ছবি : সংগৃহীত

ধানের ব্লাস্ট একটি ছত্রাকজনিত মারাত্মক ক্ষতিকারক রোগ। বোরো ও আমন মৌসুমে সাধারণত ব্লাস্ট রোগ হয়ে থাকে। অনুকূল আবহাওয়ায় এই রোগের আক্রমণে ফলন শতভাগ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। চারা থেকে শুরু করে ধান পাকা পর্যন্ত যেকোনো সময় রোগটি দেখা দিতে পারে।

এটি ধানের পাতা, গিঁট এবং নেক বা শীষে আক্রমণ করে থাকে। সেই অনুযায়ী রোগটি পাতা ব্লাস্ট, গিঁট ব্লাস্ট ও নেক ব্লাস্ট নামে পরিচিত।

আমন মৌসুমে সব সুগন্ধি জাতে এবং বোরো মৌসুমের ধানের জাত যেমন ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-৫০, ব্রি ধান-৬৩, ব্রি ধান-৮১, ব্রি ধান-৮৪, ব্রি ধান-৮৮সহ সরু আগাম সুগন্ধি জাতে শীষ ব্লাস্ট রোগ বেশি হয়ে থাকে।

ব্লাস্টের কারণ

বীজ, বাতাস, কীটপতঙ্গ ও আবহাওয়ার মাধ্যমে ব্লাস্ট রোগ ছড়ায়। ঘন ঘন এবং দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টিপাত এবং দিনের বেলা ঠান্ডা পড়লে এই রোগের আক্রমণ বাড়ে। এছাড়া দিন ও রাতের তাপমাত্রার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য যেমন রাতে ঠান্ডা, দিনে গরম ও সকালে পাতায় পাতলা শিশির জমলে ব্লাস্ট রোগ দ্রুত ছড়ায়।

আরও পড়ুন >>> কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার 

মূলত রাত ও দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য খুব বেশি হলেই পাতায় শিশির জমে। শিশিরে ভেজা দীর্ঘ সকাল, অতি আর্দ্রতা (৮৫ শতাংশ বা তার অধিক), মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, ঝড়ো আবহমান এবং গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি এই রোগের আক্রমণের জন্য খুবই অনুকূল।

তাছাড়া দিনের বেলায় গরম (২৫-২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) ও রাতে ঠান্ডা (২০-২২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড), আবহাওয়া থাকলেও ব্লাস্টের প্রাদুর্ভাব বাড়ে।

মাটিতে রস কম থাকলেও ব্লাস্ট হতে পারে। তাই হালকা পলি মাটি বা বেলেমাটির পানি ধারণ ক্ষমতা কম থাকলে জমির ধানে ব্লাস্ট রোগ বেশি হতে দেখা যায়।

দিন ও রাতের তাপমাত্রার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য যেমন রাতে ঠান্ডা, দিনে গরম ও সকালে পাতায় পাতলা শিশির জমলে ব্লাস্ট রোগ দ্রুত ছড়ায়।

জমিতে মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া সার এবং প্রয়োজনের তুলনায় কম পটাশ সার দিলেও এই রোগের আক্রমণ বেশি হয়। দীর্ঘদিন জমি শুকনা অবস্থায় থাকলেও এই রোগের আক্রমণ হতে পারে।

লিফ বা পাতা ব্লাস্ট

পাতায় ছোট ছোট ডিম্বাকৃতির সাদা বা বাদামি দাগ দেখা দেয়। পর্যায়ক্রমে সমস্ত পাতা ও ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রমণ বেশি হলে ক্ষেতের বিভিন্ন স্থানে রোদে পুড়ে যাওয়ার মতো দেখা যায়।

আরও পড়ুন >>> বঙ্গবন্ধু : দরিদ্রজনের সখা

আক্রান্ত ক্ষেতে অনেক সময় পাতা ও খোলের সংযোগস্থলে কালো দাগ দেখা দেয় যা পরবর্তীতে পচে গিয়ে পাতা ভেঙে পড়ে ফলন বিনষ্ট হয়। দাগগুলো একটু লম্বাটে হয় এবং দেখতে অনেকটা চোখের মতো। আস্তে আস্তে পাতার দাগগুলো বড় হয়ে, একাধিক দাগ মিশে গিয়ে শেষ পর্যন্ত পুরো পাতা শুকিয়ে মারা যেতে পারে।

মাটিতে রস কম থাকলেও ব্লাস্ট হতে পারে। তাই হালকা পলি মাটি বা বেলেমাটির পানি ধারণ ক্ষমতা কম থাকলে জমির ধানে ব্লাস্ট রোগ বেশি হতে দেখা যায়।

নোট বা গিঁট ব্লাস্ট

ধানের থোড় বা গর্ভবতী অবস্থায় এই রোগ হলে গিঁটে কালো দাগের সৃষ্টি হয়। ধান গাছের গিঁট দুর্বল হয়। ধান গাছ গিঁট থেকে খসে পরে। ধীরে ধীরে এই দাগ বেড়ে গিঁট পচে যায়, ফলে ধান গাছ গিঁট বরাবর ভেঙে পড়ে।

নেক বা শীষ ব্লাস্ট

শীষ অবস্থায় এই রোগ হলে শীষের গোঁড়া কালো হয়ে যায়। আক্রমণ বেশি হলে শীষের গোঁড়া ভেঙে যায়। শীষ অথবা শীষের শাখা প্রশাখা ভেঙে পড়ে। ধান চিটা হয়ে যায়।

আরও পড়ুন >>> আমার গ্রাম, আমার শহর

সমন্বিত ব্যবস্থাপনা

প্রথমত এই রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করা। আক্রান্ত ক্ষেতের খড়কুটো আগুনে পুড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া। সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগের মাধ্যমে ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

রোগের আক্রমণ হলে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। বিঘা প্রতি ৫-৭ কেজি এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে অথবা ৫ গ্রাম/লিটার স্প্রে করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন >>> বৈশ্বিক সংকট : দরকার মুদ্রানীতি ও বাজেটের যথাযথ সমন্বয় 

রোগ মুক্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করা। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় ১ থেকে ২ ইঞ্চি পানি জমিতে রাখা বা ক্ষেতে পানি সংরক্ষণ করতে হবে। ব্লাস্ট প্রতিরোধক জাতের ধান চাষ করা।

রাসায়নিক দমন ব্যবস্থা

ট্রাইসাইক্লাজোল গ্রুপের ০.৭৫ গ্রাম/লিটার অথবা ট্রাইসাইক্লাজোল + প্রোপিকোনাজল (এগবেন ৫০ শতাংশ) ২মিলি/লিটার অথবা থায়োপেনেট মিথাইল ২ গ্রাম/লিটার অথবা টেবুকোনাজল + ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রবিন ০. ৫০ গ্রাম/লিটার অথবা এজোক্সিস্ট্রবিন + ডাইফেনোকোনাজল (আর্নিলিন ৮০ শতাংশ) ১মিলি/লিটার পানিতে মিশে ১০-১৫ দিন পর পর দুইবার স্প্রে করতে হবে।

সমীরণ বিশ্বাস ।। কৃষিবিদ