঠিক সুখকর নয়।

আমার ছোটবেলার স্মৃতি—‘নোয়াখালী টাউন হল’। অনেকটা জীর্ণ ছিল। যৌবন হারিয়ে প্রৌঢ়ত্ব তখন। ক্রমশ আরও জীর্ণ হয়ে উঠেছে, শীর্ণ হয়ে উঠেছে। টাউন হল ছিল জার্মান গ্রিক ও রোম সভ্যতার মিশ্রণে অপূর্ব স্থাপত্যকলার নিদর্শন। সেই অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া এখন দুষ্কর।

জেলার ইতিহাসের সঙ্গে টাউন হল অবিচ্ছেদ্য—আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই। মহান মুক্তিযুদ্ধে টাউন হল ছিল কন্ট্রোল রুম—সদর দপ্তর। এখান থেকেই যুদ্ধ নিয়ন্ত্রিত হতো। ৭ ডিসেম্বর স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয় এই টাউন হলে।

২৭-২৮ মার্চেই শুরু হলো ফেনীতে যুদ্ধ। ফেনী ছিল তখন নোয়াখালীর একটি মহকুমা। শত শত পুলিশ-আনসার যুবক আর সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত প্রাক্তন সৈনিকেরা নাম লেখাতে লাগলেন মুক্তিবাহিনীতে। শত শত তরুণ বিশেষ করে আনসার ও পুলিশ ছাত্র-যুবক যুদ্ধে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব।

ট্রাকে করে তারা যাত্রা করে ফেনীর উদ্দেশ্যে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রুটি বানিয়ে গাছের ডাব নিয়ে শত শত গ্রামবাসী টাউন হলে নিয়ে আসছিল। টাউন হলের মেঝে হাজার হাজার রুটিতে সয়লাব হয়ে গিয়েছিল। মানুষের চোখে-মুখে ফুটে উঠলো এক দৃঢ় প্রত্যয়, কেমন করে হানাদার বাহিনীদের তাড়িয়ে বাংলাদেশের বিজয় ত্বরান্বিত হবে।

তখন একটি দেয়াল পত্রিকা বের হলো। নাম—স্বাধীনতা। বিবিসি, স্বাধীন বাংলা বেতার, আকাশবাণীসহ অন্যান্য বেতার থেকে পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ আর নিজেদের পাওয়া খবর দিয়ে সাজানো হলো পুরো পত্রিকা। থাকতো নানাজনের লেখা। থাকতো কন্ট্রোলরুমের প্রতিদিনের ইশতেহার।

প্রতিদিন একটি করে পত্রিকা লিখে টাউন হলের মোড়ে চৌধুরী মিয়ার পানের দোকানের পাশে একটি বোর্ডে টাঙানো থাকতো। খবর কাগজহীন মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিনগুলোতে হাতের লেখা সেই দেয়াল পত্রিকা দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। প্রতিদিন শত শত উৎসুক মানুষ সেই পত্রিকা এসে আগ্রহের সঙ্গে পড়তো।

স্বাধীনতা পরবর্তী টাউন হল জেলার শিক্ষিত সমাজের অবসর বিনোদনের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। একই সঙ্গে এটি হয়ে ওঠে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেরও স্থান। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান উৎকর্ষের শীর্ষে অবস্থান করছিল নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে।

তিন.

কবি বুদ্ধদেব বসু তার লেখা ‘আমার ছেলেবেলা’ নিবন্ধে নোয়াখালী টাউন হল ও পাবলিক লাইব্রেরি প্রসঙ্গে বলেছেন অনেক স্মৃতি। তিনি তার কিশোর বয়সে নোয়াখালী টাউন হলে মঞ্চ নাটকে অভিনয় করে গৌরববোধ করেছেন। পাবলিক লাইব্রেরিতে তিনি নিজে বিভিন্ন বই ও সাময়িকী পড়েছেন বলে লেখায় উল্লেখ করেছেন। তার লেখায়—‘ডরিক-স্তম্ভযুক্ত টাউন হল ছিল নোয়াখালীর সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, প্রমোদভবন।

দক্ষিণের ঘরে বিলিয়ার্ডস, তাসের টেবিল, অন্যদিকে লাইব্রেরি। মাঝের স্তম্ভ হলঘর দেয়াল ঘেঁষে, বুক-সমান উঁচু ডেস্কের উপর পড়ে থাকে সাপ্তাহিক বা অর্ধ-সাপ্তাহিক ‘হিতবাদী’, ‘বঙ্গবাসী’ ইত্যাদি—এক-একটার কাগজ এত বড় মাপের যে পত্রিকা বিছিয়ে একজন সাবালক মানুষ শুয়ে থাকতে পারে।’

চার.

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তাদের সুবিধার্থে এদেশের বিভিন্ন জেলায় টাউন হল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি ছিল তৎকালীন ইংরেজ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আনন্দ-বিনোদনের স্থান। বুদ্ধদেব বসুর কথায় ‘প্রমোদভবন’। সেই সময়ের নোয়াখালী প্রশাসক মি. আগাস্টির ঐকান্তিক চেষ্টা, আন্তরিকতা ও তত্ত্বাবধানে ১৮৯৬ সালে গড়ে ওঠে নোয়াখালী টাউন হল ও পাবলিক লাইব্রেরি।

১৯৩৮ সালে নোয়াখালী শহরের একটি অংশ খরস্রোতা মেঘনার করাল গ্রাসে বিলীন হলে টাউন হল ও পাবলিক লাইব্রেরি শহরের দক্ষিণ শ্রীপুর মৌজার ভুলুয়া জমিদারের কাছারি বাড়ির খাসজমিতে স্থানান্তরিত হয়।

১৯৪৪ সালে শহর সম্পূর্ণ বিলীন হওয়ার পর জেলা শহর চলে আসে মাইজদীতে। আর টাউন হল ও পাবলিক লাইব্রেরি মাইজদী শহরের প্রধান সড়কের পূর্ব পাশে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৬০ সালে যৌথ ব্যবস্থাপনা থেকে পৃথক করা হয় নোয়াখালী টাউন হল ও পাবলিক লাইব্রেরি।

পাঁচ.

কলকাতায় পড়ত জেলার কয়েকজন যুবক। ছুটির সময় ওরা বাড়ি এসে নাটক নিয়ে মেতে উঠত। তাদের সঙ্গে যোগ দিত চাকরিজীবীদের মধ্যে কেউ কেউ। পুরুষেরা তখন দাড়িগোঁফ কামিয়ে মেয়ে সেজে অভিনয় করতেন। শহরের মানুষ, বিশেষ করে মহিলাদের জন্য এসব নাটক ছিল প্রধান অনুষ্ঠান।

টাউন হলে একটা পাকা মঞ্চ ছিল। মেয়েদের জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা ছিল দেড়তলায়। ষাটের দশকে জেলার সমস্ত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এখান থেকে পরিচালিত হতো। কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। নোয়াখালীর আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই টাউন হল।

ছয়.

গত মে মাসে হয়ে গেল ‘নোয়াখালী উৎসব’। বিভিন্ন দেশেও এ উৎসব হচ্ছে। ‘বিশ্বময় নোয়াখালী’ বলে কথা। কিন্তু এই ‘নোয়াখালী’ অবহেলা আর অভাগার চরম নিদর্শন হিসেবে সবসময় থেকে যাচ্ছে। জেলা হিসেবে নোয়াখালী দ্বিশত বর্ষ, এটা গৌরবের।

পুরানো এই জেলা পিছিয়ে আছে অনেক ক্ষেত্রে। তার চাইতে লজ্জা—নোয়াখালী টাউন হল, পাবলিক লাইব্রেরির ভগ্নদশা। যার সঙ্গে এখনকার প্রজন্ম কোনোভাবে সম্পৃক্ত বা পরিচিত হতে পারছে না। টাউন হল-পাবলিক লাইব্রেরি কোনটা তারা জানে না।

যখন জিলা স্কুলের ক্লাস সিক্স কিংবা সেভেনের ছাত্র আমি, নব্বই দশক, টাউন হল ছিল ‘টাউন ক্লাব’। বিদঘুটে এক অন্ধকার সময়। প্রতিদিন এখানে জুয়া খেলা হয়, তাস খেলা হয়। ভেতরে ঢোকাই যেত না। মদ-সিগারেটের গন্ধে দুর্গন্ধময় হয়ে থাকতো। জানতাম না ভেতরে কী হচ্ছে।

মাঝে মাঝে কৌতূহল হতো, একদিন গোপনে ঢুকে দেখলাম, সদাশয় কিছু ‘এলিট’ মানুষ এসব কাজে সম্মোহিত। সেই টাউন হলকে দীর্ঘ আন্দোলন করে পুনরুদ্ধার করা হলো। আমরা সংস্কৃতিকর্মীরা এই আন্দোলন চালিয়ে গেছি। আন্দোলনের ফলাফল কী ছিল! সংস্কৃতিকর্মীদের ‘টাউন হল’ বেশিদিন থাকেনি। সেটিকে বেশিদিন ধরে রাখা যায়নি।

কিছু অনুষ্ঠানাদি হলো। কিন্তু পরিবর্তন হয়নি। স্টেজে খানিকটা আলো ফেরানো হলো। মাথার ওপর কয়েকটা ফ্যান লাগানো হলো। বৃষ্টিতে টিনের চালে ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে পানি পড়তো। সেই তো অনেক দিন আগের কথা। ছোটবেলার অনেক স্মৃতি। এখানে ‘নজরুল উৎসব’ হয়েছে, কবি নাতি খিলখিল কাজী এসেছিলেন। ‘কবিতা উৎসব’ হয়েছিল। যখন বিজয় মেলা করতে পারছিলাম না, এই টাউন হলে আমরা ‘বিজয় উৎসব’ করেছি। রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বিরুদ্ধ সময়ে টাউন হল ছিল।   

রাষ্ট্রক্ষমতা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে টাউন হলের চেয়ারও পরিবর্তন হলো। পরিবর্তন এমন, আবারও জেঁকে বসল টাউন ক্লাবের পুরানো বৈকল্য। আবার সেখানে জুয়ার আসর শুরু হয়েছে। আবার সেই অন্ধকার-কাল। তারপর কেটে গেল দশটি বছর, সংস্কৃতিকর্মীরা সেখানে কোনো অনুষ্ঠান করতে পারেনি। তারা ভুলে গেছে কবে এখানে অনুষ্ঠান করেছে।

এদিকে পাবলিক লাইব্রেরির অবস্থাও ‘প্রেমে মরা জলে ডোবা’র মতো। লাইব্রেরির অনেক মূল্যবান বই নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া, কয়েকদিন আগে জেলার একমাত্র সিনেমা হল ‘রৌশনবাণী’ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এই শহরের বিনোদনের জায়গা সংকুচিতই হচ্ছে। পৌর মিলনায়তন ছিল, সেটিও নাই। ওই মিলনায়তন ভেঙে ফেলার আগে বলা হয়েছিল, আরও আধুনিক মিলনায়তন করা হবে। নোয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল জলিল মিলনায়তনও আজ আধুনিক সংস্কারের দাবি রাখে।       

সাত.

টাউন হল, পাবলিক লাইব্রেরি হচ্ছে একটি জনবলয় বা পাবলিক স্পেয়ার, তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সমাজও নিয়ন্ত্রিত হবে। এই ধরনের জনবলয় সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কেননা জনবলয়ে নানাবিধ চিন্তার মানুষ যখন সংঘটিত হয়, তখন তাদের মধ্যে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সচেতনতা ও অংশগ্রহণ বাড়ে। হেবারমাস (Jürgen Habermas)-এর মতে এটা হলো—‘প্রোডাক্ট অব ডেমোক্রেসি’। সমাজ-রাষ্ট্র-রাজনীতির সঙ্গে শিল্প-সাহিত্যের সম্পর্ক হচ্ছে-শিল্প-সাহিত্যই সময়কে ধারণ করে, মননকে লালন করে ও ইতিহাসকে সঞ্চালিত করে।

নোয়াখালী টাউন হল, পাবলিক লাইব্রেরি—স্বাভাবিক প্রশ্ন জাগে, কে তাদের মা-বাবা। মা-বাবা ছাড়া সন্তানের যে অবস্থা হয়, টাউন হল, পাবলিক লাইব্রেরির অবস্থাও সেরকম। গঠনতান্ত্রিকভাবে জেলা প্রশাসক এই প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বে প্রধান। বারবার তাদের কাছে আবেদন-নিবেদন ছিল এগুলো সংস্কারের। গণমাধ্যমেও লেখালেখি হয়েছে বহুবার। তারা আশ্বস্ত করেছেন, কিন্তু সেই আশ্বস্তের বাণী নীরবে কাঁদছে কেবল।

কার্যত শত বছরের পুরানো নোয়াখালী টাউন হল, পাবলিক লাইব্রেরির মা-বাবা নেই, মৃত্যুশয্যায় কাতরাচ্ছে মুমূর্ষু সন্তানেরা। সংস্কৃতিকর্মীরা, রাজনৈতিক কর্মীরা এনিয়ে জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। তারাও বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো সক্রিয় করে তোলাটা কতোটুকু জরুরি—মুক্তবুদ্ধি চর্চা, মুক্ত সংস্কৃতি কতোটা প্রয়োজন। হয়তো যোগ্য নেতৃত্ব নেই বলে হৃদ গৌরব ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না।

এখানে সংস্কৃতি-রাজনীতিবান্ধব ‘নেতৃত্বের যোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্নটা পুনশ্চ জোরালো। সম্মিলিত মুক্তবুদ্ধি চর্চা, প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মিলিত জনবলয় টাউন হল-পাবলিক লাইব্রেরিকে বাঁচানোর জন্য তথা জনগণের সম্মিলিত ক্ষেত্রকে রক্ষার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। 

হাবীব ইমন ।। সাংবাদিক