বাংলাদেশে প্রায় এক যুগ ধরে অনলাইনে ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। কিন্তু বছর দুয়েক ধরে ই-কমার্স খাতে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে ২০২১ সালের কাছাকাছি সময়ে ই-ভ্যালি এবং ই-অরেঞ্জসহ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সাথে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে। (বিবিসি বাংলা, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২)

ই-কমার্সের গ্রাহকেরা ঘুরছেন এখানে-সেখানে, অর্থ ফেরত পাচ্ছেন না। বিভিন্ন গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানে আটকে ছিল গ্রাহকের ৫২৫ কোটি টাকা। তার মধ্য ২১৫ কোটি টাকা এখনো আটকা। ২০২১ সালের ৩০ জুনের পর প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত ২৭ ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের তালিকাও করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। (প্রথম আলো, ২৮ ডিসেম্বর ২০২২)

সব মিলিয়ে ২০২২ সালে বেশকিছু অগ্রগতি হয়েছে বলা চলে। বিশেষ করে ই-কমার্সের উন্নয়নে প্রতিটি বিষয়ে সরকার ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে এবং বেশকিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো ডিবিআইডি (Digital Business Identity Registration-DBID) বাস্তবায়ন এবং নারী উদ্যোক্তাদের অনুদান প্রদান করা।

আরও পড়ুন >>> ই-কমার্স যখন প্রতারকদের খপ্পরে 

এছাড়া যেসব গ্রাহকের অর্থ পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে ছিল তা ছাড় দেওয়ার চেষ্টাও চলছে। যাদের টাকা আটকে নেই। কিন্তু গ্রাহক টাকা পাওনা রয়েছে তাদের টাকা ছাড় দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

এছাড়া প্রতারণামূলক ছদ্মবেশী ই-কমার্স কার্যক্রম প্রায় বন্ধ করতে সরকার সমর্থ হয়েছে। এর বাইরে যে বিষয়গুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে তা হলো কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করা এবং ক্রস বর্ডার ই-কমার্স পলিসি প্রণয়ন।

বর্তমানে ট্রেড লাইসেন্স অ্যাক্ট ২০১৬-এর অধীনে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এখানে ই-কমার্স বলে কিছু নেই। আমরা শহরে ১০০০ টাকা এবং গ্রামে ৫০০ টাকার মধ্যে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার দাবি জানিয়েছি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে।

আশা করি, এই দুটো কাজ ২০২৩ সালের শুরুতে হয়ে যাবে। আরেকটি বিষয় দীর্ঘদিনের চাওয়া যেটা এখনো অনুমোদন পায়নি সেটা হলো ট্রেড লাইসেন্স ক্যাটাগরিতে ই-কমার্স সংযুক্ত করা।

বর্তমানে ট্রেড লাইসেন্স অ্যাক্ট ২০১৬-এর অধীনে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এখানে ই-কমার্স বলে কিছু নেই। আমরা শহরে ১০০০ টাকা এবং গ্রামে ৫০০ টাকার মধ্যে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার দাবি জানিয়েছি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে।

আরও পড়ুন >>> ই-কমার্স : নিরাপদ বিনিয়োগ ও অর্থ ফেরত প্রসঙ্গ

এছাড়া আমরা বলেছি ক্ষুদ্র ও নারী ই-কমার্স উদ্যোক্তারা যেন বাসার বা বাড়ির ঠিকানায় ট্রেড লাইসেন্স নিতে পারে সেই ব্যাপারে আইনগত শিথিলতা রাখার জন্য। আশা করি সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

ইতিমধ্যে এই খাতের সমস্যা ও সমাধানের বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। আমরা আশা করি ২০২৩ সালে সরকার বেশকিছু সিদ্ধান্ত এবং সুবিধা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই খাতের কিছু প্রতিবন্ধকতা দূর করবে।

এরমধ্যে অন্যতম হলো, বর্তমানে প্রচলিত দোকানের সাথে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ট্যাক্সের যে বৈষম্য সেটা দূর করা দরকার। তা না হলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসা করা কঠিন হয়ে যাবে।

আমরা সবাই জানি ব্যাংকিং সিস্টেমে বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় ঋণ দেওয়া হয় ডিজিটাল ব্যবসার জন্য এই প্রক্রিয়া সহজ নয়। তাই এই প্রক্রিয়ার সংশোধনী প্রয়োজন।

আরেকটি বিষয় হলো ঋণ ও বিনিয়োগ। আমরা সবাই জানি ব্যাংকিং সিস্টেমে বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় ঋণ দেওয়া হয় ডিজিটাল ব্যবসার জন্য এই প্রক্রিয়া সহজ নয়। তাই এই প্রক্রিয়ার সংশোধনী প্রয়োজন।

আমাদের নারী উদ্যোক্তারা অন্যদের মতো সরাসরি ব্যবসা শিখতে পারে না। তারা সংসার, পরিবার, সন্তান এবং অন্যান্য বিষয় সামলে নিয়ে তারপর ব্যবসা করে তাই তাদের দক্ষতা উন্নয়নে সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সেগুলো প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার।

আমাদের স্থানীয় পণ্য ই-কমার্সের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে এলসি ও ওয়ার্ক অর্ডার ব্যতীত বিদেশে পণ্য পাঠানোর সুযোগ দিতে হবে এবং শিপিং খরচ কমাতে হবে।

আরও পড়ুন >>> ই-কমার্স : বাংলাদেশে যে ব্যবসায়িক মডেল প্রচলিত 

প্রয়োজনে বন্দরগুলোয় সব উদ্যোক্তাদের ব্যবহারের জন্য ফুলফিলমেন্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই বিষয়ে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে সাপ্লাই চেইন তৈরি করতে হবে।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা যখন ২টা ৪টা পণ্য পাঠায় তখন তা ব্যয়বহুল ও জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে যায়। কিন্তু যদি সবাই মিলে একসাথে পণ্য পাঠাতে পারে তাহলে খরচ কমবে এবং একটি সাপ্লাই চেইন দাঁড়িয়ে যাবে। যাতে দেশের পণ্য বিদেশে যাবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসবে।

এইভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী আগালে দেশের ই-কর্মাস আরও সমৃদ্ধ হবে এবং অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখতে পারবে।

নাসিমা আক্তার নিশা ।। প্রেসিডেন্ট, ওমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই)