ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশি ফুটবল সমর্থকদের খবর এখন বিশ্বমাধ্যমে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে আমাদের উল্লাস, উচ্ছ্বাস দেখার মতো। বাংলাদেশি সমর্থকদের জন্য ভার্চুয়াল উপহারের আয়োজন করেছে আর্জেন্টিনার ঘরোয়া ফুটবল লিগ। মেসির হাতে বাংলাদেশের পতাকা হাতের এই ছবি বাংলাদেশি সমর্থকদের মন কেড়েছে। সামাজিক মাধ্যমেও তা ভাইরাল হয়েছে।

অন্যদিকে ৫ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে বাংলাদেশের ব্রাজিল ফুটবলকেন্দ্রিক উন্মাদনা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ব্রাজিলের গণমাধ্যম ইউওএল। সেখানে তারা দেখিয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সমর্থকদের ব্রাজিল দলকে নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা। বিশ্বকাপের আগে এবং আসর চলাকালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হওয়া ব্রাজিল সমর্থকদের মিছিল-মিটিংয়ের বিষয়টিও তুলে এনেছে তারা।

শুধু বিশ্ব গণমাধ্যমে সমর্থকদের খবর প্রচারই করাই নয়, ফুটবল খেলা নিয়ে বিরোধের জেরে কিশোরকে কুপিয়ে জখমের ঘটনাও ঘটেছে। উল্লাস বা উচ্ছ্বাসে বাংলাদেশ থাকলেও বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কোথায়? বাংলাদেশ কেন ফুটবল বিশ্বকাপে নেই?

আরও পড়ুন : ফুটবল তারকা : যাদের শৈশব কেটেছে দারিদ্র্যে 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আক্ষেপ করেন, বিশ্বকাপ (ফুটবল) হচ্ছে, কিন্তু আমাদের কোনো অবস্থানই নেই। এটা তার জন্য অনেক কষ্টদায়ক উল্লেখ করে তিনি জানান, টেলিভিশনে বিশ্বকাপ খেলা তিনি দেখেন আর ভাবেন-কবে আমাদের ছেলেমেয়েরা এ বিশ্ব আসরে খেলবে। এই আশাবাদ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা একদিন এ বিশ্ব আসরে খেলবে।

ফুটবলে আমাদের সোনালি অতীত ছিল। সেইসময় কায়সার হামিদ, সত্যজিৎ দাশ রুপুরা ছিল আমাদের ফুটবল তারকা....

২৩ নভেম্বর ২০২২ তারিখে বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসরের সমাপনী ও পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

অথচ ফুটবলে আমাদের সোনালি অতীত ছিল। সেইসময় কায়সার হামিদ, সত্যজিৎ দাশ রুপুরা ছিল আমাদের ফুটবল তারকা। তারা হেসে খেলে ভুটান দলকে ৭/৮টা গোল দিত। সেই ফুটবল এখন কোথায়? সেই ফুটবল কেন অতীত?

আরও পড়ুন : অর্থনীতির বিশ্বকাপ! 

বাংলাদেশের ফুটবল বলতে এখন কিছুই নেই। ২০২২ সালে নেপালের মাটিতে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা হয়েছে বাংলাদেশ।

ছেলেদের ফুটবলের অতীত যেন মেয়েরা ফিরিয়ে আনছে। কিন্তু তারা কি পারছে? তাদের সেই সুযোগ-সুবিধা কি দেওয়া হয়েছে? যারা বর্তমানে বাফুফের নেতা তারা তো একসময় খেলোয়াড় ছিলেন, তারকা ছিলেন। তারা তো জানেন কীভাবে ফুটবল চালাতে হয়। তাহলে কেন তারা সঠিক পথে বাফুফে চালাচ্ছেন না? তারা কেন ব্যর্থ হচ্ছেন?

ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৭। ২০৬টি দেশের মধ্যে এই র‌্যাঙ্কিং ১৯৭-এ নেমে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছিল। যা আসলে লজ্জাজনক। এই লজ্জা আমাদের লাগলে বাফুফের কি লাগছে? কাজী সালাউদ্দিন-আব্দুস সালাম মুর্শেদী যারা পদ আঁকড়ে পড়ে আছেন তাদের কি লাগছে?

বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশ নেওয়ার আগে বাফুফের যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন তা কি হয়েছে? পুরোনো নেতৃত্বে বাংলাদেশের ফুটবল যে পেছনে হাঁটছে তার কি পরিবর্তন হয়েছে? তাহলে কীভাবে আমরা আশা করি আমরা বিশ্বকাপে খেলবো?

এদের আমরা যোগ্য ভেবেছিলাম। তারা কি তাদের যোগ্যতা আদৌ প্রমাণ করতে পেরেছে? যদি নাই পারে তবে কেন পদ আঁকড়ে পড়ে থাকা? কেন তারা নতুনদের সুযোগ দিচ্ছে না? কেন তারা বাফুফের উন্নতি চাইছেন না? এই প্রশ্নের কোনো উত্তর মেলে না।

আরও পড়ুন : ফুটবল : বাঙালির প্রেম, বাঙালির জ্বর! 

বাফুফের নেতারা যে ব্যর্থ তার প্রমাণ অতীতেও মিলেছে। ২০১৬। এএফসি অনূর্ধ্ব ১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। সেই সময় ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামের মেয়েদের জন্য আলাদা কোনো পরিবহন ব্যবস্থা করতে পারেনি। বাসে করে বাড়ি পাঠিয়েছিল এই বাফুফে।

সেই সময়ও কিন্তু কাজী সালাউদ্দিন-আব্দুস সালাম মুর্শেদী-মাহফুজা আক্তার কিরণই কিন্তু নেতৃত্বে ছিল। তখন কি তাদের এই বিষয়ে কোনো জবাবদিহিতায় আনা হয়েছে? হয়নি। তাহলে কীভাবে ফুটবলের উন্নয়ন সম্ভব? কীভাবে আমরা বিশ্বকাপে খেলবো?

বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশ নেওয়ার আগে বাফুফের যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন তা কি হয়েছে? পুরোনো নেতৃত্বে বাংলাদেশের ফুটবল যে পেছনে হাঁটছে তার কি পরিবর্তন হয়েছে? তাহলে কীভাবে আমরা আশা করি আমরা বিশ্বকাপে খেলবো?

আরও পড়ুন : ফুটবল যে কারণে আগাচ্ছে না 

দেশের প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে বোঝা যায় তিনি আসলে খেলা নিয়ে খুব আন্তরিক। তিনি বলেন, প্রাইমারি থেকে যে খেলাধুলার শুরু হয়েছে, সেখান থেকে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়-আমি মনে করি, এই প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে একদিন আমরা বিশ্বে খেলাধুলায় উন্নত হতে পারব।

প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার পরও ফুটবলের কোনো উন্নতি হচ্ছে না। এর চেয়ে দুঃখের আর কী হতে পারে?

ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ।।  আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট