ছবি : সংগৃহীত

চ্যাম্পিয়নকে খুঁজছে ফুটবল বিশ্ব। তবে এক চ্যাম্পিয়নকে তারা পেয়ে গেছে! এবং ফাইনালের আগেই লিখে দেওয়া যাচ্ছে তারা চ্যাম্পিয়ন।

দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগার কোনো কারণ নেই। তারাই চ্যাম্পিয়ন। আর সেই দেশটার নাম—কাতার। নামটা দেখে ভ্রু কোঁচকানোর কোনো সুযোগ নেই। মাঠের কাপ যুদ্ধে নয়। বিশ্বকাপ আয়োজনে পারস্য উপসাগরের এই ছোট্ট দেশ সত্যি চ্যাম্পিয়ন।

বিশ্বকাপ ইতিহাসের সফলতম আয়োজন করলো তারা। সেই সনদ দিয়েছেন ফিফা সভাপতি নিজেই। সুতরাং বলাই যায় 'কাতার দ্য চ্যাম্পিয়ন'। অথচ কাতারকে যখন আয়োজক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়, তখন কত কথা। কত সমালোচনা।

আরও পড়ুন >>> ফুটবল তারকারা যেভাবে উঠে এসেছেন 

পশ্চিমা মিডিয়া কত নিউজ প্রিন্ট খরচ করেছে আর কত অন এয়ার টাইম নষ্ট করেছে কাতারকে কেন বিশ্বকাপের আয়োজক করা হলো তা নিয়ে! কাতার! বিশ্বকাপের আয়োজক! তা কীভাবে সম্ভব?

সেই অসম্ভবকে এমনভাবে সম্ভব করলো কাতার, যা দেখে ফুটবল বিশ্ব-ই বিস্মিত! এভাবেও বিশ্বকাপ আয়োজন করা যায়! মরুর বুকে সবুজ গালিচা।

যেখানে লড়াই মেসি-রোনালদো-নেইমার-এমবাপ্পে-মদরিচদের। আর স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে সমুদ্রের বুকে ভাসমান প্রমোদতরিতে বসে তারিয়ে তারিয়ে ফুটবল উপভোগের আয়োজন।

কাপের সবচেয়ে জোরালো দাবিদারও আকাশি সাদা জার্সির আর্জেন্টিনা। ম্যারাডোনার পর মেসিকে ঘিরে ফুটবল আবেগের জলোচ্ছ্বাস আর্জেন্টিনা ছাড়িয়ে, যা আছড়ে পড়ছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে।

ফুটবলীয় ঐশ্বর্য না থাকতে পারে কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর কাতার বিশ্ব দেখিয়ে দিলো, আধুনিকতার ছোঁয়ায় কত বর্ণিল আয়োজন সম্ভব। আয়োজক হিসেবে চ্যাম্পিয়নের খেতাব পাবে না কেন কাতার।

মরুর দেশে বিশ্বকাপ আয়োজন করে কাতার যখন তাক লাগিয়ে দিলো, তখন কাতারেই নয়া ইতিহাস গড়লো আরেক আরব দেশ মরক্কো। আফ্রিকা এবং একই সঙ্গে আরব বিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করা মরক্কো পৌঁছালো সেমিফাইনালে।

আরও পড়ুন >>> ফুটবলে বাংলাদেশ কোথায়? 

আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেললো তারা। ফ্রান্সের কাছে হেরে স্বপ্নের দৌড় শেষ করেছে মরক্কো। কিন্তু তার আগে যা খেললো তা যেন আরব্য রজনীর গল্প!

স্পেন, ইংল্যান্ড, জার্মানির মতো সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সেমিফাইনালের আগে বিদায় নিয়েছে কাতার থেকে। ব্রাজিল, উরুগুয়ের মতো আরও সাবেক চ্যাম্পিয়ন শেষ চারের লড়াই শুরুর আগেই দেশের বিমান ধরেছে। কিন্তু আফ্রিকান দেশ মরক্কো সেমিফাইনাল খেললো!

নেইমার, রোনালদোর চোখের জলে বিদায় দেখলো বিশ্ব। আবার হেরে খানিকটা আনন্দাশ্রু ফেলে বিশ্বকাপ যুদ্ধ শেষ করেছে মরক্কো হাকিমিরা।

পৃথিবী যাদের আগে দেখেছে পরিযায়ী ফুটবলার হিসেবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের লিগে খেলতে। মরক্কোর ভূমিপুত্র হিসেবে নিজের দেশের জার্সিতে কী অসাধারণ ফুটবল খেললো তারা। কাতার বিশ্বকাপের বড় বিস্ময় মরক্কো।

খুঁজলে বিস্ময় জড়ানো এবারের বিশ্বকাপের পরতে পরতে। সৌদি আরবের কাছে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার! নক আউট পর্বে পৌঁছাতে পারবে কি না মেসির দল তা নিয়েও ছিল সংশয়। কিন্তু মেসি জাদুতে সেই সংশয় উড়িয়ে দিয়ে তারা ফাইনালে।

আরও পড়ুন >>> ফুটবল তারকা : যাদের শৈশব কেটেছে দারিদ্র্যে 

কাপের সবচেয়ে জোরালো দাবিদারও আকাশি সাদা জার্সির আর্জেন্টিনা। ম্যারাডোনার পর মেসিকে ঘিরে ফুটবল আবেগের জলোচ্ছ্বাস আর্জেন্টিনা ছাড়িয়ে, যা আছড়ে পড়ছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে।

মেসি জাদু বন্ধের সব ছকই কষছে ফরাসিরা। তারা কাপ ধরে রাখার স্বপ্ন দেখছে এমবাপ্পের দৌড় আর গ্রিজমানের সৃষ্টিশীলতার মাঝে...

সেই জলোচ্ছ্বাসে ভাসতে আটলান্টিক পেরিয়ে পঁয়তাল্লিশ হাজারের বেশি আর্জেন্টাইন এখন কাতারে। আর অন্যান্য দেশ থেকে যাওয়া ফুটবল পর্যটকরা তো আছেনই। তাদের চাওয়া মেসি জাদু। বিদায় বেলায় তিনি কাপ হাতে রাঙিয়ে দিয়ে যাক ফুটবল বিশ্ব। কারণ এটাই মেসির শেষ বিশ্বকাপ।

সমকালের সীমানা পেরিয়ে মহাকালের হতে বিশ্বকাপ মেসির দরকার। না হলে আগামীর ফুটবল প্রেস প্রশ্ন তুলবে যিনি বিশ্বকাপ জিততে পারেননি তিনি সর্বকালের সেরাদের তালিকায় থাকেন কীভাবে!

আরও পড়ুন >>> অর্থনীতির বিশ্বকাপ! 

তখন কে বলবেন ফুটবল পায়ে কী স্বর্গীয় আনন্দ দিয়েছেন এই আর্জেন্টাইন। আর ফুটবল কখনো কখনো অনেক বেশি নির্মম। নিষ্ঠুর। তাহলে ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপেই নিষ্পত্তি হয়ে যেত মেসি সর্বকালের সেরাদের সরণিতে থাকবেন কি না! দলকে ফাইনালে তুলেও কাপ জেতা হলো না তার সেই বার।

হিগুয়েইন নামের এক ফুটবলারের দায় বয়ে বেড়াতে হচ্ছে এখনো মেসিকে। এবার হয়তো উত্তর মেসি নিজেই দিয়ে দিতে চাইবেন। তার শারীরিক ভাষা আর বাঁ পায়ের ঝলক দেখে তেমনটা মনে হচ্ছে। মেসি পারলে তিন যুগের অপেক্ষার অবসান হবে আর্জেন্টিনার।

১৯৮৬ সালের পর তারা আর বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। কিন্তু মেসি জাদু বন্ধের সব ছকই কষছে ফরাসিরা। তারা কাপ ধরে রাখার স্বপ্ন দেখছে এমবাপ্পের দৌড় আর গ্রিজমানের সৃষ্টিশীলতার মাঝে।

আরও পড়ুন >>> ফুটবল : বাঙালির প্রেম, বাঙালির জ্বর! 

বল ধরে চিতার মতো দৌড় এমবাপ্পের। তারপর গোলার মতো শট। এমবাপ্পে মানে যেকোনো দলের জন্য ত্রাস। আর গ্রিজমানকে ফরাসি কোচ দিদিয়ে দেশম রীতিমতো মাঝমাঠের শিল্পী বানিয়ে ফেলেছেন।

আর্জেন্টিনার স্বপ্নরথে উঠবে বিশ্বকাপ? নাকি ফরাসিদের কাছেই থাকবে? উত্তরের জন্য অপেক্ষা তো কয়েক ঘণ্টার। তার আগে ফুটবল প্রেমীদের আলোচনায় একটা কথাই বারবার শোনা যাচ্ছে। এবার মেসি জাদু থামাতে মাঠে ফরাসিদের ফুটবল বিপ্লব ঘটাতে হবে। ফুটবল ঈশ্বর জাদু না বিপ্লব কোনটাকে প্রাধান্য দিয়ে ফাইনালের চিত্রনাট্য লিখছেন!

অঘোর মন্ডল ।। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক