ছবি : সংগৃহীত

‘সব খেলার সেরা বাঙালির, তুমি ফুটবল’ গানের এই লাইনটা খুব জনপ্রিয়। নচিকেতা ঘোষের সুরে মান্না দে’র গাওয়া গানটা অনেকেই এখনো গুনগুন করে গান। এই গান কিন্তু এমনিতেই লেখা হয়নি।

বাঙালির সেরা খেলা ফুটবল। ফুটবলের প্রতি আমাদের প্রেম, আবেগ সবচেয়ে বেশি। ফুটবলের প্রতি আমার ভালোবাসা অনেক। অসম্ভব ব্যস্ততার ভিড়েও তাই আমি ফুটবল নিয়ে ভাবি। ফুটবল নিয়ে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ যেভাবে ভাবে, ফুটবল সংগঠন কি সেই রকম করে ভাবে?

তারা প্রকৃতপক্ষে ফুটবলকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করেছে এবং করছে। তাতে নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও বাংলাদেশের ফুটবলের সেই অর্থে উন্নয়ন হয়নি।

আরও পড়ুন : সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ : পুরুষতন্ত্রকেও হারাতে হয়েছে নারী ফুটবলারদের 

২০০৮ সালে কাজী সালাউদ্দিন প্রথমবার বাফুফের সভাপতি নির্বাচিত হন। তখন তিনি গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘আগে ঢাকার ফুটবলটা ঠিক করি। তারপর ঢাকার বাইরে হাত দেব।’ [প্রথম আলো, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০] সেই ফুটবল কি ঠিক হয়েছে? হয়নি। কেন হয়নি? সেই প্রশ্ন কি আমরা তাকে করেছি? করিনি। 

কাজী সালাউদ্দিন আজীবন বাফুফের সভাপতি থাকুক তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু উনি সভাপতি হওয়ার পর থেকে যেভাবে বাফুফে বা গোটা ফুটবলের উন্নয়ন ঘটার কথা তার কিছুই হয়নি। বরং ফুটবল ২০০ বছর পিছিয়ে গিয়েছে।

২০০৮ সালে কাজী সালাউদ্দিন প্রথমবার বাফুফের সভাপতি নির্বাচিত হন। তখন তিনি গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘আগে ঢাকার ফুটবলটা ঠিক করি। তারপর ঢাকার বাইরে হাত দেব।’ সেই ফুটবল কি ঠিক হয়েছে?

ফুটবলের এত অধঃপতন হওয়ার পরও তিনি কিন্তু বাফুফের সভাপতির পদ থেকে বিদায় নিচ্ছেন না। পদ আঁকড়ে পড়ে আছেন। উনার মতো একজন তারকা ফুটবলারের এইভাবে কেন পদ আঁকড়ে পড়ে থাকতে হবে। সরকারও কেন জানি উনাকে সরাতে ভয় পায়।

আমার কথা হলো, কাজী সালাউদ্দিন কেন, যে কেউই বাফুফের সভাপতি হোক বা থাকুক কিন্তু ফুটবলের উন্নতি হোক। ক্লাব ফুটবলের চর্চা বাড়ুক। প্রান্তিক পর্যায়ের খেলোয়াড়রা উঠে আসুক। যেভাবে আমাদের প্রান্তিকের মেয়েরা কষ্ট করে, ফাইট দিয়ে আমাদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এনে দিয়েছে এইভাবে সবাই পারে না। সবার সেই ধৈর্য বা শক্তি থাকে না।

আরও পড়ুন : নারীদের জয়, ফুটবলের কি?

ফুটবল কিন্তু যুদ্ধ করার বিষয় নয়, ফুটবল হচ্ছে কৌশলের খেলা। কিন্তু এইখানে দেখছি খালি যুদ্ধ। টিকে থাকার যুদ্ধ। বাফুফের পদ যারা আঁকড়ে পড়ে আছেন তারাই এই যুদ্ধের অবতারণা করেছেন।

উন্নত বিশ্ব লক্ষ্য করে দেখা যায়, তারা তাদের ক্লাব ফুটবল টিকিয়ে রাখার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করছে, তাদের প্রত্যেক খেলোয়াড় মানসিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল রাখার জন্য ক্লাব প্রধানের চেষ্টার কোনো ত্রুটি থাকে না আর আমাদের দেশে ঠিক উল্টো।

দক্ষিণ এশিয়ার সাফ চ্যাম্পিয়ন জয়ী হয়েছে আমাদের মেয়েরা। এরপর আমরা জানলাম গোলরক্ষক রুপনা চাকমার বাড়ি ভাঙা। তাহলে বাফুফে এতদিন কী করেছে? উন্নত বিশ্বের ক্লাব ফুটবল খেলে এমন কোনো খেলোয়াড়ের ভাঙা বাড়ি আপনি দেখাতে পারবেন না।

আমাদের এইখানে সব সম্ভব। তার মানে হচ্ছে, বাফুফের নেতারা আসলে ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করছে না। নিজেদের উন্নয়নে বাফুফেকে কাজে লাগাচ্ছে। 

আজকে যারা বাফুফের নেতা তারা তো একসময় খেলোয়াড় ছিলেন, তারকা ছিলেন। তারা তো জানেন কীভাবে ফুটবল চালাতে হয়। তাহলে কেন তারা সেভাবে বাফুফে চালাচ্ছেন না? যে কাজের জন্য বাফুফের নেতারা এখন পদে বসেছেন সেই কাজটা করলেই কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবল আগাতে বাধ্য।

বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এদের সিন্ডিকেট অনেক শক্ত। এরা এমনভাবে ভোটার বানিয়েছে যে, সেখানে আর কেউই জয়ী হতে পারবে না। একমাত্র একজন ব্যক্তি পারেন এই সিন্ডিকেট ভাঙতে, তিনি হলে প্রধানমন্ত্রী। তিনি ছাড়া এই সিন্ডিকেট কেউই ভাঙার শক্তি রাখেন না।

আজকে যারা বাফুফের নেতা তারা তো একসময় খেলোয়াড় ছিলেন, তারকা ছিলেন। তারা তো জানেন কীভাবে ফুটবল চালাতে হয়। তাহলে কেন তারা সেভাবে বাফুফে চালাচ্ছেন না? যে কাজের জন্য বাফুফের নেতারা এখন পদে বসেছেন সেই কাজটা করলেই কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবল আগাতে বাধ্য।

আরও পড়ুন : নারী ক্রিকেটার : ৫০০ টাকার ম্যাচ ফি থেকে আজ বিশ্বকাপে! 

অনেকেই মনে করছেন, আমার বুঝি বাফুফের নেতা হওয়ার ইচ্ছে আছে। একদমই না। আমি চাই, যোগ্য লোক বাফুফের নেতৃত্ব দিক। অযোগ্য লোক চলে যাক।

যদি সিন্ডিকেট ভাঙা যায়, ক্লাবভিত্তিক ফুটবলের পুনর্জাগরণ ঘটানো যায়, যোগ্য লোক ফুটবলের নেতৃত্ব দেয় তাহলে ফুটবল আগাবে, না হয় ফুটবল আরও পিছিয়ে যাবে।

ফুটবল হচ্ছে আমাদের প্রথম প্রেম। সেই প্রেম আমরা টিকিয়ে রাখতে চাই। ফুটবলকে বাঁচাতে চাই।

ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ।। আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট