ছবি : সংগৃহীত

বাবা মা এবং মিতা আপা এই তিনজনই তো মানুষ আমার জীবনে, যারা আমাকে সৃষ্টি করেছেন। টানা ১৭-১৮ বছর আপনার ছায়ায় জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় পার করেছি মিতা আপা। আপনার মতো বলিষ্ঠ, উদার আর মমতাময়ী মানুষ পাইনি একজনও, শিক্ষকতো অনেক দূরের কথা!

এইতো সেদিন গ্রিনরোডের বাসায়, ক্লাসে অনেকের ভিড়ে আপনি আমাকে খুঁজে না বের করলে কোথায় থাকতাম আমি! কে চিনতো আমাকে! তালে কাঁচা ছিলাম, মুখ খুলে গাইতে বলতেন শুধু! আরও কত শত কারেকশন! ক্লাসে আপনার সেই দাপুটে সময়টা বড্ড মিস করি মিতাপা!

ক্লাসের বাইরেও আপনি অন্য এক শিক্ষাগুরু-যার কাছে নিজের প্রেমের কথা বলতেও দ্বিধা ছিল না। কতদিন দুপুরে আপনার বাসায় খেয়ে গানের ক্লাস করতে বসতাম। কত সময় মাসের বেতনটা মিস হয়ে যেত! আপনি সবই জানতেন, বুঝতেন, তাই নিজের অপারগতার কথা মুখ ফুটে বলতে হয়নি কখনো।

টানা ১৭-১৮ বছর আপনার ছায়ায় জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় পার করেছি মিতা আপা। আপনার মতো বলিষ্ঠ, উদার আর মমতাময়ী মানুষ পাইনি একজনও, শিক্ষকতো অনেক দূরের কথা!

আপনার শাড়ি পরে কত অনুষ্ঠান করেছি। আলমারি ঘাঁটলে এখনো দু’একটা বের হবে বৈকি!

মনে পড়ছে, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে পড়ি। কোনো এক অনুষ্ঠানে আপনার গ্রুপ সুরতীর্থ’র হয়ে গান করেছিলাম। আরও একজন শ্রদ্ধেয় সংগীত শিল্পী তখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন। আমার সহপাঠী বন্ধু আপনার বোন টিনাও ছিল সেদিন সেই একই অনুষ্ঠানে।

আমি আপনার ক্লাস ছাড়তে পারিনি, ছাড়িনি। কারণ যাকে সত্যি গুরু মেনেছি কাগজের টুকরো নম্বর পত্রের ভয়ে আমি সেই তাকে ছাড়ি কী করে? সেদিন আপনাকে ছাড়িনি বলে অনেককিছু ছাড়তে হয়েছে জীবনে আমাকে! তাতে কি? আমি আমার গুরুর সম্মান রক্ষা করেছিলাম আমার শিষ্যত্ব ধরে রেখে। পরিবর্তে আপনার আশীর্বাদে আজকের যতটুকু আমি...

এইতো সেদিন গ্রিনরোডের বাসায়, ক্লাসে অনেকের ভিড়ে আপনি আমাকে খুঁজে না বের করলে কোথায় থাকতাম আমি! কে চিনতো আমাকে!

এরপরের যাত্রা অনেক লম্বা। জীবনের যেকোনো দুঃখ-সুখে আপনার ফোন পেয়েছি। জীবিকার দৌড়ে আপনার ক্লাসে পাশে বসে গান শেখা হয়নি অনেক দিন। কিন্তু প্রতিদিন আমি আপনাকে স্মরণ করি যখন আপনার শেখানো গান শেখাই ছাত্র-ছাত্রীদের। যখন আপনার আদর্শকে, আপনার দেওয়া শিক্ষাকে পাথেয় করে, আপনাকে অনুসরণ করে চলি নিজ জীবনে।

আপনি অনন্য মিতা আপা! আপনি বেঁচে থাকবেন ততদিন, যতদিন মানুষ রবীন্দ্রসংগীত গাইবে... শুনবে।

প্রণাম গুরু।

অণিমা রায় ।। রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী