ছবি : সংগৃহীত

কক্সবাজার বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন গন্তব্য। ঢাকা থেকে খানিকটা দূর। আকাশপথে যেমন যাওয়া যায় তেমনি সড়কপথেও যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। আকাশপথে ঢাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৭টি ফ্লাইট পরিচালিত হয় এ রুটে। 

ঠিক তেমনি চট্টগ্রাম একাধারে বাণিজ্যিক শহর, পর্যটন শহর। চট্টগ্রামের চারিদিকে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবেষ্টিত পার্বত্য জেলা। ঢাকা থেকে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টায় সড়ক পথে যাতায়াত করা যায় এ জেলায়।

শতশত বাস চলাচল করছে প্রতিনিয়ত, সকাল বিকেল রাত নিয়ম করে সারাদিনই লোকাল, মেইল কিংবা ইন্টারসিটির আধুনিক ট্রেনও চলাচল করছে। আবার আকাশ পরিবহনের আধিক্য দেখা যায়।

আরও পড়ুন : মানবিক বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

দেশে কার্যরত প্রায় সব এয়ারলাইন্স প্রতিদিন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে সবমিলিয়ে ২০টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সিলেটে ঠিক যেন চট্টগ্রামের মতোই যোগাযোগ ব্যবস্থা। দূরত্ব প্রায় একই। সড়ক, রেল, আকাশ পরিবহনে যাতায়াত করা যায়। 

সারাবিশ্বে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আকাশ পরিবহন, রেল ও সড়ক পরিবহন কিংবা জলযানের উপস্থিতি দেখা যায়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আকাশপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা অপ্রতুল। ৬৪টি জেলার মধ্যে মাত্র ৮টি জেলা শহরে রয়েছে বিমানবন্দর। সেই ৮টির মধ্যে মাত্র ৩টি বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক

অথচ বাংলাদেশের ১৬ কোটি ৫১ লাখের বেশি জনসংখ্যার জন্য যা খুবই অপ্রতুল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশি আছেন যারা প্রবাসে থাকেন। আর সারা বছর বিভিন্ন কাজের জন্য কিংবা পর্যটক হিসেবে ভ্রমণ করে থাকেন ২ থেকে ৩ লাখ বাংলাদেশি।

আরও পড়ুন : এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচাবে কে? 

সারাবিশ্বের সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে আকাশ পরিবহনে দুর্ঘটনার হার নিতান্তই কম। আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে সুরক্ষিত থাকে আকাশপথ। সময় বিবেচনায় আকাশ পরিবহন কোনোভাবেই অন্য কোনো পরিবহনের সঙ্গে তুলনা করা চলে না।

আকাশ পরিবহনের তুলনা আকাশ পরিবহনের সঙ্গেই করা যায়। তুলনায় সাধারণত বিভিন্ন এয়ারলাইন্স এর মধ্যে সার্ভিস কম্পিটিশন হতে পারে। ইন-ফ্লাইট সার্ভিস প্রতিযোগিতা হতে পারে। ভাড়া নির্ধারণে তারতম্য দেখা যেতে পারে।

এভিয়েশনে সাধারণত গ্রীষ্ম ও শীতকালীন দুটি ফ্লাইট সূচি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। আমাদের দেশে শীতকালীন সময়ে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকায় শীতকালকে এভিয়েশনের পিক টাইম হিসেবে গণ্য করা হয়। বিপরীতভাবে গ্রীষ্মকালকে অফপিক হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই সময় যাত্রীদের ভ্রমণের হার কম থাকে। 

আরও পড়ুন : নিরাপদ ভ্রমণ মানেই বিমান ভ্রমণ  

যাত্রী বৃদ্ধির হার সব রুটে সবসময় এক রকম থাকে না। এভিয়েশনে লাভজনক এক রুটের ব্যবসা দিয়ে অন্য রুটের ভর্তুকি দেওয়া একটি সাধারণ বিষয়। এভিয়েশন বিজনেস পলিসি নির্ধারিত হয় অনেক ক্যালকুলেটিভ উপায়ে।

কোনো রুটের যাত্রী বৃদ্ধির হার কোনো বিশেষ কারণে কমে যেতে পারে। যাত্রীদের কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের জন্য সাময়িক পছন্দের বিষয় পরিবর্তন হতে পারে। তাতে ব্যবসায় স্বল্পকালীন ব্যবসায়িক নীতি নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। 

সাময়িক পরিস্থিতির কারণে কোনো রুট বন্ধ করে দেওয়া কিংবা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা বা ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া সেই রুটের যাত্রীদের কাছে বিশ্বস্ততা হারানোর সম্ভাবনা থাকে।

যেকোনো রুটে ফ্লাইট পরিচালনা কিংবা সেবা দেওয়া আকাশথের যাত্রীদের কাছে একটি কমিটমেন্ট। সাময়িক পরিস্থিতির জন্য যাত্রীদের সেবা দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা কমিটমেন্ট পুরোপুরি না রাখার শামিল হয়ে পড়বে।   

আরও পড়ুন : আকাশপথের বিস্তৃতি, দেশকে করে তুলবে সমৃদ্ধ   

২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগের একটি নতুন দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। তার মানে পদ্মা সেতুই একমাত্র দ্বার নয়। বরিশালের জনগণের একসময়ের প্রধান বাহনই ছিল লঞ্চ কিংবা স্টিমার। সপ্তাহে দু’টি ফ্লাইট পরিচালিত হতো আকাশপথে।

যাত্রী চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিদিন চারটি থেকে পাঁচটি ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। যেখানে রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টায় কিংবা জলপথে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টায় বরিশাল পৌঁছানো যায়। সেখানে আকাশপথে মাত্র ২০ থেকে ২৫ মিনিটে বরিশালে দিনের যেকোনো সময় যাতায়াত করা যায়। 

ভ্রমণ করার সময় আয়ের সক্ষমতা কিংবা সময় বা নিরাপত্তা সব কিছুই বিবেচনায় থাকে একজন যাত্রীর। আয়ের সক্ষমতা আর সময়ের স্বল্পতার কারণে অনেকেই আকাশপথে ভ্রমণ করে থাকেন। 

আরও পড়ুন : বাংলাদেশে এভিয়েশনও একটি শিল্প! 

বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। যেখান থেকে সূর্যোদয় ও অস্ত যাওয়া উভয়েই উপভোগ করা যায়। কুয়াকাটাকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যাচ্ছে পুরো বরিশালজুড়েই।

নিকট ভবিষ্যতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বরিশাল ও কুয়াকাটা যাতায়াতের জন্য নির্ভরযোগ্য ও কম সময়ের পথই হবে আকাশপথ। যাত্রীদের আস্থা ও নিরাপদ ভ্রমণে নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠা আকাশপথেও ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে।

সময় আর যাত্রী নিরাপত্তা বিবেচনায় প্রতি মূহূর্তে যেকোনো পরিবহনের চেয়ে আকাশ পরিবহনই সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সবচেয়ে জনপ্রিয় ও নিরাপদ হয়ে উঠছে।

মো. কামরুল ইসলাম ।। মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

জেডএস