মূল্যস্ফীতি বলতে পণ্য ও সেবার ক্রমাগত মূল্য বৃদ্ধিকে বোঝায়। স্বল্প মূল্যস্ফীতি ভালো কিন্তু ক্রমাগত বড় ধরনের মূল্যস্ফীতি অর্থনীতিতে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

মূল্যস্ফীতি মূলত দুটি কারণে ঘটে। জোগানের তুলনায় চাহিদার পরিমাণ বেশি হলে এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি হলে মূল্যস্ফীতি ঘটে। এতে অর্থের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সীমিত আয়ের মানুষ। ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে বা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সীমিত আয়ের মানুষ ব্যয় সংকোচন করতে বাধ্য হয়। ফলে তাদের জীবনযাত্রার মানের অবনতি ঘটে।

বাংলাদেশে এক বছরের বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের মে মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ৭.৪২ শতাংশ যা ২০২৩ সালের মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৯.৯৪ শতাংশে।

আরও পড়ুন >>> বৈশ্বিক মন্দা ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি 

২০২২ সালের মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.৩০ শতাংশ যা ২০২৩ সালের মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৯.২৪ শতাংশে। ২০২২ সালে একই সময়ে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৬.০৪ শতাংশ যা কি না ২০২৩ সালের মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৯.৯৬ শতাংশে।

গ্রাম ও শহরের মূল্যস্ফীতির চিত্র আলাদাভাবে দেখলে দেখা যায়, ২০২২ সালের মে মাসে গ্রামে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ৭.৯৪ শতাংশ যা ২০২৩ সালের একই সময়ে ৯.৮৫ শতাংশে উন্নীত হয়।

মূল্যস্ফীতি মূলত দুটি কারণে ঘটে। জোগানের তুলনায় চাহিদার পরিমাণ বেশি হলে এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি হলে মূল্যস্ফীতি ঘটে। এতে অর্থের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।

২০২২ সালের মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৮.৮৪ শতাংশ যা ২০২৩ সালের মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৯.৩৪ শতাংশে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৬.২৬ শতাংশ যা ২০২৩ সালের একই সময়ে বেড়ে দাঁড়ায় ৯.৮৩ শতাংশে।

শহরে ২০২২ সালের মে মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ৬.৪৯ শতাংশ যা এক বছর পর একই সময়ে ৯.৯৭ শতাংশে পরিণত হয়। গ্রামের এলাকার তুলনায় শহরে এই বৃদ্ধির হার অনেক বেশি। একইভাবে যদি আমরা শহরে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির তুলনা করি তাহলে দেখব ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৭.০৮ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৮৫ শতাংশ যা ২০২৩ সালের মে মাসে এসে ৯.১৩ শতাংশ এবং ৯.৮৮ শতাংশে পরিণত হয়।

আরও পড়ুন >>> সন্নিকটে সংকট, শঙ্কিত কি অর্থনীতি! 

সুতরাং খাদ্য এবং খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি যেমন শহরে বেড়েছে ঠিক তেমনি গ্রামেও বেড়েছে। ফলে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়কে ক্রমাগত বাড়িয়ে তুলেছে।

এই অবস্থায় সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করার জন্য যত দ্রুত সম্ভব মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত ও দীর্ঘমেয়াদি মূল্যস্ফীতি কখনো সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনে না।

সমাজের নীতিনির্ধারকদের মাত্রাতিরিক্ত মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, তেলের মূল্য বৃদ্ধি, ডলার সংকট, ডলারের সাপেক্ষে টাকার অবমূল্যায়ন মূলত মূল্যস্ফীতি আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর থেকে শুল্ক হ্রাস একটি কার্যকারী হাতিয়ার হতে পারে। সরকার খোলা বাজারে পণ্যের সরবরাহের পরিমাণ বাড়িয়েও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারে...

বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে সরকারের। এজন্য সরকারের বাজার মনিটরিং বাড়াতে হবে। বাজার ব্যবস্থায় কোনো অনিয়ম থাকলে সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।

কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যেন নিজের লাভের আশায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে সরকারকে কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে।

অর্থনীতিতে ডলার সংকট বিদ্যমান থাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানি যেন ব্যাহত না হয় সেদিকে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রয়োজনে বিলাসবহুল দ্রব্যের আমদানি কমিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানির ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।

আরও পড়ুন >>> আইএমএফের ঋণ : ইতিহাস যা বলে 

এক্ষেত্রে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর থেকে শুল্ক হ্রাস একটি কার্যকারী হাতিয়ার হতে পারে। সরকার খোলা বাজারে পণ্যের সরবরাহের পরিমাণ বাড়িয়েও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারে।

তাই বাজার নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করা ও রাজস্ব নীতির মাধ্যমে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করে সরকার, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়কে কমিয়ে নিয়ে আসবে এটাই সাধারণ মানুষের একান্ত কাম্য।

 সোমা ভট্টাচার্য ।। সহযোগী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়