ছবি : সংগৃহীত

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছা আর প্রচেষ্টার ফসল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন। সর্বশেষ সংযোজন পদ্মা সেতু। সাথে দু’পাড়ের সংযোগ সড়ক। মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেস ওয়ে অভাবনীয় সৌন্দর্য নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে বাংলার যোগাযোগ ব্যবস্থায়।

ধান-নদী-খাল এই তিনে বরিশাল। বরিশালের মানুষজনের লঞ্চ-ইস্টিমারই ছিলে যোগাযোগের সব ভরসার স্থল। সেখানে ভরসার জায়গা হয়ে গেছে সড়কপথ। যা সুচিন্তিত পরিকল্পনার ফসল।

প্রতিটি সরকার তার সময়কালে অনেক ঘটনাকে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে দিয়ে যায়। আলোচনা-সমালোচনা থাকবেই। ভালো কাজের আলোচনা হবে আবার খারাপ বা মন্দ কাজের সমালোচনা হবে এটাই স্বাভাবিক।

সমালোচনাকে গ্রহণ করার মানসিকতা থাকতে হবে। সমালোচনা থেকে নিজেকে শোধরানোর সুযোগ থাকে। সমালোচনাকারীরা কখনোই প্রতিপক্ষ না। সমালোচনার মাধ্যমে নিজেদের ভুলগুলোকে শোধরানো যায়।

সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যদি প্রগতি সরণি, রোকেয়া সরণি কিংবা পান্থপথের মতো সড়কগুলো না করে যেতেন তাহলে মেগা সিটির ঢাকা হয়ে উঠতো বসবাসের অযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। ঢাকাবাসী রাষ্ট্রপতি এরশাদকে উল্লেখিত সড়কগুলোর জন্য মনে রাখবে আজীবন। 

আরও পড়ুন : মহামারিতে তারুণ্যের সংকট ও সমাধান 

মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস, পূর্বাচলের ৩০০ ফুট এক্সপ্রেস ওয়ে, বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, কর্ণফুলী টানেল প্রত্যেকটি মেগা প্রজেক্ট। এসব প্রজেক্টকে আলোর মুখ দেখাতে সরকারের সম্মিলিত পরিকল্পনার মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে। কাজের বৃহদাংশ প্রায় শেষ পর্যায়ে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অনেক আলোচনা সমালোচনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলা এক মহা কর্মযজ্ঞ। এসব প্রকল্প বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতিচিত্র হয়ে ফুটে উঠছে।

করোনা মহামারি থেকে সারা বিশ্ব একটি শিক্ষা পেয়েছে, তা হচ্ছে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। অধিক জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশ। করোনা মহামারিতে নানাভাবে দেশের জনগণকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল সরকার। ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েই দেশের জনগণ করোনা মহামারি থেকে অনেকটা পরিত্রাণ পেয়েছে।

যেকোনো অস্থির পরিস্থিতি থেকে মুক্তি লাভের জন্য নিজেদের সক্ষমতার উপর কিছু নেই। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানি নির্ভর হয়ে ওঠার কৌশল নিতে হবে নীতি নির্ধারকদের। মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দেশের সার্বিক অর্থনীতির উপর প্রভাব পড়বে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুধু বাংলাদেশ নয় সারাবিশ্বই নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমদানি নির্ভরতা কমানোর কোনো বিকল্প নেই, তথাপি কোনো পণ্য বা দ্রব্যাদি কিংবা শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে কোনো দেশের উপর চরম নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প হাতে রাখা উচিত। না হলে বিশ্বের অনেক দেশই শ্রীলঙ্কার মতো উদাহরণ হয়ে উঠবে।

টাকার মান কমে যাওয়া, রিজার্ভ কমে যাওয়া, বিশ্ব বাজারে ইউরোর মান সর্বনিম্ন হওয়া, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া, জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্য হওয়া। বৈশ্বিক পরিস্থিতির সাথে আর্থ সামাজিক মানদণ্ড ব্যালেন্স করে চলা।

আরও পড়ুন : সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা ও কিছু প্রাসঙ্গিক ভাবনা 

২০২৪ সাল থেকে ইন্টারেস্টসহ কিস্তির অর্থ পরিশোধ করার শিডিউল। তার ওপর সামনে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা যেন বাংলাদেশের স্বাভাবিক নিয়মের মধ্যেই পড়ে।

দেশ গঠনে অর্থনীতিবিদেরে আলোচনা-সমালোচনাকে অগ্রাহ্য না করে গুরুত্ব বিবেচনায় মতামতকে অগ্রাধিকার দিয়ে বলিষ্ঠ অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তোলার পথ সুগম করলে দেশ লাভবান হবে।

প্রতিটি ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনা সব ক্ষেত্রেই ব্যবসায়ীদের জয়জয়কার। সব সময়কেই পুঁজি করে লাভের খাতাকে ভারী করা। একশ্রেণির সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা জনগণকে কূটকৌশলের মাধ্যমে নিষ্পেষিত করা।

গরিব আর মধ্যম শ্রেণির নাগরিকদের আয় আর ব্যয়ের তারতম্যের ব্যবধান বাড়তে থাকা। এর কারণ একটাই মূল্যস্ফীতি। সাধারণ জনগণ মূল্যস্ফীতি বোঝে না, যুদ্ধবিগ্রহ বোঝে না, মেগা প্রজেক্ট বুঝতে চায় না। চায় শুধু আয়ের সক্ষমতার সাথে দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা।

সরকারকে সাধারণ জনগণের পালস বুঝে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সিদ্ধহস্ত হতে হবে। গণতান্ত্রিক দেশে রাজনীতিবিদদের দেশ পরিচালনায় এগিয়ে আসতে হবে।

রাজনীতিবিদ নয় এমন একশ্রেণির কর্তা ব্যক্তিরা দেশ পরিচালনায় উচ্চ আসনে থাকলে জনবিবর্জিত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারে, কারণ একটা জনগণের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই, যেটা আছে রাজনীতিবিদদের।

আরও পড়ুন : প্রবৃদ্ধি বনাম টেকসই উন্নয়ন 

বাংলাদেশ গঠনে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা কিংবা সিদ্ধান্ত ছিল পাহাড়সম। জনগণের ছিল নেতৃত্বের প্রতি অগাধ বিশ্বাস। কারণ হিসেবে জনগণের প্রতিনিধি মনে করতো রাজনীতিবিদদের।

কালের পরিক্রমায় রাজনীতিবিদদের তকমা লাগিয়ে এক শ্রেণির সুবিধাভোগী আজ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছে। জনগণের পালস না বুঝে বক্তব্য দিয়ে ফেলছে। জনগণের সরকার মানেই জবাবদিহিতার সরকার। রাজনীতিবিদ জনগণের কাছে জবাবদিহি করে থাকেন।

যেকোনো সিদ্ধান্তে সমালোচনা আসতে পারে, তা গ্রহণ করার মানসিকতা থাকতে হবে। সমালোচনাকারীরা কখনোই প্রতিপক্ষ নয়, তারা একটি ছায়া সিদ্ধান্তকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়ে থাকে।

মো. কামরুল ইসলাম ।। মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স