ছবি : সংগৃহীত

‘আমরা ঢাকা আসি ১৯৫২ সালে। ভাষা আন্দোলনের সময় আব্বা তখন জেলে আমার দাদা সিদ্ধান্ত নিলেন আমাদেরকে নিয়ে তিনি ঢাকায় যাবেন। আমার ছোটভাই কামাল তখন বেশ ছোট। আমরা প্রথমবার ঢাকায় নৌকাতে করে গিয়েছিলাম। আমাদের দাদার বিরাট নৌকা ছিল, তাতে ছিল দুই কামড়া। চারদিন লেগেছিল সেই জার্নিতে। নৌকাতেই রান্না-বান্না হতো, নৌকাতেই খাওয়া দাওয়া। যখন নদীতে ঝড়-বৃষ্টি আসতো নৌকা দুলতো দাদি আমাদের দুই ভাইবোনকে জড়িয়ে ধরে রাখতেন। আজও সেই স্মৃতি মনে পড়ে।’

কথাগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার; যেখানে তিনি মাত্র ৫ বছর বয়সের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে রেখেছেন, যখন তার বয়স আজ ৭৬। একজন মানুষ যতদিন বেঁচে থাকেন; ততদিন তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো তার ‘জন্মতিথি’। সেদিন ছোট ছোট স্মৃতি ভিড় করে তার মনের দক্ষিণের জানালায়।

শেখ হাসিনাও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়, তবে পার্থক্য এতটুকু—অন্য অনেকের মতো তিনি শুধু নিজেকে নয়, দেশ-দুনিয়া নিয়েও ভাবেন। ভাবতে পছন্দ করেন। এমনি এক স্মৃতিচারণায় তিনি বলেছিলেন,

‘কী পেলাম আর কী পেলাম না সে হিসাব মেলাতে আমি আসিনি। কে আমাকে রিকগনাইজ করলো আর কে করলো না, সে হিসাব আমার নাই। একটাই হিসাব, এই বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে কিছু কাজ করতে পারলাম কি না, সেটাই আমার কাছে বড়।’

আরও পড়ুন : শেখ হাসিনা : মানবিক বোধসম্পন্ন যিনি 

এই কথাগুলো থেকেই অনুমান করা যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জীবন ছিল সংগ্রামমুখর; যার সূত্রপাত ঘটেছিল সেই ছেলেবেলা থেকেই। শৈশব ও কৈশোর ছিল তার পিতার স্নেহ ভালোবাসাবিহীন, কেটেছে পিতাকে কারাবন্দি দেখে দেখে।

বঙ্গবন্ধু যখন কারামুক্ত হয়ে বাড়ি আসতেন; তখন শেখ হাসিনার উচ্ছ্বাসই বলে দেয়, ভালোবাসাহীন কত বঞ্চনায় কেটেছে শেখ হাসিনার শৈশব। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে উল্লেখ, ‘একদিন আমি আর রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে বসে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর আব্বা আব্বা বলে ডাকে।’ এই স্মৃতির মাঝেই লুকিয়ে আছে কত হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা আর পিতার স্নেহ হতে দূরে থাকা সন্তানের আকুতিভরা ডাক।

ক্ষণজন্মা এই বঙ্গকন্যা জন্মেছিলেন বঙ্গবন্ধুর সেই নিভৃত পল্লি গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায়, যখন ১৯৪৭ সালে বাঙালি মুসলমানেরা বহু স্বপ্ন নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শেখ হাসিনার ব্যক্তি-জীবনে তার গ্রাম টুঙ্গিপাড়া যে মায়াবী ভূমিকা রেখেছে, আমরা তারই ছোঁয়া পাই তার প্রবন্ধ-সাহিত্যে।

স্মৃতির দখিন দুয়ার প্রবন্ধে তিনি শিল্পীর নিপুণ তুলিতে মানসপটে এঁকেছেন তার শৈশবের দিনগুলো। এ যেন বাংলা সাহিত্যের আরেক বিভূতিভূষণ। যিনি অপু-দুর্গার নিশ্চিন্দপুর গ্রামকে তুলে এনেছেন টুঙ্গিপাড়ায়। মাঠ, ঘাট পুকুর পাড়, আমের মুকুল, ভাঁটফুল কী নেই তার বর্ণনায়। কিছুটা শুনি এই বর্ণনাতেই—

‘গ্রামের বড় তালাবের (পুকুর) পাড়ে ছিল বিশাল এক বরই গাছ। ঝাঁকুনির ফলে লালের আভা লাগা সব থেকে টলটলে বরইটা পুকুরের গভীরে পড়ত এবং কারো পক্ষে যখন সেটা তুলে আনা সম্ভব হতো না। তখন সেই বরইটার জন্য মন জুড়ে থাকা দুঃখটুকু এখন ভুলতে পারলাম কই?’ সেদিন কে জানত, এই লাল বরই না পাওয়ার দুঃখে কাতর কিশোরীই হবে একদিন এই জাতির কাণ্ডারি!

আরও পড়ুন : অসাম্প্রদায়িক জাতির দেশ 

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হওয়ার পর সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় আসেন শেখ হাসিনা। পুরান ঢাকার মোগলটুলির রজনী বোস লেনে বসবাস শুরু করেন তারা। পরে বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য নির্বাচিত হলে ৩ নম্বর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে ওঠেন।

১৯৫৬ সালে টিকাটুলীর নারী শিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন শেখ হাসিনা। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে বসবাস শুরু করে জাতির পিতার পরিবার। ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন শেখ হাসিনা। নিজের সময়ের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেছেন—

‘৬২ সাল থেকে যখন আজিমপুর স্কুলে পড়তাম, স্কুলের হেডমাস্টার সাহেব খুব কড়া ছিলেন। তাই অনেক সময় দেয়াল টপকে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসতাম মিছিল-মিটিংয়ে যোগ দিতে।’

১৯৬৭ সালে ঢাকার বকশী বাজারের ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এই কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভানেত্রী (ভিপি) পদে নির্বাচিত হন।

তিনি এই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরের বছর সভাপতি ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই নেতৃত্ব দিতে পছন্দ করতেন শেখ হাসিনা। কাউকে ভয় পেতেন না। শেখ হাসিনা ছোটবেলা থেকেই যা বিশ্বাস করতেন, তাই করতেন। সামরিক শাসক আইয়ুব খান দেশে মৌলিক গণতন্ত্র চালু করেছিল। তখন ‘সমাজপাঠ’ নামে একটি বইতে এসব পড়তে হতো।

ক্লাস নাইনে সমাজপাঠ পরীক্ষার খাতায় প্রশ্নের উত্তর লিখতে গিয়ে শেখ হাসিনা ‘মৌলিক গণতন্ত্র’র কঠোর সমালোচনা করে অনেক কিছু লিখে দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা যে খুবই দৃঢ়চেতা ছিলেন এটা তারই প্রমাণ।

আরও পড়ুন : রাজনৈতিক সম্প্রীতির দেশ! 

এবার আমরা দেখি জাতির কর্ণধার-রূপী শেখ হাসিনাকে। তিনি বাংলাদেশের স্থপতির উত্তরসূরি। আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী। নব্বইয়ের দশকের সূচনালগ্নে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী। তিনিও বঙ্গবন্ধুর মতো এই বাংলার মাটি, জল, হাওয়া, ধুলোয় বেড়ে ওঠা মানুষ।

টুঙ্গিপাড়ার পাঠশালা থেকে টিকাটুলী নারী শিক্ষার মন্দিরে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতেখড়ি। ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক আর ১৯৬৭ সালে বদরুন্নেসা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হন।

এরপর সাহিত্যিক মুনীর চৌধুরীর একান্ত উৎসাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। আর এই সময়টাই ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের মাইলফলক স্পর্শের দিনগুলো। যখন বাঙালি জাতি পেয়েছিল ৬-দফার মতো জাতীয় জীবনের লক্ষ্য আর বঙ্গবন্ধুর মতো একজন গতিশীল সম্মোহনী রাজনৈতিক নেতা। তাই তো ৬-দফা ও আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলনে ১১-দফায় বাঙালি ছাত্র-যুবক প্রাণ সঞ্চার করল।

মওলানা ভাসানীকে মিছিলের সামনে রেখে আইয়ুব-মোনায়েম চক্রকে হুঙ্কার দিল—‘জেলের তালা ভাঙ্গব, শেখ মুজিবকে আনব’। আগরতলা মামলার প্রহসন ও ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান প্রত্যক্ষ করেছিলেন একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে। এর মাঝে বঙ্গবন্ধু যখন ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে রাজবন্দি হিসেবে আটক, তখন বঙ্গবন্ধু একান্ত আগ্রহে ১৯৬৮ সালে শেখ হাসিনা বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ মিয়ার (সুধা মিয়া) সঙ্গে পরিণয়ে আবদ্ধ হন।

১৯৭১ সালে ৭ মার্চের ভাষণ তিনি রেসকোর্স ময়দানে বসে প্রত্যক্ষ করেছেন সমগ্র জাতির সঙ্গে। এ যেন রাজনীতির কবির এক অতি উৎসাহী ভাব শিষ্যা। এরপর ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস। ১৯৭৫ সালের সেই হত্যাকাণ্ডে ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধু পরিবারের সব প্রদীপ নিভিয়ে দিতে চাইল; কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে থাকল শেখ হাসিনা।

২০২১ সালের জার্মানির প্রবাসী সাংবাদিক সরাফ আহমেদ একটা বই লিখেছেন ‘প্রবাসে বঙ্গবন্ধুর দু’কন্যার দুঃসহ দিন’। বইয়ের প্রতিটি পাতায় বর্ণনা দেওয়া হয়েছে ভারতের দিল্লিতে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত পশ্চিম জার্মানি ও বেলজিয়াম ২২ দিনের শরীর হিম করা সেই দিনগুলোর কথা। অন্য এক লেখায় পেয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠকন্যা শেখ রেহানা তার আলাপচারিতায় উল্লেখ করেছিলেন—

“আগস্টের সেই ১৩ তারিখে (১৯৭৫ সালে) জার্মানিতে সিনেমা হলে গিয়ে একটা ছবি দেখেছিলাম আমরা, ‘মার্ডার অন দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস’ (Murder on the Orient Express)।”

আরও পড়ুন : আমি তোমাদেরই লোক 

কীভাবে ষড়যন্ত্র করে মারা হয়, আর কীভাবে তার প্রতিশোধ নেওয়া হয়, সিনেমাটা ছিল সেই ঘটনার ওপর। গায়ে কাঁটা দিয়েছিল যে, মানুষ কী নৃশংসভাবে ষড়যন্ত্র করতে পারে। পরেও আমাদের গায়ে কাঁটা দিয়েছে এই ভেবে যে আমাদের জীবনের সাথেও ছবিটির হত্যা-ষড়যন্ত্রের কী গভীর যোগ ছিল।

লন্ডন ও দিল্লিতে ছয় বছরের নির্বাসন সমাপ্ত করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা; যা মনে করিয়ে দেয় ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর সেই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে। এসেই হাল ধরলেন পিতার অসমাপ্ত কাজের। ১৯৮১-৮৬ সাল পর্যন্ত সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা। ১৯৯১-এ দলীয় সাফল্য। অবশেষে ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো দেশ সেই বার শপথ।

প্রথম মেয়াদে (১৯৯৬-২০০১) সর্বপ্রথম করলেন জাতির পিতার হত্যার বিচারের সকল বাধা অপসারণ। একে একে করলেন ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি (১৯৯৭), পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি (১৯৯৮) ও মাতৃভাষা বাঙলার স্বীকৃতি আদায় (১৯৯৯)। দ্বিতীয় মেয়াদে (২০০৮-১৩) তিনি আর একধাপ এগিয়ে গেলেন। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, প্রবৃদ্ধি অর্জন, বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ, জাতীয় শিক্ষানীতি, সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করলেন।

দ্বিতীয় মেয়াদের সবচেয়ে বড় সাফল্য ভারত মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তি। দেশের সার্বভৌমত্বকে দিলেন পূর্ণতা আর জাতিসংঘের মানুষকে দিলেন শান্তির মডেল। বাংলাদেশ হলো শান্তির সংস্কৃতির প্রবক্তা।

তৃতীয় মেয়াদে (২০১৩-১৮) শেখ হাসিনা সরকারের সবচেয়ে বড় অবদান ৬৮ বছরের ভারত-বাংলাদেশের ছিটমহল সমস্যার সমাধান। সেই সাথে পদ্মাসেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও তা নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি করার সাহস দেখিয়ে বিশ্বকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ‘বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হলে অসাধ্য সাধন করতে পারে।’

সর্বশেষ ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উল্লেখ করলেন, ‘২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হতে যাচ্ছে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশে রূপান্তরিত করার জন্য এবং ২১০০ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ ও জলবায়ু-সহিষ্ণু বদ্বীপে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’

দেশের শক্তিশালী অর্থনীতির কথা তুলে ধরে তিনি এ-ও বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম। জিডিপির হিসাবে আমাদের অবস্থান ৪১তম। এক দশকে আমরা দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ২০.৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।

আরও পড়ুন : তরণী চলছে শুভ লক্ষ্যে 

আমাদের মাথাপিছু আয় মাত্র এক দশকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের পূর্বে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। এর আগে, আমরা টানা তিন বছর ৭ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। মহামারি চলাকালে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ হারে প্রসারিত হয়েছে।’

করোনা মোকাবিলা করে বাংলাদেশ কীভাবে মৃত্যুহার কমিয়ে এনে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে সমুন্নত রেখেছেন, সেই স্ট্র্যাটেজির কথাও উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উল্লেখ করেছেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি শুরু থেকে এক সংকট মোকাবিলায় আমরা মূলত তিনটি বিষয়ের দিকে লক্ষ রেখে কৌশল নির্ধারণ করেছি। প্রথমত, মহামারি সংক্রমণ ও বিস্তার রোধ করতে আমরা জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রসারিত করেছি। দ্বিতীয়ত, আমাদের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখতে কৌশলগত আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করেছি এবং তৃতীয়ত, আমরা জনগণের জীবিকা সুরক্ষিত রেখেছি।’

শেষ করব, তার আগে ছোট্ট একটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই। ১৯৯৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব ল ডিগ্রি’তে ভূষিত করে। এই উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট জন্ ওয়েসলিং একটি ‘সাইটেশান’ পাঠ করেন। যার একাংশ ছিল এমন—

‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ। আপনার পিতা বাংলাদেশের জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। আর আপনিও বারবার নিজের স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়ে এবং নিজের জীবনকে বিপন্ন করে দেশে গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম ঘটিয়েছেন।

আরও পড়ুন : সম্প্রীতি কোথায়? 

.... যে বছর আপনি জন্মগ্রহণ করেন, সেই বছর জনগণ ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হলেও পাকিস্তানের নাগপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেনি। সেই কারণে আপনার পিতা সিকি শতাব্দী ধরে বাংলার স্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলন করেন। কিন্তু তাকে ও তার জনগণকে একসঙ্গে স্বাধীনতার ফল ভোগ করার সুযোগ বেশিদিন দেওয়া হয়নি। যেসব অফিসার আপনার পিতা, মাতা ও তিন ভাইকে হত্যা করেছে, তারা ভেবেছিল, বাংলার মানুষের প্রতি আপনার পরিবারের সেবা-ভালবাসার সুযোগ তারা খতম করে দিয়েছে এবং দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আশা সুদূরপরাহত করতে পেরেছে। কিন্তু আপনাকে তারা গণনায় আনতে ব্যর্থ হয়েছিল।’

সত্যিই তাই। কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে তিনি আজ সফল। গণতন্ত্র এবং দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায়ও ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। বর্তমানে তার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণে নিয়োজিত।

১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে মানিক মিয়া এ্যাভিনিউতে দেওয়া ভাষণে প্রথম যে দুটো বাক্য শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তা হলো—‘বাংলার জনগণের পাশে থাকার জন্য আমি এসেছি, মুক্তির সংগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য আমি এসেছি; আমি আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার জন্য আসিনি। আমি আপনাদের বোন হিসেবে, কন্যা হিসেবে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আপনাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’

পথে পাথর ছিল, কাঁদা ছিল; কিন্তু কখনই জনগণের পাশ থেকে সরে দাঁড়ানননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকবেন। জয়তু শেখ হাসিনা। জন্মতিথিতে নিরন্তর শুভকামনা।

সুভাষ সিংহ রায় ।। রাজনৈতিক বিশ্লেষক